মানুষকে মহান আল্লাহ সামাজিক জীব হিসেবেই দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন। প্রতিটি মানুষই নিজস্ব অঙ্গনে তার আবেগ, চাওয়া পাওয়ার প্রকাশ ভাষার মধ্য দিয়ে করে থাকেন। দয়াময় আল্লাহ্ যার মুখে লালিত্যপূর্ণ ভাষা দিয়েছেন, মনের ভাব শব্দে প্রকাশের জন্য বাকশক্তি দিয়েছেন, সে বড় ভাগ্যবান। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “নিশ্চয় ভাষাশৈলিতে জাদু রয়েছে।” (সহীহ বুখারী: ৫১৪৬) তাই মানুষকে মহান আল্লাহর সব নেয়ামতের সঙ্গে ভাষার নেয়ামতেরও যথার্থ মূল্যায়ন করা উচিত। ভাষার নেয়ামতের কদর করা ভাষার অপপ্রয়োগ থেকে বিরত থাকা। মনে রাখা প্রয়োজন-- “মানুষ যে কথাই উচ্চারণ করে, তার জন্য তৎপর প্রহরী তার নিকটেই রয়েছে।” (সূরা কাফ: ১৮) সাহল ইবন সা'দ (রা.) বর্ণনা করেছেন যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “কেউ যদি আমাকে নিশ্চয়তা দিতে পারে, তার দু'চোয়ালের মাঝখানের অঙ্গ (জিহ্বা) এবং দু'পায়ের মধ্যবর্তী অঙ্গ (গুপ্তাঙ্গ) সম্পর্কে (সে সেগুলো সুরক্ষিত রাখবে), আমি তার জন্য জান্নাতের জামিন হতে পারি।” (সহীহ বুখারী) আর তাই নিজের জিহ্বাকে ভালো কাজে যুক্ত রাখার জন্য একটি মাধ্যম হল, যিকর করা। আজকাল দেখা যায় অনেকেই হাতে তাসবীহ দানা নিয়ে টিভির সামনে বসে কিছু একটা দেখছেন ও হাতের দানাটিও এগিয়ে যাচ্ছে। আবার অনেকেই গল্প করতে করতে হাতের তাসবীহ দানাটিও এগিয়ে নিচ্ছেন। আসলেই কি এই ধরনের দু'টো কাজ একসাথে করা যায় যা অন্তর, মন ও মুখকে জড়িয়ে করতে হয়। যে কাজ শুধুমাত্র শারীরিক হয়, সেই ধরনের কাজ যেমন- একসাথে দুই চুলায় রান্না বসানো বা দোকানে দুই তিনটি আইটেম একসাথে কেনা যায়, ফোনে কথা বলা ও ঘর গোছানোর কাজ করা যায়। যিকরের অর্থ স্মরণ করা বা করানো। যিকর এর উদ্দেশ্য হল, তাসবীহ দিয়ে সংখ্যা গণনা করা নয়। সেই কারণেই তাসবীহ দানা ব্যবহারে আপত্তি রয়েছে ইসলামী শরীয়তে। প্রয়োজনে তাসবীহ আঙ্গুলে গণনা করতে অনুমতি আছে, এটা বলার উদ্দেশ্য আঙ্গুল যেন সাক্ষ্য দিতে পারে। কারণ এই শরীর নিয়েই ব্যক্তি কবরে ও হাশরের মাঠে দাঁড়াবে। যিকরের সময় অন্তর ও জিহ্বাকে একসাথে একাত্ম করে নিতে হবে। মুখে যা উচ্চারণ করা হয় তার অর্থের দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। “হে নবী! তোমার রবকে স্মরণ করো সকাল-সন্ধ্যায় মনে মনে কান্নাজড়িত স্বরে ও ভীতি-বিহ্বল চিত্তে এবং অনুচ্চ কণ্ঠে। তুমি তাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না যারা গাফলতির মধ্যে ডুবে আছে।” (সূরা আরাফ: ২০৫)