কুরআন সাধারণ কোনো গ্রন্থ নয়। কুরআন একটি জীবন্ত জীবন-বিধান। কুরআন মুমিনদের জন্য শিফা ও রাহমাহ। মুমিনের অন্তরের ব্যাধি থেকে শুরু করে জাগতিক সকল সমস্যার সমাধান দেয় কুরআন। তবে কুরআনের সমাধান পেতে হলে কুরআনকে ভালোভাবে বুঝতে হবে। কুরআন নিয়ে তাদাব্বুর করতে হবে। ডুব দিতে হবে কুরআনের গভীর থেকে গভীরে। . কুরআনের অর্থ অনুধাবন হৃদয়ে আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা, অনুরাগ ও ভালোলাগা সৃষ্টি করে। কুরআন বোঝার মধ্য দিয়েই তৈরি হয় আত্মার পরিশুদ্ধি, হৃদয়ের পরিতৃপ্তি আর তাকদীরের ফায়সালার প্রতি সন্তুষ্টি। কুরআন বোঝার মধ্য দিয়েই অর্জিত হয় ইয়াক্বীন ও সুদৃঢ় বিশ্বাস, অর্জিত হয় আল্লাহর সাথে বান্দার সম্পর্ক ও দ্বীনি আত্মমর্যাদাবোধ, সৃষ্টি হয় আখিরাতের ফিকির এবং আল্লাহর কাছে পরিপূর্ণ প্রতিদান লাভের সজীব প্রত্যাশা। এ সবই অনেক বড় বড় একেকটি অর্জন। . ‘কুরআন: জীবনের গাইডলাইন’ বইটিতে ড. ইয়াদ কুনাইবীর অনেকগুলো হৃদয়কাড়া আলোচনা স্থান পেয়েছে। এখানে রয়েছে মানুষের আত্মিক পরিশুদ্ধির বহুবিধ উপকরণ। সাহাবায়ে কেরাম রদিয়াল্লাহু আনহুম আল্লাহ-প্রেমের অমৃত-সুধা পান করে তাঁর শর্তহীন আনুগত্য ও কুরআনময় জীবন গঠনের যে উপমা পেশ করেছেন, তা অত্যন্ত প্রাঞ্জল ভাষায় ফুটে উঠেছে বক্ষ্যমাণ বইটিতে। পাশাপাশি মানবজীবনের বহুমুখী জাগতিক ও আত্মিক সমস্যার সমাধান রয়েছে পুরো বইটির পাতায় পাতায়।
ফিলিস্তিনী বংশোদ্ভুত ড. ইয়াদ কুনাইবী বড়ো হয়েছেন জর্দানের রাজধানী আম্মানে। ছাত্রজীবন থেকে পড়াশোনায় মেধার স্বাক্ষর রাখার পাশাপাশি সাহিত্যাঙ্গনেও ছিল তার সপ্রিতভ পদচারণা। ১৯৯৮ সালে তিনি জর্দান ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি থেকে ফার্মেসিতে কৃতিত্বের সাথে স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেন। কৃতিত্বের ধারা অব্যাহত রেখেই স্নাতোকত্তর শেষে ১৯৯৯ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত হিউস্টন ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষার্থীদের গবেষনা সহকারী হিসেবে যোগদান করেন ‘pharmacology’ বিভাগে। ২০০৩ সালে এই বিভাগ থেকে প্রথম স্থান লাভ করে সুনামের সাথে PHD সম্পন্ন করেন। এর পরপরই বিশ্ববিখ্যাত টেক্সাস মেডিকেল সেন্টারে তৎকালীন সেরা চিকিৎসাবিজ্ঞানীদের সাথে গবেষনামূলক কাজে অংশগ্রহনের বিরল সুযোগ লাভ করেন। চিকিৎসা বিজ্ঞানে নিজের প্রতিভার উজ্জল স্বাক্ষর রাখার পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় জীবনেই তিনি মিশরের ইসলামী আন্দোলনের পথিকৃৎ ‘সাইয়্যিদ কুতুব শহীদের’ মাধ্যমে ইসলাম ও ইসলামী শিক্ষার প্রতি ঝুকে পড়েন। আধুনিক চিকিৎসা শাস্ত্রে যেমন তার বেশ কিছু গবেষনা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে প্রশংসা কুড়িয়েছে, তেমনই দ্বীনি দাওয়াতের ময়দানেও তিনি তার মেধা ও উম্মাহদরদি মানসিকতার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন ছাত্রজীবন থেকেই। তিনি ও তার সঙ্গীগণ বিভিন্ন মসজিদে গিয়ে মুসুল্লীদের মাঝে দ্বীনি দাওয়াত চালাতেন প্রথম দিকে। দ্বীনি দাওয়াতের পাশাপাশি তিনি ইলমে দ্বীনের একনিষ্ঠ ছাত্র হিসেবেও কঠোর পরিশ্রম করে গেছেন। শাইখ আব্দুর রহমান বিন আলী আল-মাহমুদের নিকট হাফস বিন আ’সিম রহিমাহুল্লাহর সনদে ইলমুল কিরাআত শিক্ষা করেন। একনিষ্ঠ পাঠক হয়ে ওঠেন সালাফ থেকে নিয়ে সমকালীন বিশ্ববরেণ্য আলিমদের। আলিমদের ইলম ও সোহবতে তাফসীর, সীরাত, ফিকহ-সহ বিভিন্ন দ্বীনি শাস্ত্রে গভীর ব্যুৎপত্তি লাভ করেন তিনি। দেশের গণ্ডি পেড়িয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও তিনি মুসলিম-অমুসলিম সবার প্রতি দ্বীনের দাওয়াত অব্যাহত রাখেন। তার দাওয়াতী কার্যক্রমে ইসলামের পক্ষে ও ক্রুসেডারদের বিপক্ষে জোড়ালো বক্তব্য উঠে আসতে শুরু করে। যার ফলে ২০১৫ সাল থেকে এ-পর্যন্ত চারবার গ্রেফতার হয়ে বিভিন্ন মেয়াদে দুই বছরেরও বেশি সময় নবী ইউসুফের পাঠশালায় ছিলেন তিনি। হামলা, মামলা ও বন্দি জীবনের ভয় আদর্শের পথ থেকে এক চুলও সরাতে পারেনি তাকে। রুখতে পারেনি দাওয়াতের ময়দানে তার পথচলা। আমরা আল্লাহর নিকট তার তার ক্ষুরধার লেখনী ও বক্তব্যের মাধ্যমে যেন উম্মাহ উপকৃত হতে পারে, সেই তাওফিক এবং তার নেক হায়াত ও সত্যের পথে অবিচলতা কামনা করছি।