অর্থ-সম্পদ জীবনের প্রয়োজন মাত্র। অর্থ ও সম্পদ জীবনের প্রয়োজন মেটাতে বা ব্যক্তির মনে শান্তি সৃষ্টি করিতে পারে কিন্তু অর্থ ও সম্পদ মানুষের জীবনের একমাত্র লক্ষ্য বলিয়া গণ্য হইতে পারে না। বিদেশে কাজ করিলে লক্ষ লক্ষ টাকা রোজকার করার সুযোগ থাকে কিন্তু বিদেশে সময় ব্যয় করিয়া বই লেখা সত্যিই বড় দুঃসাধ্য, তাও আবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের মতো মহান ব্যক্তিত্বকে লইয়া লেখা যেন আরও দুঃসাধ্য। তবে তাহা কেবলমাত্র সম্ভব হইয়াছে বঙ্গবন্ধুর প্রতি আমার অগাধ শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা এবং অর্থকে জীবনের একমাত্র লক্ষ্য হিসাবে গণ্য না করা। জাতির পিতা একজনই হয়, একবারই হয়, আর হয় না, আর হইবেও না। সুতারং স্বল্পজ্ঞানে তাঁহার মতো উঁচুমানের নেতাকে লইয়া বই লেখাও একটা ভাগ্যের ব্যাপার বলিয়া আমি মনে করি। কিছু বন্ধুবান্ধব আছে যাহারা সবসময়েই আমার লেখায় অনুপ্রেরণা জোগাইয়াছে, তাহারা ধৈর্য্য ধরিয়া আমার লেখা শুনিয়াছে, নানা মন্তব্য প্রদান করিয়া সাহায্য করিয়াছে। আবার কিছু কিছু বন্ধু আছে যাহারা আমার লেখা-লেখিতে ঈর্ষান্বিত হইয়া দূরে সরিয়া গিয়াছেন। দূরে সরিয়া যাওয়া বন্ধুদের আচারণে লেখা-লেখিতে আমার জেদ আরও দ্বিগুণ বাড়িয়া গিয়াছে। তবে ভিয়েনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত আমার বড় ছেলে শেখ রাফি যে, সে সব সময় আমাকে অর্থের জন্য বই লিখিতে নিষেধ করিয়া বলিয়াছে বাংলাদেশের মানুষের জন্য নির্মোহভাবে লিখিয়া যাও। তাঁহার এই অনুপ্রেরণা আমার লেখায় শক্তি জোগাইয়াছে। আমার স্ত্রী তাঁহার কাছেও আমি ঋণী, যে চাকরি করিয়া আমায় লেখার সুযোগ করিয়া দিয়াছে। তাহা ছাড়াও আমার শ্রদ্ধেয় অগ্রজ রাজবাড়ি মুক্তিযুদ্ধের কমান্ডার ডাঃ কামরুল হাসান লালি, আমার বন্ধু বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপকমিটির সহ-সম্পাদক এসএম জাকির হোসেন (যশোরের প্রয়াত সাবেক সাংসদ খান টিপু সুলতানের ভাগিনা) এবং আমার প্রিয় অনুজ গ্রন্থিক প্রকাশনার স্বত্বাধিকারী রাজ্জাক রুবেলসহ অনেকের কাছেই আমি ঋণী। কারণ তাহাদের সাহায্য সহযোগিতা ছাড়া বিদেশে থাকিয়া বই প্রকাশ করাও বেশ কঠিন। তাহাদের সবার প্রতি রইল আমার কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসা। গ্রিক সিফালাসের মতে, ‘কথায় ও কাজে সততাই হচ্ছে ন্যায়।’ রাজনীতিতে বঙ্গবন্ধুর কথায় ও কাজে সত্যতা ছিল, তাই তিনি ছিলেন একজন উঁচুমানের রাজনৈতিক দার্শনিক, সৎ ও ন্যায়পরায়ণ শাসক।। শূন্যহস্তে দেশ শাসনে তাঁহার ভুল থাকিতেই পারে কিন্তু তাঁহার শাসনামলের সাফল্যের পরিবর্তে যাহারা তাঁহার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপ্রশংসা চালাইয়া তাঁহার সকল সাফল্যকে আড়াল করিয়া কলঙ্কিত করিতে চাহিয়াছে তাহারা ইতিহাসে বিচারের কাঠগোড়ায় চিরদিন আসামি হইয়া থাকিবে। দেবতার জ্ঞানে বা অজ্ঞানে নয় বরং সত্য ও যুক্তির জ্ঞানে চেষ্টা করিয়াছি বঙ্গবন্ধুর শাসনামলের সাফল্য ও ব্যর্থতার ইতিহাস নিরূপণে। আল্লাহ সবসময়েই সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে। সুতরাং বাংলাদেশের ইতিহাসেও বঙ্গবন্ধুর অবদান সত্য ও ন্যায়ের ওপর প্রতিষ্ঠা পাক।