পরিবেশের প্রাণ পানি, বায়ু, সবুজ, মাটি। এদের নিয়ে গঠিত প্রতিবেশ এবং তার বাস্তুতান্ত্রিকতা। মানুষ পরিবেশের অন্যতম প্রধান অংশীজন। মানুষের জীবন পানি, বায়ু, সবুজ, প্রভৃতির ওপর নির্ভরশীল। সে অর্থে মানুষ পরজীবী। এই মানুষই পৃথিবীকে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করেছে। পৃথিবীতে মানুষ বৃদ্ধির সাথে সাথে প্রাকৃতিক সম্পদগুলোর উপর চাপ সৃষ্টি হয়েছে। শিল্পবিপ্লবের পর পৃথিবীতে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে। পৃথিবীতে উষ্ণায়ন ঘটেছে। সবুজের ক্রমবিলুপ্তি পৃথিবীর তাপমাত্রা দ্রুত বৃদ্ধি করছে। বাতাসের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাতাসে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। পৃথিবীতে প্রাণ ও উদ্ভিদ প্রজাতির সংকটাপন্নতা সৃষ্টি হয়েছে। দেশে দেশে, অঞ্চলে অঞ্চলে উদ্ভিদ ও প্রাণি প্রজাতির বিলুপ্তি ঘটছে। সাগরের তলদেশ থেকে পর্বতের শৃঙ্গ পর্যন্ত প্রতিবেশে সংকটাপন্নতার সৃষ্টি হয়েছে। পাহাড়ের সবুজ নিঃশেষ হচ্ছে। স্থল-জল-বায়বীয় বাস্তুতান্ত্রিকতা বিলীন হচ্ছে। জল-জলাশয়, হাওর-বাঁওড়, খাল-ঝিল-বিল, নদী, সাগর-মহাসাগর ক্রমান্বয়ে দূষিত হচ্ছে। মাটি, বাতাস, দূষণে ভারাক্রান্ত। বিপন্নতার বিষণ্ণতা সমগ্র বিশ্বকে গ্রাস করে চলেছে। এই বিপন্নতা থেকে ঘন জনগোষ্ঠীর জনপদ-আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিও বাদ যায়নি। জলবায়ুর পরিবর্তন, বৈশ্বিক উষ্ণায়ন প্রিয় মাতৃভূমিকে বিপন্নতার দিকে নিয়ে যাচ্ছে। আমাদের প্রচলিত জীবনাচার, দৈনন্দিন কার্যক্রম, আহার-বিহার, চলা-বলা, ভোগবিলাস, ক্রিয়াকর্ম আমাদের পরিবেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। অনিশ্চিত করে তুলছে আমাদের আজ ও আগামী প্রজন্মের ভবিষ্যৎকে। আগামী প্রজন্ম অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে যাত্রা করেছে। বৈশ্বিক এ বিপদাপন্নতা কাটিয়ে উঠতে হবে। পৃথিবীকে আজ ও আগামীর জন্য বাসযোগ্য রাখতে হবে। প্রজন্মের ভবিষ্যৎকে আপদমুক্ত রাখতে হবে। বৈশ্বিক উষ্ণায়নকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। প্রাকৃতিক মূলধনগুলোকে সংরক্ষণ ও আপদমুক্ত করতে হবে। সে প্রচেষ্টার অংশ হিসাবে পরিবেশ নিয়ে, পরিবেশের বিপর্যয় নিয়ে, পানি, বাতাস, মাটি, নদী, পাহাড়, সবুজ নিয়ে ‘বিপন্ন পরিবেশ অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ’- বইটিতে জাগরণের ধ্বনি তোলা হয়েছে। আজ এবং আগামীর প্রজন্ম বইটি থেকে পরিবেশ সংরক্ষণের এতটুকু ধারণা পেলেও সার্থক হবে প্রচেষ্টার- এই প্রত্যয় আমার। পরিবেশের প্রতিটি অংশীজনের জন্য বিশুদ্ধ পরিবেশ, নিরাপদ ভবিষ্যৎ, প্রত্যাশার জীবনাচার একান্তভাবে কামনা করি। মুহাম্মদ ইদ্রিস আলী জুলাই ২০২১খ্রি. চট্টগ্রাম