পৃথিবীতে মানুষ হয়ে জন্মগ্রহণ করার মতো শ্রেষ্ঠ আর কোনো সৌভাগ্য হয় না। আমরা আমাদের কর্ম, অর্থ, সামাজিকতাসহ নানা বিষয় দিয়ে আমাদের সৌভাগ্য নির্ধারণ করি। এতে করে আমাদের হতাশ হতে হয়। কেউ অঢেল অর্থের মালিক অথচ কেউ অভাবে দিন কাটায়। কারো সামজিক সম্মান ঈর্শানীয় আবার কারো কোনো পদ মর্যাদাই নেই। বড় কথা হলো মানব জীবন একটাই। এই এক জীবনে সবাই সব কিছু পায় না। যা কিছু পাওয়া যায় তাই নিয়ে সস্তুষ্ট থাকার নামই সুখ। ১৯৪৬ সালের ১৯ ফেব্রæয়ারি ফেনীতে জন্ম নেওয়া রফিক রহমান ভূঁইয়া তাঁর জীবনের গল্প নিয়ে লিখেছেন এ বইটি। বইটির নামকরণও করেছেন ‘এক জীবনের গল্প’। রফিক রহমান ভূঁইয়া পেশায় একজন শিক্ষক। ১৯৬৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি বাংলা স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করে কলেজ শিক্ষকতায় আত্মনিয়োগ করেন। জন্মসাল লক্ষ্য করলে তিনি পুরো তিনটি রাষ্ট্র ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে জীবন অতিবাহিত করেছেন। যদিও ব্রিটিশ শাসনের অবসান ও দেশ ভাগের সময় তার শৈশব জীবন কেটেছে। তবে পাকিস্তান রাষ্ট্রের বিকাশ, পতন আর বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্ম তিনি প্রত্যক্ষ করেছেন স্বচোখে। সারা জীবন শিক্ষকতার পেশায় থাকার ফলে অগণিত তরুণ ছাত্রদের সাথে তার সময় কেটেছে। কখনো তিনি ক্লাস রুমে, কখনো ছাত্রদের সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায়, কখনো খেলার মাঠে কেটেছে তার পেশাজীবনের উজ্জ্বল সময়গুলো। তার জন্ম জেলা ফেনী শহরেই কেটেছে তার পেশাজীবনের বেশিরভাগ সময়। এখানে থেকেই তার লেখালেখি ও সামাজিক বিভিন্ন সংগঠনের সাথে তার নিবিড়তা। তিনি অন্যতম কলেজ শিক্ষক হিসেবে পেয়েছেন রাষ্ট্রীয় পুরস্কার। সে হিসেবে বলাই যায় যে তিনি শিক্ষক হিসেবে একজন আর্দশ শিক্ষক। এক জীবনের গল্প ৩২৮ পৃষ্ঠার একটি বই। দীর্ঘ এই বইটিতে নিজের জীবনের নানা স্মৃতি খুঁটিখুঁটিয়ে তুলে এনেছেন তিনি। নিজের অপারগতা, ব্যর্থতা, নানা দুঃখবোধ না লুকিয়ে পাঠকের সামনে তুলে ধরেছেন। এ লেখার মধ্য দিয়ে তিনি আত্মসমালোচনা করতে দ্বিধাবোধ করেননি। যাদের সহচার্যে তিনি সম্মৃদ্ধ হয়েছেন তাদের ঋণ অকপটে স্বীকার করে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন লেখার মধ্য দিয়ে। বিশেষ করে তার নিজের ছাত্রদের নিয়ে নানা রকম স্মৃতিচারণ করেছেন একজন অভিভাবকের মতো। পেশা জীবনে অসংখ্য সহকর্মীদের সাথে তাকে কাজ করতে হয়েছে। ফলে তাদের নিয়ে রয়েছে তার নানা বৈচিত্র্যপূর্ণ অভিজ্ঞতা। কলেজের অধ্যাপনার পাশাপাশি অধ্যক্ষের মতো গুরুপূর্ণ পদেও তাকে কাজ করতে হয়েছে। কলেজ প্রধানের মতো এতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থেকেও তিনি লেখালেখি থেকে নিজেকে দূরে রাখেননি। তার রচিত সৃজনশীল বই নেহাৎ কম নয়। গল্প, কবিতা, উপন্যাসসহ সাহিত্যের নানা মাধ্যমে তিনি স্বক্রীয় ছিলেন সব সময়। এ বইটি পড়তে পড়তে মনে হবে যেনো আপনি একটি বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা ও এর শিক্ষক ছাত্রের ইতিহাস ঐতিহ্য সম্ভবনা সাফল্যের কথা শুনছেন। একই সাথে ছাত্র শিক্ষকের দেশ গঠনে যে সংগ্রাম ও আত্মদান তাও মনে করিয়ে দেবে।