“রুমির দিন দিন বেড়ে ওঠা এই ভালোবাসার জন্য আমার ভীষণ ভয় হয়, আমি দ্বিধান্বিত হই। কখনো বিরক্ত হই। মন আর বাস্তবতা দুটো দুদিকে। আমি সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছি।” উদ্ধৃত অংশটুকু কাওছার আহমেদ নিলয়ের ‘এই শহরের কোথাও কেউ নেই’ গল্পগ্রন্থ থেকে নেওয়া। যেখানে লেখক স্বার্থ এবং দ্বিধা-দ্বন্দের দ্বৈত প্রকাশ ঘটিয়েছেন চমৎকারভাবে। পৃথিবীতে স্বার্থহীন কেউ নেই। স্বার্থের এই রোজকার খেলায় কেউ হয় নিঃস্ব, কারও মুখে ফোটে সুখের হাসি, কেউ কেউ আনন্দে বাঁধে ঘর—কারও ঘটে অহর্নিশ প্রস্থান। মানুষ ক্ষণস্থায়ী জীবনের অধিকারী। ক্ষুদ্র এই জীবনে আবেগ-অনুভূতি, দ্বিধা-দ্বন্দ্ব, আশা-হতাশা, সুখ-দুঃখের আগমন ঘটতে থাকে সর্বদাই। আবেগের বশবর্তী হয়ে প্রেমের জোয়ারে গা ভাসিয়ে দেয় অনেকেই। সময় গড়িয়ে যায়, একটা সময় ফুরিয়ে যায় আবেগ। একদিন যেই সম্পর্কের সূচনা হয়েছিল অদূর ভবিষ্যতের সুখের স্বপ্ন দেখে, সেই সম্পর্ক ভেঙে যায়—স্মৃতিগুলো কেবল থেকে যায় অমলিন। ‘এই শহরের কোথাও কেউ নেই’ গল্পগ্রন্থের প্রথম গল্প ‘এই শহরের কোথাও কেউ নেই’ গল্পটিতে ভিন্ন দুই সম্প্রদায়ের অনুসারী জাহিন এবং রুমির প্রেমের সম্পর্কের শেষ পরিণতি যেন সে কথাই জানান দেয়। জীবন যুদ্ধে প্রকৃত ভালোবাসা মানুষকে মহৎ, দায়িত্বশীল এবং সফল করে তোলে। কেউ কেউ ভালোবেসে হয় সুখী আবার কেউ কেউ ভালোবাসার সমীকরণ পাঠ করতে গিয়ে হয় সর্বশান্ত। গল্পগন্থের ‘আমি চিরতরে দূরে চলে যাব’ গল্পে হিমেলের পরিণতি অথবা ‘কিছু ভুলের মাসুল হয় না’ গল্পে মারুফ এবং মিমের অনৈতিক সম্পর্কের শেষ পরিণামের মাধ্যমে ফুটে উঠেছে শারীরিক লিপ্সা, প্রতারণা, স্বার্থান্বেষী ও প্রতিহিংসার মর্মান্তিক চিত্র। অন্যদিকে ‘কিছু ভুল রঙের ফুল’ গল্পটিতে প্রকৃত ভালোবাসার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়েছে। কাওছার আহমেদ নিলয় একজন প্রতিভাবান লেখক। ‘এই শহরের কোথাও কেউ নেই’ গল্পগ্রন্থে তিনি শব্দের সাবলিল বুননের মাধ্যমে প্রতিটি গল্পে মানুষের ইতিবাচক এবং নেতিবাচক মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন অত্যন্ত সরলভাবে। গল্পগ্রন্থটিতে স্থান পেয়েছে প্রেম-ভালোবাসা, শারীরিক লিপ্সা, প্রতারণা ও প্রতিহিংসার করুণ পরিণতিসহ পারিবারিক এবং সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে সর্বমোট নয়টি গল্প। আশা করছি, গল্পগুলো সকলের নিকট গ্রহণযোগ্যতা পাবে। আমি লেখকের সুস্থতা এবং লেখালেখি জীবনের উচ্চ ও উত্তম সফলতা কামনা করি। নাহিদ হাসান ঢাকা, বাংলাদেশ