রাণাঘাটের রেল-বাজারে বেচু চক্কত্তির হোটেল যে রাণাঘাটের আদি ও অকৃত্রিম হিন্দু-হোটেল এ-কথা হোটেলের সামনে বড় বড় অক্ষরে লেখা না থাকিলেও অনেকেই জানে। কয়েক বছরের মধ্যে রাণাঘাট রেল-বাজারের অসম... See more
TK. 280 TK. 182 You Save TK. 98 (35%)
* স্টক আউট হওয়ার আগেই অর্ডার করুন
কমিয়ে দেখুন
বাংলাদেশে এই প্রথম "অনলাইন বাণিজ্য মেলা" ১ লক্ষাধিক পণ্যে ৭৫% পর্যন্ত ছাড়! সাথে BOGO, 100+ Bundle, ফ্রি শিপিং সহ আকর্ষনীয় সব অফার!
বাংলাদেশে এই প্রথম "অনলাইন বাণিজ্য মেলা" ১ লক্ষাধিক পণ্যে ৭৫% পর্যন্ত ছাড়! সাথে BOGO, 100+ Bundle, ফ্রি শিপিং সহ আকর্ষনীয় সব অফার!
বাংলা সাহিত্যের অন্যতম পথিকৃৎ বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় বেশ কিছু কালজয়ী উপন্যাস রচনার মাধ্যমে জয় করে নিয়েছেন বাংলা ভাষাভাষী পাঠকদের হৃদয়। শুধু উপন্যাসই নয়, এর পাশাপাশি তিনি রচনা করেছেন বিভিন্ন ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনী, দিনলিপি ইত্যাদি। প্রখ্যাত এই সাহিত্যিক ১৮৯৪ সালের ১২ সেপ্টেম্বর ভারতের পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগণা জেলায় জন্মগ্রহণ করেন, তবে তাঁর পৈতৃক নিবাস ছিল যশোর জেলায়। অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র হিসেবে তিনি শিক্ষাজীবন অতিবাহিত করেন, যার প্রমাণ পাওয়া যায় তাঁর প্রথম বিভাগে এনট্রান্স ও আইএ পাশ করার মাধ্যমে। এমনকি তিনি কলকাতার রিপন কলেজ থেকে ডিস্টিংশনসহ বিএ পাশ করেন। সাহিত্য রচনার পাশাপশি তিনি শিক্ষকতার মাধ্যমে কর্মজীবন অতিবাহিত করেন। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় এর বই সমূহ এর মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত হলো 'পথের পাঁচালী', যা দেশ ছাড়িয়ে বিদেশের মাটিতেও ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হওয়ার মাধ্যমে। এই উপন্যাস অবলম্বনে চলচ্চিত্র নির্মাণ করে প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায় অর্জন করেছেন অশেষ সম্মাননা। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় এর বই এর মধ্যে আরো উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো 'আরণ্যক', 'অপরাজিত', 'ইছামতি', 'আদর্শ হিন্দু হোটেল', 'দেবযান' ইত্যাদি উপন্যাস, এবং 'মৌরীফুল', 'কিন্নর দল', 'মেঘমল্লার' ইত্যাদি গল্পসংকলন। ১০ খণ্ডে সমাপ্ত ‘বিভূতি রচনাবলী’ হলো বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় এর বই সমগ্র, যেখানে প্রায় সাড়ে ছ’হাজার পৃষ্ঠায় স্থান পেয়েছে তার যাবতীয় রচনাবলী। খ্যাতিমান এই সাহিত্যিক ১৯৫০ সালের ১ নভেম্বর বিহারের ঘাটশিলায় মৃত্যুবরণ করেন। সাহিত্যে অসামান্য অবদানের জন্য তিনি মরণোত্তর 'রবীন্দ্র পুরস্কারে' ভূষিত হন।
আমরা বাঙালি। আমাদের কাছে বাঙালি খবারের মতো স্বাদ অন্য কোন দেশের খাবারে নেই। বাঙালি খাবারের স্বাদ বাঙালিদের কাছে অমৃত। বাঙালি খাবারের তুলনা অন্য কোন দেশের খাবারের সাথে করা যায় না।গরম ভাত, আলু ভর্তা, ডাল এর স্বাদ কি কখনো কোন বিদেশি খাবারে পাওয়া যাবে? কখনোই এই স্বাদ ইংরেজি খাবারে পাওয়া যাবে না, বাঙালিরা তো কোন দিন পাবে না।গরম ভাতের সাথে ইলিশ মাছ ভাজা খাওয়ার মতো শান্তি অন্য কোন দেশের খাবার খেয়ে পাওয়া যাবে না, অনন্ত বাঙালি হিসেবে আমার কাছে তাই মনে হয়। বাঙালিদের কখনো গরম ভাত, আলুর ভর্তা, ডাল,কষা মাংস, ঘিয়ে ভাজা লুচি, কাতলা মাছের কালিয়া,চিংড়ীর মালাই কারী, আমের আচার খাওয়ার সুযোগ দেবেন দেখবেন খুশিতে ডগমগিয়া উঠবে,এই খাবার উপেক্ষা করার ক্ষমতা কোন বাঙালির নেই।
আসল কথাই আসি " আর্দশ হিন্দু হোটেল" বইয়ের রিভিউ দিতে এসেছি আজকে। জি হ্যাঁ, আর্দশ হিন্দু হোটেলের রিভিউ দিতে আর খাবারের কথা বলব না তাই কি হয় বলুন?তাইতো খাবার নিয়ে এতো বকবকানি। চলুন তাহলে শুরু কারা যাক।
#গল্প_সংক্ষেপঃ হাজারি দেবশর্মা। খুব ভালো রান্না করেন, দুর্দান্ত তার রান্নার হাত । একবার যে তার হাতের রান্না খেয়েছে, সে কখনো ভুলবে না সেই রান্নার স্বাদ। মধ্যবয়সী এই ব্রাহ্মণ ভদ্রলোক সাত টাকা মাইনের বিনিময়ে বেচু চক্কত্তির হোটেলে রাধুনীর কাজ করেন। তার রান্নার হাতের সুনাম রাণাঘাট ছাড়িয়ে দূর দুরান্তে ছড়িয়ে গিয়েছে। কিন্তু তবুও বেচু চক্কত্তি তাকে প্রাপ্য মাইনে বা প্রাপ্য সম্মান কোনোটাই দেন না। তার মনের গোপন কোণে তিনি লালন করে চলেছেন একটি সুপ্ত বাসনা তা হলো এই রেলবাজারেই তার নিজের একটা হোটেল হবে। যার নাম হবে আদর্শ হিন্দু হোটেল। হোটেলের বাইরে লেখা থাকবে।
"হাজারি চক্রবর্ওীর হিন্দু হোটেল" রাণাঘাট
তার স্বপ্ন কি কখনো পূরণ হবে? হাজারি ঠাকুরসহ অন্যান্য কর্মচারীদের জীবন অতিষ্ট করে দেয়ার জন্য হোটেলে রয়েছে এক মহা শয়তান মহিলা মানে বেচু চক্কতির পছন্দের মানুষ পদ্মঝি। পদ্মঝি যেন বাংলার ঘরে ঘরে থাকা কুটনি বুড়ির বাস্তব উদাহরণ। তিনি নিজে কাজে হরদম ফাঁকি দেন, সুযোগ মত হাতটানেরও স্বভাব রয়েছে, কিন্তু বেচু চক্কত্তির পছন্দের মানুষ হওয়ায় তাকে সাহস করে কেউ প্রতিবাদ করতে পারে না । কেউ কোন প্রতিবাদ করতে দেরী, পদ্মঝির মুখ ছুটতে দেরী নেই। এ জন্য সবাই পদ্মঝির থেকে যতটা পারে দূরে থাকার চেষ্টা করে৷ কিন্তু একই হোটেলে কাজ করে কতটাই বা এড়িয়ে থাকা যায়? বেচু চক্কতি যেন চোখ রেখেও অন্ধ। হাজারি ঠাকুরের মনের ইচ্ছে কি কখনো পূরণ হবে? নাকি শেষ জীবন পর্যন্ত পদ্মঝির মুখের ঝামটা খেতে খেতে বেচু চক্কত্তির গোলামি করতে হবে?
#পাঠপ্রতিক্রিয়া : আমার কাছে মনে হয় বিভূতিভূষণ মানে বাংলা সাহিত্য৷ সাহিত্যের ঢাল-পালা বিস্তৃত করে তার সৃষ্টিশীল লেখা আমাকে সবসময় মূগ্ধ করে ৷ বড়, মমতা চড়ানো থাকে তার লেখার প্রত্যেকটা ভাঁজে ৷ উপন্যাস, গল্প, প্রবন্ধ সব জায়গায় ৷ বিভূতিভূষণের লেখার ধারা বিবেচনায় "আর্দশ হিন্দু -হোটেল" উপন্যাসে এর ব্যতিক্রম ঘটেনি ৷ লেখক অসাধারণ পাণ্ডিত্য দেখিয়েছেন ৷ বিভূতিভূষণ বন্দ্যােপাধ্যায় কোথা থেকে এত শান্তিময় ভঙ্গিতে লেখেন আমার জানা নেই। এতটা ভালো লাগা ছড়িয়ে উপন্যাসের প্রত্যেকটা অংশ সৃষ্টি করেছেন ৷ এর আগে আমি অন্য বইতে এতটা আবেগ, অনুভূতির ছোঁয়া পাইনি যা বিভূতিভূষণের "আর্দশ হিন্দু -হোটেল " দিয়েছে।খুবই সাধারণ একটা প্লট,কিন্তু এত অসাধারণভাবে উপনাস্থাপন করা তার পক্ষেই সম্ভব।বইয়ের প্রথম পাতা থেকে শেষ পাতা পর্যন্ত একই আকর্ষণ অনুভব করেছি। এই উপন্যাস আপনাকে কখনো হাসাবে, কখনো কাঁদাবে, কখনো ক্ষুধাও লাগবে ,কখনো আবার পদ্মঝির ওপর প্রচুর রাগ লাগবে। এত অসাধারণ গল্পের ওপর আপনার কখনোই বিরক্তি আসবে না, আমার তো এক মুহূর্তের জন্যও বিরক্ত লাগেনি। এত অসাধারণ গল্প সৃষ্টির জন্য বিভূতিভূষণ বন্দ্যােপাধ্যায়কে জানাই সাদুবাদ। তাই বলা যায় বিভূতিভূষণের "আর্দশ হিন্দু -হোটেল " একটি কালজয়ী উপন্যাস,তার অমর সৃষ্টি।
#চরিত্র_বিশ্লেষণ : বিভূতিভূষণ বন্দ্যােপাধ্যায়ের বই গুলোর সবচেয়ে শক্তিশালী দিক হলো তার বইয়ের চরিত্র । তার বইয়ের কিছু চরিত্র আপনার মনে দাগ কেটে যাবেই। আদর্শ হিন্দুর -হোটেল বইয়ের চরিত্র বিশ্লেষণ করতে গেলে প্রথমেই বলতে হবে হাজারি ঠাকুরের কথা। পাঠক বই পড়তে পড়তে অজান্তেই হাজারি ঠাকুরের সুখে দুঃখে নিজেকে হারিয়ে ফেলতে শুরু করবে।হাতের রান্নার জন্য সবার কাছে হাজিরি ঠাকুরের সুনাম থাকলেও মাইনে বারেনি হাজারি ঠাকুরের, বরং দিন রাত পদ্মঝির মুখ ঝামটা সহ্য করতে হয়। হিজারি ঠাকুরের প্রসংশায় মুখরিত ছিল আর্দশ হিন্দু -হোটেল। তবুও মিথ্যা অভিযোগের শিকার হয়ে হারিছেন চাকরি এবং আশ্রয়স্থল।
তার পরে যার চরিত্রের কথা না বললেই নয় সে হলো পদ্মঝি। সবার জীবনেই কিছু মানুষ থাকে যারা অন্যের ভালো থাকা সহ্য করতে পারে না। প্রতি পদে পদে আমাদের বিপদে ফেলাই তাদের অন্যতম কাজ।নিজেদের স্বার্থের জন্য তারা অন্যের ক্ষতি করতে দুবার ভাবে না। পদ্মাঝি তেমনই একজন মানুষ।বই পড়তে পড়তে মনে হবে তাকে চিবিয়ে খেয়ে ফেলতে পারলে ভালো হতো। হাজাারি ঠাকুরকে প্রতিদিন বিভিন্ন রকম ভাবে হেনস্তা করা যেন তার নিয়মিত কাজ। নিজে অপরাধ করে হাজারি ঠাকুরের উপর সব দোষ দিয়ে দেওয়াই তার প্রধান কাজ। এমনই এক অভিযোগ করে আর্দশ হিন্দু হোটেল থেকে হাজারি ঠাকুরকে সে তারিয়ে দিয়েছিল। বিভূতিভূষণ বন্দ্যােপাধ্যায় খুব সুন্দর ভাবে পদ্ম ঝির চরিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন বইয়ে।
বেচু চক্কতির কথা না হয় আমি নাই বললাম। বই পড়তে পড়তে চোখ থাকতে অন্ধ এই লোকের প্রতি আপনার এমনিতেই ঘৃণা চলে আসবে। এছাড়া বইয়ের ছোট বড় সব চরিত্র বইটিকে সার্থক করে তুলেছে।বিভূতিভূষণ বন্দ্যােপাধ্যায় প্রতিটি চরিত্রকে খুব সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন।
#লেখক_পরিচিতি :বাংলা ঔপন্যাসিক, গল্পকার ও প্রাবন্ধিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ তিনি ১৮৯৪ সালের ১২ ই সেপ্টেম্বর পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগণা জেলায় জন্মগ্রহণ করেন ৷ এবং ১৯৫০ সালের ১ নভেম্বর ঘাটশীলায় মারা যান ৷"আদর্শ হিন্দু হোটেল " লেখকের অন্যতম শ্রেষ্ঠ উপন্যাস ৷ তিনি "ইছামতী" উপন্যাসের জন্য মরণোত্তর রবীন্দ্র পুরস্কার পান ৷ লেখক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের "আদর্শ হিন্দু হোটেল " উপন্যাসটি তার অমরর সৃষ্টি।
যারা এখনো কালজয়ী উপন্যাসটি পড়েননি, তারা দ্রুত পড়ে ফেলুন। বই পড়তে পড়তে হারিয়ে যান হাজারি ঠাকুরের রান্নায়।
রিভিউদাতা :তানিয়া ইসলাম জুথি
Read More
Was this review helpful to you?
By Arpit Chowdhury,
29 Aug 2022
Verified Purchase
বাংলা সাহিত্যের ক্লাসিক বিভূতিভূষণের লেখা 'আদর্শ হিন্দু হোটেল'। খুবই সহজ সরল একটি স্বপ্ন আর সেই স্বপ্নপূরণে আশা নিরাশার দোলা - আর দশটা উপন্যাসের চেয়ে স্বাদে বিলকুল ভিন্ন করে দিয়েছে এই উপন্যাসকে।
উপন্যাসের নায়ক হাজারি ঠাকুর, রাণাঘাটে বেচু চক্কোত্তির হোটেলের রাঁধুনি- সহজ সরল ভালোমানুষ, ক্ষেত্রবিশেষে ভীতু ও কাপুরুষও। গল্পের প্রধান ভিলেন পদ্মঝির অন্যায় ও অত্যাচারের সামনে তার গুটিয়ে যাওয়া, জোহুজুরি করা - মাঝেমাঝে পাঠককে রাগিয়ে তুলে বৈকি। তবুও দিনশেষে নিজ সততা ভদ্রতা আর বিশ্বস্ততার গুণে হাজারি ঠাকুর জিতে যায়, ক্রিয়ার বিপরীতে একফোঁটা প্রতিক্রিয়া না দেখিয়েও মধুর প্রতিশোধ নিয়ে নেয় শত্রুদের ওপর। এতেই হাজারির ভালোমানুষির সার্থকতা।
উপন্যাসের মূলে রয়েছে একটি স্বপ্ন। নির্দোষ সহজ সরল একটি স্বপ্ন। হাজারি ঠাকুরের আজন্ম সাধ নিজের একটি হোটেল দেয়ার, যে হোটেলের বাইরে লেখা থাকবে -
" হাজারি চক্রবর্ত্তীর হিন্দু-হোটেল রাণাঘাট ভদ্রলোকের সস্তায় আহার ও বিশ্রামের স্থান। আসুন! দেখুন! পরীক্ষা করুন!!!"
বেচু চক্কোত্তির হোটেলে পদ্ম ঝির খদ্দেরদের পঁচা মাছ খাওয়ানো, ফেন দিয়ে ডাল রাঁধা, ট্রেন ছাড়বার নাম করে খদ্দেরদের আধাপেটে তাড়া দেয়া - এসব হীন কাজ হাজারিকে ব্যথিত করে। তার নিজের হোটেল হবে এসব দোষমুক্ত। নিজ হাতে রাঁধা অমৃত খাওয়াবে সে খদ্দেরদের। খদ্দের মানেই লক্ষ্মী।
নির্দোষ স্বপ্নটি পূরণের জন্য ঠাকুর রাধাবল্লভের পায়ে পড়ে হাজারি। ঠাকুর রাধাবল্লভও তাকে নিরাশ করেননি।
বাংলা সাহিত্যের অধিকাংশ ক্লাসিকই এন্ডিংয়ে এসে পাঠকের মন ভেঙে দেয়। 'আদর্শ হিন্দু হোটেল' সে দিক থেকে ব্যতিক্রম। মাসিক সাত টাকায় শুরু করা হাজারি ঠাকুর শেষমেশ দুশো দুশো চারশো টাকা সম্বল নিয়ে নেমে পড়েন হোটেল ব্যবসায় আর বছর ঘুরতেই তার দুয়ারে লক্ষ্মী এসে ভর করে। আজীবন ভুগে আসা, প্রাপ্য সম্মান থেকে বঞ্চিত হাজারি শেষমেশ হয়ে বসে সকলের শ্রদ্ধা সম্ভ্রমের পাত্র। তার আজীবনের সাধ পূর্ণ হয় - নিজের একটি হোটেল।
উপন্যাসটিতে খুবই চমৎকার কিছু চরিত্রের সন্নিবেশ ঘটেছে। কেউ হাজারি ঠাকুরের সততা আর উদারতায় আকৃষ্ট হয়ে পথের সাথী হয়েছে আবার কেউবা প্রবল হিংসায় তাকে ভাঙতে গিয়ে নিজেরাই ভেঙেচুরে গিয়েছে।
উপন্যাসের অন্যতম নারী চরিত্র কুসুম। বিধবা গোয়ালিনী, হাজারি ঠাকুরের ধর্মের মেয়ে। নিজের বাবার মতই রাঁধুনিকে শ্রদ্ধা করে সে। এতটাই সেই ভক্তি যে - নিজের রুলি গাছা বন্ধক দিয়ে দুশো টাকা পরম বিশ্বাসে তুলে দেয় হাজারির হাতে। হাজারির হোটেল ব্যবসা ফুলে ওঠায় কুসুমেরও ভাগ্য ফিরে যায়।
কুসুমেরই এন্টিথিসিস হলো পদ্ম ঝি, বেচু চক্কোত্তির ডান হাত, হাজারি ঠাকুরের বিভীষিকা। এক ফোঁটা যদি সে দেখতে পারতো হাজারিকে! তার নামে চুরির অপবাদ, কুসুমকে মাছের মুড়ো দেয়ায় নোংরা কটুকথা, পঁচা মাছ হাজারির নামে চালানো, গাঁজাখোর শয়তান বলে অপমান, বারবার মালিকের কান ভারী করা, ডেকচি নিংড়ে হাজারির ভাত তরকারিটুকু কেড়ে নেয়া - হেন হীন কাজ নেই যা পদ্ম করেনি। যতই উপন্যাস এগোয়, পাঠকের মনে ঘৃণার পর ঘৃণার পরত সৃষ্টি করে পদ্ম ঝি। এখানেই বিভূতিভূষণের সার্থকতা। উপন্যাসের খলনায়িকা হিসাবে পদ্ম ঝি সার্থক।
শেষে সেই পদ্ম ঝি ঠিকই পায়ের ধূলো নেয় হাজারি ঠাকুরের। নায়কের কাছে খলনায়কের আত্মসমর্পণ দিয়েই ইতি হয় উপন্যাসের - লেখকের ভাষায় - "...পদ্মদিদি যে আজ তাহার পায়ের ধূলা লইয়া প্রণাম করিল এ সৌভাগ্য হাজারির সকল সৌভাগকে ছাপাইয়া ছড়াইয়া গিয়াছে।"
আরেকজন খলনায়ককে না ভুললেই নয় - সে হাজারির ধূর্ত ব্যবসাদার মনিব বেচু চক্কোত্তি, পদ্ম ঝির কথায় কথায় উঠবস করে যে, কিছু হলেই হাজারিকে জরিমানা আর বেতন কেটে নেয়া। দিনশেষে ধার দেনায় দোকান খুইয়ে পদ্ম ঝির মতই সেও হাজারির আশ্রয়ে।
উপন্যাসের তৃতীয় শক্তিশালী নারী চরিত্র এঁড়োশালা গ্রামের হরিচরণবাবুর সুন্দরী সুশিলা মেয়ে অতসী। আদর্শ হিন্দু হোটেলের মূলধনের বাদবাকি দুশো টাকা তার হাত দিয়েই এসেছিলো। কুসুমের মতই সে হাজারি ঠাকুরের গুণমুগ্ধ। সে উদার, কোমল, নির্লোভ। যদিও তার পরিণতি বিয়োগাত্মক।
এছাড়াও হাজারি ঠাকুরের গুণে মুগ্ধ হয়ে তার পথে পাথেয় হয়েছে অজস্র চরিত্র।
এর মাঝে আছে গোয়ালা পাড়ার সেই সলজ্জ বধূটি, সরল মনে বিশ্বাস করে হাজারিকে একশোটি টাকা গুণে দিয়েছিলো যে।
বংশী ঠাকুর আর তার বেকার অথচ কর্মঠ ভাগ্নে নরেন - যার হাতে মেয়ে টেঁপির হাত তুলে দিয়ে নিশ্চিন্ত হয় হাজারি ঠাকুর, হোটেলের স্বপ্নের পাশাপাশি টেঁপির ভালো জামাই জোটানোর স্বপ্নটাও চলেছে সমান্তরালে।
সন্তান হারানো সম্ভ্রান্ত জমিদার হরিচরণ বাবু। যার উক্তি পাঠকের মনে ভাসে - " ইহকালই দেখলি নে, ভোগ করলি নে, তোদের পরকালে কি হবে বাপু?"
এছাড়াও বেলের বাজারের সেই মুদী দোকানি, শ্রীনগর সিমলে গ্রামের অসহায় বিহারী বাড়ুয্যে, গোপালনগরের কুন্ডুবাড়ির লোকজন, ক্ষুধায় কাতর যতীশ ভটচাজ - এই চরিত্রগুলোও ছোট পরিসরে নিজেদের ভূমিকা রেখেছে।
হাজারি থামেনা, হাজারি দমেনা। শরীরের বয়স ছেঁচল্লিশ হলেও তার মনের বয়স ছাব্বিশেরও কম। কালো একহারা চেহারার ধর্মভীরু এই অনাকর্ষণীয় লোকটির রন্ধনগুণ আর মানুষকে ভালোবাসার ক্ষমতা তাকে আদতেই উপন্যাসের নায়ক করে তুলেছে।
অতসীর বিধবা হওয়া ছাড়া উপন্যাসে তেমন বড় ট্রাজেডি নেই। শেষটা সুখ দিয়েই হয়। টেঁপির সুপাত্রে বিয়ে, পদ্ম ঝি-বেচু চক্কোত্তির আত্মসমর্পণ, কুসুমের ভাগ্য ফেরা, হাজারির রেলস্টেশনে দোকান খোলা আর দেড়শো টাকা মাহিনায় চাকরি - সবমিলিয়ে পাঠক শেষে এসে "প্রায়" তৃপ্ত হন।
চূর্ণী নদীর ধারের ঠাকুর রাধাবল্লভ কাউকেই ফেরাননি। না হাজারিকে, না পাঠককে। তাঁর দয়ায় আর বিভূতির মায়ায় 'আদর্শ হিন্দু হোটেল' তাই হয়ে উঠেছে বাংলা সাহিত্যের এক অবশ্যপাঠ্য ক্লাসিক।
Read More
Was this review helpful to you?
By Onik Hosan,
16 Nov 2021
Verified Purchase
লেখক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলা সাহিত্যে আমার প্রিয় লেখক হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ এই বই। কাহিনি আমাদের সময়ের আগে অবস্থিত কিন্তু তার লেখার ধারণা এতটাই আধুনিক যে আমি যতবার পড়ি ততবার অনুপ্রাণিত হই। এই বইটি নিখুঁতভাবে একজন হাজারী উদ্যোক্তা চেতনার সারমর্ম এবং এটি অর্জনের পিছনে সংগ্রামের সারাংশ ক্যাপচার করে। একজন মানুষের প্রতিবন্ধকতা এবং নিরাশাহীনতার সাথে অবিরাম যুদ্ধ...অবশেষে জীবনের সত্যিকারের যোদ্ধা হিসেবে আবির্ভূত হয়।
Read More
Was this review helpful to you?
By Tanvir Ahmed,
07 Feb 2023
Verified Purchase
বইটি পড়ে খুবই ভালো লাগলো। নিজের কাজের প্রতি অদম্য ইচ্ছা থাকলে সাফল্য আসবেই।
এটা কি অরজিনাল কপি??Questioned by AIVE🌷on 15 Dec, 2024
A:
প্রিয় গ্রাহক, অবশ্যই শতভাগ অরিজিনাল বই আপনি পাবেন। আমরা সবসময় অরিজিনাল বই প্রকাশনী থেকে সংগ্রহ করে থাকি। ধন্যবাদ।
Answered by SG Shamim Ahmedon 15 Dec, 2024
Q:
হার্ড কভার? ?Questioned by meh****om on 30 Sep, 2024