ঢাকার জাতীয় জাদুঘরে সংরক্ষিত একটি ছবিতে ফুটে উঠেছে একাত্তরের মার্চে মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পূর্বে সেই অগ্নিঝরা দিনগুলোর একটি অবিস্মরণীয় মুহূর্ত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠে রাইফেল ট্রেনিং শেষে নারী শিক্ষার্থীরা ঢাকার রাজপথে সমাপনী মার্চপাস্ট করছে। লক্ষ করলে সেই ছবিতে দেখা যাবে রাইফেল কাঁধে এ ডায়েরির রচয়িতা নাজনীন সুলতানাকে। মুক্তিযুদ্ধের সময় তাঁর প্রধান দায়িত্ব ছিল ঢাকায় অবস্থান করে মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয়ের ব্যবস্থা, প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ, যোগাযোগ রক্ষা, অর্থ ও ওষুধ সরবরাহসহ সব ধরনের সহযোগিতা প্রদান করা। একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর দেশ স্বাধীন হলে সহপাঠীদের সংগঠিত করে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহত মুক্তিযোদ্ধাদের সেবায় আত্মনিয়োগ করেন। বাবা প্রগতিশীল আন্দোলনের উৎসাহী সমর্থক ছিলেন। মা ছিলেন মহিলা পরিষদের নেতা। বস্তুত পারিবারিক পরিবেশই লেখককে নিয়ে যায় মুক্তিযুদ্ধে। খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ, বিশেষত নারীমুক্তির জন্য নিজেকে নিবেদন করেছেন তিনি। তাঁর বোনেরাও ছিলেন উদীচী ও খেলাঘরের নেতৃত্বে। ভাই মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) বর্তমান সভাপতি। মধ্যবিত্ত, উদার, মানবতাবাদী, দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ পরিবারে বড় হয়েছেন তিনি। গ্রামের বাড়ি ঢাকার সাভারে। ঢাকায় মতিঝিল গভর্নমেন্ট গার্লস হাইস্কুলে পড়ার সময় থেকেই বাংলাদেশ (পূর্ব পাকিস্তান) ছাত্র ইউনিয়নের কর্মী হিসেবে কাজ শুরু করেন। বকশি বাজার গভর্নমেন্ট ইন্টারমিডিয়েট কলেজে ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বও দিয়েছেন তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিজ্ঞানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর করা নাজনীন সুলতানা ছিলেন একজন আইটি বিশেষজ্ঞ এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রথম নারী ডেপুটি গভর্নর।