"বাংলাদেশের গৌরবগাঁথা আমাদের এই নকশিকাঁথা" বইটির প্রথম ফ্ল্যাপ-এর লেখাঃ নকশিকাঁথা শিল্পের ইতিহাস কমপক্ষে হাজার বছরের পুরনো। গবেষণা করতে গিয়ে গবেষকরা দেখেছেন যে, প্রাচীন বাংলার লোকমুখে বর্ণিত এবং লিখিত লোককাহিনিতে নকশিকাঁথার উল্লেখ রয়েছে। বঙ্গীয় ব-দ্বীপে প্রাচীন জনপদ গড়ে উঠেছিল খ্রিস্টপূর্ব ১২০০ সাল থেকে ৭০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে। এ সময় গাঙ্গেয় ব-দ্বীপ সভ্যতার সূচনা হয়। ব-দ্বীপ এর জনগোষ্টী তাদের অবচেতন মনে পৌরাণিক কাহিনি বা চিহ্নের গভীর প্রভাব ছিল। ১৮ শতকের কাঁথায় আমরা দেখি সেখানে প্রতীক বা লোককাহিনি ধারণ করত। তাদের জীবনে প্রতীক বা চিহ্ন হিসেবে স্থান পেয়েছে জীবনবৃক্ষ, উপাসনার কেন্দ্রস্থল, প্রাণী, মাছ, সরীসৃপ এবং পাখি যা পৌরাণিক ও লোককাহিনি থেকে সংগৃহীত। ময়মনসিংহ গতিকা (ত্রয়োদশ শতাব্দী) থেকে আমরা জানতে পারি যে, কাঁথাশিল্পীরা তাদের ভাবনাগুলো সূচিকর্মের মাধ্যমে ক্যানভাসে ফুটিয়ে তুলতেন। কাঁথা হলো প্রাচীন নারীদের লেখার খাতা যেখানে তাঁরা তাঁদের জীবনের গল্পগুলো তুলে ধরেন এবং দর্শকরা সেই গল্প পড়তে সক্ষম হন। কাঁথাশিল্পী সূঁই সুতার মাধ্যমে কাঁথায় যে ছবিগুলো ফুটিয়ে তোলেন তার জন্য লাইন টানার কাজে তার পেন্সিলের প্রয়োজন হয় না। খালি হাতের দক্ষতাই এর জন্য যথেষ্ট।
রবীন্দ্র গােপের জন্ম ১৯৫১ সালের ৫ নভেম্বর। ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া জেলার অরুয়াইলের জয়নগরে । পিতা : শ্রী উপেন্দ্র গােপ, মাতা : শ্রীমতি যামিনী গােপ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্যে স্নাতক। মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ জীবনের এক গৌরবােজ্জ্বল অধ্যায়। স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী সরকারের একমাত্র পত্রিকা- ‘জয় বাংলা’য় জীবনের কর্মযজ্ঞের শুরু। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে তেজোদীপ্ত কবিতা পাঠের মধ্য দিয়েই কবিতাঙ্গনে পা ফেলা। বৈপ্লবিক চেতনায় ভাস্বর এ কবি লেখার জন্য জীবনে বহুবার নির্যাতনের শিকারে পরিণত হয়েছেন। কবিতাকে ভালােবেসে জীবনের ভালােবাসা থেকে বঞ্চিত একজন মানুষ ।। সত্যকে প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে তিনি এক শব্দ সৈনিক। লেখার জন্য জীবনে বহুবার নির্যাতনের শিকারে পরিণত হয়েছেন। রাজনৈতিক চক্রজালে নির্মম পৈশাচিক অত্যাচারে ১৯৯১ সালে ঘরছাড়া হয়েছেন। দ্বীপান্তরে বদলি করা হয়েছে। চাকুরি ঝুলেছে। নরপশু তাড়িত কবি দু’বার গুলির মুখে পড়েছেন। কবিকে বাঁচাতে তার প্রিয় পােষা কুকুর টমি গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ বলি দিয়েছে।। মানবিকতার অবক্ষয়, আত্মিক শুদ্ধতার সংকটের সময়। কবি রবীন্দ্র গােপ কবিতায় সত্য ও সুন্দরের কথা বলার চেষ্টা করেছেন। তিনি বলতে চেষ্টা করেছেন মানবিক প্রেমের সাম্য ও মৈত্রীর বন্ধনের কথা। মুক্তিযুদ্ধ উত্তর কবিতার যে বাক বদল ঘটেছে স্বাধীনতার উত্তাল । প্রকৃতিতে বিষিক্ত কবি রবীন্দ্র গােপ সৃষ্টি ও সৃজনশীল কাব্য রচনায় অন্যতম। দশক বিশ্লেষণে সত্তরের কবি। হিসেবে তিনি একটি সতন্ত্র কাব্যযাত্রা পথে আলাে ফেলে ফেলে অনন্য কাব্যভুবন সৃষ্টি করেছেন। পাঠক তাকে আলাদা ভাবেই হৃদয়ে ধারণ করেন। তার কবিতার মুখে থাকে শব্দের আগুন। যে আগুন কখনাে অন্যকে পােড়াতে গিয়ে নিজেও পােড়েন। বৈপ্লবিক আত্মানুসন্ধানে রচিত একটি কবিতা যেন এক একটি ক্যানভাসে আঁকা জল রং ছবি। আর সে ছবিতে ফুটে উঠেছে বাংলা আর বাঙালির ইতিহাস। বায়ান্নের ভাষা আন্দোলন, উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু। কবির প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা প্রায় একশত। তন্মধ্যে উল্লেখযােগ্য বই- মুজিব আমার অন্তরে বাহিরে, পতাকায় রক্তের দাগ, যুদ্ধ জয়ের গল্প, ছাগলের হাসি ও একটি পাউরুটি, নিষিদ্ধ স্বর্গ, জলকণা, মুক্তি যুদ্ধ পথে পথে, আগুনের ফুল, ভগবান কেমন আছ, পেরেক বিদ্ধ প্রজাপতি, বত্রিশের সিঁড়ি, জয়বাংলা, ত্রিশলক্ষ সূর্যের কবিতা, চিবুকে ঈশ্বর, সুন্দর একাকি থাকতে নেই, লােককবিতায় বঙ্গবন্ধু প্রথম পর্ব ও দ্বিতীয় পর্ব ইত্যাদি। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বাের্ডের ভাইস চেয়ারম্যান ও বি.সি.এস তথ্য সমিতির সভাপতি থাকাকালিন বি এন পি, জামাত জোট সরকারের সময় তিনি চাকুরি হারান ।। বর্তমান সরকার কবিকে সােনারগাঁও লােক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনে পরিচালক পদে নিয়ােজিত করে। তিনি কথাশিল্পী সাহিত্য পুরস্কার-স্বর্ণপদক, বিকাশ সাহিত্য পুরস্কার, কবি সুফী মােতাহার হােসেন সাহিত্য পুরস্কার স্বর্ণপদক, পশ্চিমবঙ্গ থেকে রূপসী বাংলা২০১০ পুরস্কার ও চয়ন সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন। তাছাড়া আমেরিকান বায়ােগ্রাফিক্যাল ইনস্টিটিউট কবিকে ‘ম্যান অব দি ইয়ার-’ ‘৯৮' সম্মানে ভূষিত করে।