ভালোবাসার সাথে ভালোবাসা জুড়লে ভালোবাসা হোলস্কয়ার হয় বলে বিশ্বাস করতো কয়েকটা মানুষ। তাদের মধ্যে যারা লাস্টবেঞ্চে বসতো, কোনো দায় ছিল না তাদের এই পৃথিবীর স্বীকৃতির ভার বহন করার। চায়নি তারা। যারা চেয়েছিল তারা দৌড়ে এগিয়েছিল অনেক দূর। সময়টাও ছিল যে বেয়াড়া। টুকরো টুকরো হয়ে ভেঙে পড়েছিল বার্লিনের পাঁচিল। সোভিয়েত রাশিয়া খণ্ড খণ্ড হয়েছিল ঝলসানো রুটির মতো। কেন্দ্রে গঠিত হয়েছিল এক মিলিজুলি সরকার। রাজ্য তখন সর্বহারাদের দখলে। এর মাঝেই ছিল একটা পাড়া। একটা নদীর ধার। ধূসর হয়ে আসা এক সিনেমা হল। দুপুরবেলায় যার চারপাশে নীল স্বপ্নেরা উঁকি দিতো। স্কুল কেটে কেউ কেউ সেই স্বপ্নের পশরার দিকে ছুটে চলতো বেমক্কা সাইকেল চালিয়ে। দু শালিক দেখলে মন ভালো হয়ে যেতো কারও কারও। কুশ ঘাসের ঝোপ হাওয়ায় মাথা দোলাতো। ভাব সম্প্রসারণ আর ত্রিকোণমিতি মুক্তিলাভের আশায় ছটফট করে উঠতো। দুপাশের গালের ব্রণ যত চড়বড় করতো প্রেম বাড়তো তত হুহু করে। এর মধ্যে দুটো ছেলে একে অপরকে ভালোবাসলে আকাশে দেখা দিতো কালপুরুষ। “যারা কালপুরুষকে ভালোবাসে তাদের কী হয় জানিস? ঘর ছাড়া হতে হয় তাদের। খোলা আকাশের নীচে মরতে হয়। তখনও মাথার ওপরে অনন্ত আকাশে জেগে থাকে কালপুরুষ"। ছলাৎ ছলাৎ করে নদীর জল গল্প শুনিয়েছিল। ওরা মরেছিল ভালোবাসায়। নিতান্ত নিছক ক্লিশে যুদ্ধে। ইট বালি সিমেন্টের সিন্ডিকেটে। এক ধূসর লাল ডায়েরি সাক্ষী ছিল তার। আর সাক্ষী ছিলেন ঝিরঝিরে নীল সাদা বরফ বৃষ্টিতে ভিজতে থাকা সেই কবেকার কমরেড ভ্লাদিমির ইলিচ লেলিন। থার্ড বেল কর্কশ স্বরে বেজে উঠলে, প্রজেক্টারের নরম আলো পর্দার ওপরে পড়লে ফুটে উঠেছিল একটা নাম "নাইনটিন নাইনটি আ লাভ স্টোরি"। সঞ্জয়লীলা বনশালির দ্বারা অনুপ্রাণিত ছিল কিনা জানা যায় না। তবে জলছবি হয়ে যাওয়া কতগুলো মুখ তাকিয়ে ছিল পর্দার ভেতর থেকে। সিটি মারার কেউ ছিল না। কারণ ততদিনে হারিয়ে গিয়েছিল দর্শককুল। আর একটা লু-লাগা দুপুর।
নাইন্টিন নাইনটি— আ লাভ স্টোরি কল্লোল লাহিড়ী অলংকরণঃ মেখলা ভট্টাচার্য