বাংলা সাহিত্যে ছোটগল্প একটি আধুনিক শিল্পপ্রকরণ। কিন্তু বিশ্বকবি ও অন্যতম শ্রেষ্ঠ ছোটগল্পকার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর থেকে শুরু করে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, জগদীশ চন্দ্র, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় হয়ে প্রবহমান যে ধারায় আমাদের গল্পসাহিত্য সমৃদ্ধ হয়েছে তা ছোটগল্পের বিশ্বমান স্পর্শ করেছে অনেক আগেই। এমনকি ছোটগল্পের আঙ্গিকগত নিরীক্ষাতেও আমাদের সাম্প্রতিককালের গল্পকাররা পিছিয়ে নেই। 'নিতান্তই সহজ সরল,' 'ছোট প্রাণ ছোট ব্যথা,' 'ছোট ছোট দুঃখ-কথা' নিয়ে 'অন্তরে অতৃপ্তি রবে, সাঙ্গ করি মনে হবে শেষ হয়ে হইলো না শেষ' এর ব্যঞ্জনাময় রাবিন্দ্রিক সংজ্ঞার্থের মধ্যে আজ তার ছোটগল্প সীমাবদ্ধ নয়। মধুমক্ষিকার একেকটি পুঞ্জাক্ষির মত একটি সীমিত আয়তনের মধ্যে জীবনের বহু লঘু-গুরু, সূক্ষ্ম ও স্কুলো, নিগূঢ়-প্রগাঢ় অনুভব ও অনুভূতির বাস্তব প্রতিফলন ঘটে ছোটগল্পে। ছোটগল্প তাই ব্যক্তিজীবনের অনুভবের, বুদ্ধিবৃত্তির বোধের, সমাজ-রাজনীতির কথা সার্বিক দর্শনেরই সুসংহত প্রকাশ। বিশেষ করে গত ২৫ বছরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা-উত্তরকালের ছোটগল্পে এই সত্য স্বতঃপ্রমাণিত। বাংলাদেশের ছোটগল্প শিরোনামের এই বৃহৎ পটভূমিকায় যে ক্ষুদ্র প্রকাশনার অবতারণা করা হয়েছে তা নিতান্ত অকিঞ্চিতকর মনে হলেও আমরা গত প্রায় ৩ দশকের বাংলাদেশী গল্পের একটি সামান্য ধারণা পাঠকের কাছে উপস্থাপনের প্রয়াস পেয়েছি। রাজনৈতিক ভিন্নমতের বাইরে থেকে আমরা মোটামুটিভাবে প্রতিটি দশকের প্রতিনিধিত্বশীল লেখকদের সমাবেশ ঘটাতে চেয়েছি। হয়তো এ ক্ষেত্রে আমরা সর্বভোতভাবে সফল হইনি। সেটি একান্তই সম্পাদকের ব্যর্থতার কারণে।