বিগত দুই বছর ধরে বৈশ্বিক মহামারির সংকটকালে আশাবাদ জাগাতে ও স্বপ্ন-আকাক্সক্ষার প্রতীক ধরে রাখতে প্রতি বছরের মতো ‘পেন্সিল’-এর পঞ্চম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে প্রকাশিত হচ্ছে ‘পেন্সিল ম্যাগাজিন ২০২১’। বাংলা সাহিত্যের পরিচর্যা ও নবীনদের সাহিত্য পরিমণ্ডলসহ সকল সৃজনশীল মাধ্যমের বিকাশ ঘটাতেই ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৬-এ অন্তর্জালে গড়ে ওঠে ‘পেন্সিল’। পেন্সিলকে সৃষ্টি করার আড়ালে উদ্বুদ্ধ হওয়া সকলের চেতনায় আছে বাঙালিত্বের সাধনা, মুক্তিযুদ্ধের অহংকার এবং প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতিচর্চা ছড়িয়ে দেওয়া। শিশু থেকে প্রাপ্তবয়স্ক এবং সকল সদস্যের মাঝে নান্দনিকতা, মানবিকতা ও সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটাতে পেন্সিল নিজ প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। শুধু লিখতে বা গাইতে নয়, মনোযোগী পাঠক হয়ে পড়তে, শ্রোতা হিসেবে শুনতে কিংবা তুলির আঁচড়ে নতুন কিছুর উন্মেষ ঘটাতে পেন্সিলের সদস্যরাও এগিয়ে এসেছে অকুণ্ঠচিত্তে। করোনা অতিমারির কালে যখন সারা বিশ্ব শঙ্কায় ও অনিশ্চয়তায় আক্রান্ত, পেন্সিল এই সময়ে মানসিক স্বাস্থ্য ও সুকুমারবৃত্তি চর্চার জন্য আহ্বান জানিয়েছে প্রতিনিয়ত। ফলে গৃহবন্দি সময়ে অজস্র সদস্য গানে, গল্পে, ছবি আঁকায়, আবৃত্তি ও আলাপনে খুঁজে নিয়েছে নব প্রত্যয়ে বেঁচে থাকার প্রেরণা। এ বছর থেকে ভ্যাকসিন আবিষ্কৃত হলেও ভয়াল সেই ক্ষুদ্র জীবাণুর প্রতি মানবজাতির যুদ্ধ এখনো শেষ হয়নি। তবুও উল্লেখ থাকে যে, একটি বিশেষ কারণে এবারের ম্যাগাজিন পেন্সিলের জন্য অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য। এ বছরটি বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি, অর্থাৎ সুবর্ণজয়ন্তী। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে সাম্যবাদ ও সোনার বাংলার স্বপ্ন দেখেছিলেন সেই দেশটির মাথা উঁচু করে নিশ্বাস নেওয়ার সুবর্ণজয়ন্তী। এক সাগর রক্তের ইতিহাস দিয়ে সৃষ্টি করা এই স্বাধীনতা আমাদের অর্জন। প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ সদস্যের ‘পেন্সিল’ তাই সকল বৈরী পরিবেশের মাঝেও ছড়িয়ে দিতে চায় স্বাধীনতার উত্তাপ। তারই চিহ্নস্বরূপ এবারের বর্ষপূর্তি ম্যাগাজিনে ‘বাংলা, বাঙালি, বাংলাদেশ এবং মুক্তিযুদ্ধ আমার অহংকার’ লোগোটিও ব্যবহৃত হয়েছে। প্রতিবারের মতো এবারের ম্যাগাজিনেও স্থান করে নিয়েছে গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ, পাঠ-প্রতিক্রিয়া, ভ্রমণ, চিঠি এবং রেসিপি, ছবি-গল্পসহ নানান কিছু। পেন্সিলের ম্যাগাজিন সম্পাদনা পর্ষদ চেষ্টা করেছে অজস্র লেখা থেকে বাছাই করে পাঠকের হাতে সবচেয়ে আকর্ষণীয় রূপে ম্যাগাজিনটিকে তুলে দেওয়ার। গত বছরের মতো এবারও ম্যাগাজিনের একটি নান্দনিক প্রচ্ছদ করে দিয়েছেন প্রখ্যাত শিল্পী সোমনাথ ঘোষ। তার প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ। একই সাথে ম্যাগাজিনের বিভিন্ন লেখার অলংকরণ করার মাধ্যমে মিনহাজ আহমেদও আমাদের ঋণী করেছেন। তার এই অলংকরণ রচনাগুলো নান্দনিকভাবে উপস্থাপনে সহায়তা করেছে। সবশেষে একটি নান্দনিক ও আকর্ষণীয় ম্যাগাজিন প্রকাশের প্রয়াসে পাঠকদের অনুকূল সাড়া পাওয়ার প্রত্যাশা রইল। পরিশেষে বলব, স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পূর্তি উপলক্ষে প্রতিটি নিশ্বাসে, মুক্ত চিন্তায়, চেতনায় আমরা স্মরণ করছি এই বাংলার শহিদদের। আমরা তাঁদের ঋণ কখনোই ভুলব না।