অন্তঃকরণ কেন অন্ধত্ববরণ করে? এই জন্য অন্ধত্ববরণ করে। যে, স্বীয় প্রতিপালকের নিকট প্রতিশ্রুতি দিয়া আসার পর বান্দার সম্মুখে অলসতা ও ভ্রান্তিরূপ কতগুলি অন্তরায় আসিয়া দেখা দেয়। আল্লাহর আদেশ হইতে অজ্ঞতা ও মূর্খ থাকিবার কারণ হইল অলসতা পঙ্কিলময় সিফাত বা দোষাবলি। যেমন কিবর (গর্ব করা), হিকদ (শত্রুতা), হাছাদ (হিংসা করা), বুখল (কৃপণতা), ওয়ব (নিজের পুণ্যকে বড় মনে করা), গিবত (পরনিন্দা), নমিমা (অন্যের ছিদ্রান্বেষণ করা), কিয়ব (মিথ্যা বলা ) ইত্যাদি দোষাবলি মানুষকে মূর্খ ও উত্তেজক করিয়া তোলে। এই সমস্ত দোষাবলি দূর করিয়া পবিত্রতা অর্জন করিতে হইলে তাওহীদ রূপ শানযন্ত্রের সাহায্যে কলব পরিষ্কার করিতে হইবে এবং যাহেরী ও বাতেনী বিদ্যা অর্জন করিতে সেইমতে অবশ্য আমল করা ওয়াজিব। সিফাত ও তাওহীদের নূরের দ্বারা কলব সজীবতা লাভ করিবে এবং আসল বাসস্থানের কথা স্মরণ হইবে। এই নশ্বর জগত হইতে অবিনশ্বর জগতে প্রত্যাবর্তন করিবার ইচ্ছা কলবে বলবৎ হইবে এবং আল্লাহর অসীম মেহেরবানীতে সেইখানে উপস্থিত হইবে। এই জাতীয় অন্ধকারাচ্ছন্ন পর্দার অপসারণ হইলে কেবল নূরই নূর অবশিষ্ট থাকিবে। অতঃপর রূহানী চোখ দ্বারা সেই নূর দেখিতে থাকিবে। অতঃপর আল্লাহতাআলার সিফাতী নামসমূহের নূর দ্বারা জ্যোতির্ময় হইবে। তৎপর ক্রমে ক্রমে উক্ত নূরসমূহ তিরোহিত হইবে। ফলে স্বয়ং আল্লাহর নূরে জ্যোতির্ময় হইবে। আল্লাহপাকের সহিত মিলন একজনের সহিত অন্য জনের মিলন, জ্ঞান জ্ঞানের সহিত, ধারণা ধারণার সহিত তুল্য নহে। আল্লাহতাআলা গোপনে সর্বস্থানে প্রকাশিত স্বীয় জ্যোতিতে গুপ্ত প্রকাশ্য এবং তাহার ধ্যানে গুপ্ততত্ত্ব হাসিল হয়। যেই ব্যক্তি ইহার সারমর্ম এই নশ্বর জগতে অর্জন করিয়াছে এবং কেয়ামতে হিসাব গ্রহণ করিবার পূর্বেই নিজে নিজের হিসাব গ্রহণ করিয়াছে সেই ব্যক্তি পুণ্যবানদের মধ্যে পরিগণিত। অন্যথায় সে ভীষণ আযাবের সম্মুখীন হইবে। যেমন- কবরের আযাব, কিয়ামতের হিসাব, মিজানের ওজন, পুলসিরাত অতিক্রম করা ইত্যাদি অসুবিধার সম্মুখীন হইবে।