বাংলাদেশ ব্রিটিশ শাসনাধীনে আসার পর মুসলমান সমাজে ব্যাপক পরিবর্তন সূচিত হয়। আধুনিক শিক্ষা গ্রহণে অনীহা, রাজনীতিক চেতনার অভাব, অর্থনীতিক সমৃদ্ধি-সাধনে সচেষ্ট না হওয়া, অজ্ঞতা, কুসংস্কার, মুসলমান জমিদার শ্রেণির ভোগ-বিলাসিতা ও অমিতব্যয়িতা, হিন্দু-সম্প্রদায়ের সঙ্গে সু-সম্পর্কের অভাব, ধর্মহীনতা, অতীতমুখিতা, কাটমোল্লাদের দৌরাত্ম্য, গতানুগতিক মাদ্রাসা শিক্ষা, মাতৃভাষা-সাহিত্য ও সংস্কৃতি-চর্চা থেকে দূরে থাকা প্রভৃতি কারণে এ সময় থেকে মুসলমান সমাজে অবনতি ও অধঃপতন দেখা যায়।১ এই সকল অবক্ষয়ী মূল্যবোধের অপচ্ছায়া দূর করে মুসলিম সমাজ-মানসে জাগরণ সৃষ্টির লক্ষ্যে বিশ শতকের প্রথম দিকে ঢাকায় জন্ম নেয় আলোড়ন সৃষ্টিকারী প্রতিষ্ঠান মুসলিম সাহিত্য-সমাজ। বাঙালি মুসলমান সমাজে প্রগতিশীল ও আধুনিক চিন্তাধারা বিকাশের ক্ষেত্রে সংগঠনটি পথিকৃতের ভূমিকা পালন করে। মুসলিম সাহিত্য-সমাজের মূলমন্ত্র ছিল ‘বুদ্ধির মুক্তি’। সমাজের সভ্যরা ‘বুদ্ধির মুক্তি’ আন্দোলন গড়ে তুলেন। আবুল হোসেন, কাজী আবদুল ওদুদ, কাজী মোতাহার হোসেন, আনোয়ারুল কাদির, শামসুল হুদা প্রমুখ মনীষী ছিলেন এ আন্দোলনের প্রাণপুরুষ।২ এখানে উল্লেখনীয় যে, আবুল ফজল ছিলেন বৈবাহিক সূত্রে মাহ্বুব-উল আলমের পরিবারের সদস্য। পারিবারিক পরিম-লের উদার-ঐতিহ্যের পাশাপাশি এই সমাজের অসাম্প্রদায়িকতা, উদারতা ও মুক্তবুদ্ধির চর্চা আবুল ফজলের মতো মাহ্বুব-উল আলমও ধরে রেখেছিলেন আজীবন যদিও তিনি এ-সমাজের প্রত্যক্ষ সদস্য ছিলেন না।