মানুষের কেবল তার অঙ্গপ্রত্যঙ্গ থাকলেই আক্ষরিক অর্থে মানুষ বলার প্রচলন রয়েছে। কিন্তু মানুষকে মানুষ হয়ে ওঠতে অনেক কাঠখড় পোহাতে হয়। নানাধর্মী রূপান্তর প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে যেতে হয়। তাই মানুষের সাংস্কৃতিক এবং মানবিক, রাজনৈতিক রূপান্তর জরুরী হয়ে ওঠে। নানাবিধ যুক্তিবাদ ও যুক্তিবাদিতা যেখানে অপরিহার্য উপাদান হয়ে ওঠে সেখানেই মানুষের রূপান্তরের পথে সকল প্রতিবন্ধকতাগুলো সহায়ক হিসাবে দেখা যায়। শব্দকথা প্রকাশন থেকে প্রকাশিত "নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়" গ্রন্থটিতে ৬১ প্রবন্ধ স্থান পেয়েছে। ১৬০ পৃষ্ঠার বইটিতে লেখক সমাজ, রাষ্ট্র, মহান মুক্তিযুদ্ধে হাওরাঞ্চলের গণহত্যা ও গণমানুষের নানাবিধ সমস্যাগুলো নিখুঁতভাবে প্রকাশ করেছেন। তাঁর জনসচেতনতামূলক প্রবন্ধগুলো নিশ্চয়ই আমাদের ব্যক্তিজীবন, পারিবারিক জীবন ও নাগরিক জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। মানবিক সমাজ গড়ে ওঠার সম্ভাবনাকে একটি সুযোগ হিসাবে ব্যবহারে প্রণোদিত হয় মানুষ। নিষিদ্ধ সম্পাদকীয় প্রবন্ধগ্রন্থে লেখক সাইফুর রহমান কায়েস শুধু যে ব্যক্তির নানাবিধ রূপান্তরের সুচিন্তিত বিশ্লেষণ মননশীল পথ ও পন্থায় তুলে এনেছেন তাই নয় একটি জাতিরও ক্রমবিকাশমান রূপান্তরকরণকে মূল্যবোধের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসাবে তুলে এনেছেন অত্যন্ত নিবিড়ভাবে একজন যুগদ্রষ্টা হিসাবে। ব্যক্তির পাশাপাশি জাতির রূপান্তরকে অস্বীকার করার জো নেই। সাংস্কৃতিক রূপান্তর যদি ঘটে তাহলে অগ্রযাত্রা অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠে। রূপান্তরপ্রক্রিয়ার সমাজমনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ খুব সচেতনভাবেই একজন চিন্তাশীল ব্যক্তি হিসাবে, সমাজরাষ্ট্রের একজন পর্যবেক্ষক হিসাবে বহুমাত্রিক প্রপঞ্চের অবতারণা করেছেন যা সহজেই সকল শ্রেণীর মানুষের চিন্তারাজ্যের অবরুদ্ধতার প্রাচীরগাত্র ভেঙ্গে দিতে সক্ষম বলেই মনে করেন। রাষ্ট্রের ভেতরে রাষ্ট্রহীনতা, বিনাগরিকসুলভ আচরণে জাতির সংক্ষুব্ধতাকে মননে ধারণ করে এগিয়ে গেছেন। গণবিপ্লবী চেতনাকে মনেপ্রাণে লালন করেন বলেই নিষিদ্ধ সম্পাদকীয় গ্রন্থের পেলব শরীরে দ্রোহের বীজমন্ত্র বপন করেছেন। পাঠকের মনে সৃজনধর্মী চিন্তাকে উস্কে দিতেই যেনো তিনি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। তার সাহসী উচ্চারণ জাতিকে আশার আলো দেখাবে।