বিংশ শতাব্দীর শুরুতে বাংলা ভাষায় রচিত যে দুটি ইতিহাসগ্রন্থ সমগ্র বাংলায় আলোড়ন তুলেছিল শ্রী দুর্গাচন্দ্র সান্যাল রচিত ‘বাঙ্গালার সামাজিক ইতিহাস’ নিঃসন্দেহে তার মধ্যে একটি। গ্রন্থটি ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দে রচিত এবং প্রকাশিত। সমসাময়িক কালে (১৯০৯) রজনীকান্ত চক্রবর্তী ‘গৌড়ের ইতিহাস’ নামে বাংলার প্রথম পূর্ণাঙ্গ ইতিহাসগ্রন্থ রচনা করেন। বাঙালি প্রাচীন লোকপ্রবাদ, কিংবদন্তি ও লোককাহিনিনির্ভর ইতিহাস শুনতে আগ্রহী এবং অভ্যন্ত। লেখক ‘বাঙ্গালার সামাজিক ইতিহাস’ রচনা করেছেন মূলত বাঙালির মনমানসিকতাকে উপলক্ষ্য করেই। বস্তুত, সেই দৃষ্টিকোণ থেকে লেখকের প্রয়াস সার্থক হয়েছে। গ্রন্থটি মোট ত্রিশটি অধ্যায়ে বিভক্ত। এতে মানবজাতির সৃষ্টি, সভ্যতার বিকাশ বিষয়ে লেখক নিজস্ব মতামত ব্যক্ত করেছেন। অধিকাংশ অধ্যায়জুড়ে সুলতানি আমল, মোগল ও নবাবি আমলে বাংলার সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক অবস্থার বর্ণনা করা হয়েছে। উল্লিখিত সময়ে এদেশে গৌড়, ঢাকা ও মুর্শিদাবাদকেন্দ্রিক যে শাসনব্যবস্থা চালু ছিল, এর আওতায় বাংলার বিভিন্ন রাজা-মহারাজা ও জমিদারের নানাবিধ কর্মকাণ্ড এবং এদের জীবনকাহিনি মুখ্যরূপে বর্ণিত হয়েছে এই গ্রন্থে। লেখক দীর্ঘকাল বাংলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে সরেজমিনে ঘুরে যে অমূল্য তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেছেন, সেগুলোই এই গ্রন্থের আসল সম্পদ। অজানা অসংখ্য তথ্যে সমৃদ্ধ ‘বাঙ্গালার সামাজিক ইতিহাস’ সুললিত ভাষায় রচিত। গ্রন্থে নেই কোনো পরিসংখ্যান আর জটিল তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ। এ কারণে পাঠক-মস্তিস্কে গ্রন্থটির সহজগম্যতা নিশ্চিত করেছে। প্রথম শেষ পর্যন্ত এক দমে পড়ার মতো সুখপাঠ্য ‘বাঙ্গালার সামাজিক ইতিহাস’।