জাতীয় জীবনের এমন এক মাহেন্দ্রমুহূর্তে এই কবিতাসমগ্র প্রকাশিত হচ্ছে যখন আমরা উদ্যাপন করছি জাতিরাষ্ট্রের স্থপতি বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ, মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং অতি-আসন্ন ভাষা আন্দোলনের সত্তর বছর ।তারিক সুজাতের কবিতাভুবন তো এই স্মৃতি-সন্তা-ভবিষ্যতের কাব্যিক আলেখ্য—বাংলাদেশের গর্বিত ইতিহাসের শৈল্পিক সন্দর্ভের মিলিত রসায়ন । অক্ষর তাঁর কাছে কেবল অক্ষর নয়, সুরেলা কবচ।শব্দ এই কবির প্রাণপঙ্খি, মনময়ূরী। তাই তাঁরকবিতা হয়ে ওঠে নির্মাণের অধিক সৃষ্টি প্রাণপ্রকৃতির, মহাবিশ্বের মায়ালু কূজনকে তিনি প্রেম-প্রতিবাদ-প্রতিরোধের অবয়বে সংকলন করে চলেন। তাঁর জনচেতনার কাব্যগাথা যেমন প্রতিবাদের প্রগাঢ় উচ্চারণে দৃঢ় হওয়া সত্ত্বেও স্লোগান হয়ে ওঠে না তেমনি তাঁর ভালোবাসার কবিতাও সমষ্টিসংকল্প-রহিত নয়। উভয় সড়কের তিনি স্বচ্ছন্দ সওয়ারি। বোমায় বিধ্বস্ত বাস্তব আর বকুলঘ্রাণের স্বপ্নকে তিনি সমান্তরালে তাঁর কবিতার কেন্দ্র করে তুলেন।প্রিয় পাঠকের কাছে কবির নম্বরক্তিম নিবেদন- “ব্যক্তিগত কিছু নেই যা ছিল অন্তরে তার দাঁড়ি, কমা, চন্দ্রবিন্দু আগেই উজাড় করে দিয়েছি। রোদের বুননে লেখা দুপুরের পাণ্ডুলিপি পাচটি আঙুল তুলে অনন্তকে ডাকে।” কবিতার এই অনন্তভ্রমণে আপনাকে স্বাগত।
জন্ম ১৯৬৫-র ১০ সেপ্টেম্বর, ঢাকায়। কবি-লেখক-ভাষাসংগ্রামী বহুদর্শী পিতা তােফাজ্জল হােসেন ও মা হােসনে হেনা হােসেনের দ্বিতীয় সন্তান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এম.এস.এস। কাব্যগ্রন্থ প্রতিবিম্ব ভেঙে যাও (১৯৮৬), যাবাে বলে থেমে থাকতে নেই (১৯৯৭), সময়কে আমি উল্টো পায়ে হেঁটে যেতে দেখেছি। (২০০৩), আকাশপুরাণ (২০০৯), কবিতাসংগ্রহ ১ (২০১৩), সবুজে ধুয়েছি পা (২০১৫), নির্বাচিত ১০০ কবিতা (২০১৫), জন্মের আগেই আমি মৃত্যুকে করেছি আলিঙ্গন (২০১৬), ছিন্নডানার মানুষপাখি (২০১৭), কবিতাসংগ্রহ ২ (২০১৭), নির্বাচিত কবিতা (২০১৮), কালের ক্যাসিনাে | (২০১৮), বসন্তের বাতাসটুকুর মতাে (২০১৮), পা বাড়াই প্রাণের পথে (২০১৮), যা, ভেসে যা (২০১৮) বেরােনাে ছাড়াও তাঁর সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়েছে অকালপ্রয়াত কবি আবুল হাসান-এর গল্পসংগ্রহ ও কাব্যনাটক ওরা কয়েকজন। বাংলাদেশের অনভিপ্রেত দীর্ঘ সামরিক স্বৈরশাসনকালে নিষিদ্ধ ঘােষিত একাধিক পত্র-পত্রিকা সম্পাদনা ও প্রকাশনার ক্ষেত্রেও তারিকের কৃতিত্ব প্রশ্নাতীত। সাংস্কৃতিক আন্দোলনে দেশের তারুণ্যশক্তির একনিষ্ঠ সংগঠক, এদেশের কবিদের প্রধান সংগঠন জাতীয় কবিতা পরিষদ-এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের অন্যতম। বর্তমানে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক। কর্মজীবনেও সৃজনশীল পেশায় নিয়ােজিত। খ্যাতনামা ইন্টেরিয়র, গ্রাফিক ডিজাইন | ও প্রকাশনা সংস্থা জানিম্যান-এর কর্ণধার।। | প্রযুক্তিনির্ভর নিউ মিডিয়াসহ গণমাধ্যমের বিভিন্ন শাখায় সক্রিয় তারিক সুজাত দৈনিক ভােরের কাগজ ও দেশটিভি’র পরিচালনার সঙ্গেও যুক্ত। | গ্রাফিক ডিজাইনের জন্য ইতােমধ্যে দুটি আন্তর্জাতিক পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেছেন। গােথেনবার্গ বইমেলায় ২০১৭ সালে সুইডিশ আর্ট কাউন্সিলের আমন্ত্রণে ফেলােশিপ প্রােগ্রামে অংশগ্রহণ। কবিতার জন্য ২০০৬ সালে পেয়েছেন ভারতের ‘কৃত্তিবাস’ পুরস্কার ও ২০১৭ সালে প্রথম আলাে পুরস্কার, ২০১৮ সালে পেয়েছেন। ‘সিটি-আনন্দ আলাে পুরস্কার।