কোরআন মহাবিস্ময়কর বিজ্ঞানময় গ্রন্থ যা মহাপ্রজ্ঞাময় প্রশংসিত মহান আল্লাহ জিবরাঈল (আ)-এর মাধ্যমে সুদীর্ঘ ২৩ বছরে মানবজাতির হেদায়েত হিসেবে রাসূলূল্লাহ (সা)-এর উপর অবতীর্ণ করেছেন। এই মহাপবিত্র গ্রন্থটি আল্লাহর বাণীর অপূর্ব এক সমাহার ও সর্বপ্রকার জ্ঞান-বিজ্ঞানের উৎস। জ্ঞানীদের জন্য উপদেশ ও হেদায়েত স্বরূপ। অবিনশ্বর ও চিরন্তন অলৌকিকতায় ভরপুর। মানবজাতিকে কল্যাণের অশেষ ধারায় সিক্ত করতে সক্ষম। দৃশ্যমান ও অদৃশ্যমান জগতের মধ্যে যোগাযোগের মাধ্যম। জীবন চলার পথের সকল অন্ধকার বিদূরিত করার এক অনবদ্য নির্দেশিকা। মানবজাতির মানসিক সংশয়, সন্দেহ, অস্পষ্টতা, কুপ্রবৃত্তি, লোভ-লালসা নামক নানারকম দৈহিক ও মানসিক রোগ-ব্যাধি, বেদনা, কষ্ট-ক্লেশ নিরাময়ের অব্যর্থ মহৌষধ। সত্য-মিথ্যা এবং বৈধ-অবৈধের সীমারেখা নির্ধারণের এক সুউচ্চ মাইলফলক। দুনিয়া ও আখিরাতের সুখ-সমৃদ্ধ জীবনের বিশ্বস্ত ঠিকানা। পশ্চাদপদতা, দুর্ভাগ্য ও হতাশার গ্লানি থেকে মুক্তির অনুপম গাইড লাইন। এখানে মানবজাতির শিক্ষার জন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যেমন মানব ইতিহাসের বিভিন্ন পর্যায়ে ঘটে যাওয়া ঘটনাবলি গুরুত্বের সাথে উল্লেখ করেছেন; সত্যের পথে ঐ সব মহান মানবদের দৃঢ়চিত্ত সংগ্রামের হৃদয়গ্রাহী বর্ণনা করে মানবজাতির সামনে সত্য, ন্যায় ও সুন্দরের অনুপম মানদÐ উপস্থাপন করেছেন; বর্ণনা করেছেন তাঁদের দুনিয়ার জীবনের তিক্ত বাস্তবতা এবং আল্লাহর উপরে অকুণ্ঠ নির্ভরতার সমন্বয়ে সৃষ্ট এক অতুলনীয়, অনুপম ও অভাবনীয় জীবন্ত কাহিনী। তেমনি উল্লেখ করেছেন এই মহাগ্রন্থ হেফাজতের বিস্ময়কর ব্যবস্থাসমূহ ও অনুরূপ একটি গ্রন্থ প্রণয়ন বা আনয়নের জন্য জ্বীন ও ইনসানের অবিশ্বাসী সমাজের প্রতি চ্যালেঞ্জ। কোরআনে রয়েছে মানুষ, জ্বীন ও ফেরেশতা সৃষ্টিত্বত্তের সঠিক ইতিহাস; রয়েছে আসমান-জমিন, চন্দ্র, সূর্য, গ্রহ-উপগ্রহ, নক্ষত্ররাজী, পাহাড়-পর্বত, সাগর-উপসাগর, নদী-নালা, পশু-পাখি, উদ্ভিদ-তরুলতাসহ প্রতিষ্ঠিত আধুনিক বিজ্ঞানের অসংখ্য সৃষ্টি তত্তে¡র ইতিবৃত্ত যা কোরআনের প্রতিটি বৈজ্ঞানিক তত্তে¡র সাথে সামঞ্জস্যশীল; রয়েছে চিন্তাশীলদের জন্য বিশ্বজাহানের বিভিন্ন স্থানে ও সৃষ্টির বিভিন্ন প্রজাতির মধ্যে অসাধারণ ঘটনা, আল্লাহর অসীম ক্ষমতা ও অনুগ্রহের অসংখ্য নিদর্শন। এমনি ধরনের আরও অসংখ্য ও কল্পনাতীত বিষয়াবলির বর্ণনা রয়েছে আল- কোরআনে। এ সমস্ত ঘটনা সম্পর্কে বিশ্ব জাহানের প্রভু মহান আল্লাহ নিজেই বলেছেন, যার মধ্যে বিন্দু মাত্র সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। কোরআনের এ ঘটনাগুলো পাঠক যতই পাঠ করতে থাকবে তার মধ্যে ততই অনুধাবনের আকাঙ্খা ও অফুরান শান্তি বিরাজ করবে, আর পাঠক শ্রোতার জীবনে সৃষ্টি হবে সর্বাবস্থায় আল্লাহর উপরে ভরসা ও তাঁর নিকটে আত্মসমর্পণের প্রেরণা। কোরআনে বর্ণিত ঘটনা থেকে আমরা শিক্ষা পাই, যে সকল জাতি নবীদেরকে হত্যা ও দেশান্তরী করেছে, তারপর সে জাতি আর বেশি দিন সেস্থানে টিকে থাকতে পারেনি। এরপর হয় আল্লাহর আযাব তাদের ধ্বংস করে দিয়েছে অথবা কোনো শত্রুভাবাপন্ন জাতিকে তার ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে কিংবা সেই নবীর অনুসারীদের দ্বারা তাকে বিপর্যস্ত ও বিজিত করা হয়েছে। সূরা বনী ইসরাঈলের ৭৬-৭৭ আয়াতে আল্লাহ তাঁর এই স্থায়ী কর্মপদ্ধতির উল্লেখ করেছেন। আর তিনি বলেছেন তাঁর কর্মপদ্ধতিতে কোনো পরিবর্তন নেই। সকল নবীর ব্যাপারে আল্লাহ এ একই পদ্ধতি অবলম্বন করেছেন। তাই সত্যের অস্বীকারকারীরা সর্বযুগেই নিন্দিত ও ধিকৃত হয়েছে। পক্ষান্তরে নির্যাতিত হওয়া সত্তে¡ও ঈমানদারগণ সর্বযুগে নন্দিত ও প্রশংসিত হয়েছেন এবং জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে আল্লাহর অনুগ্রহে বিজয় লাভ করেছে যা সত্যের অনুসারীদের জন্য প্রেরণা। মানব ইতিহাসে এ দৃশ্য বারবার সামনে এ গেছে। যখনই অহী ও রিসালাতের জীবনবারি এ পৃথিবীতে পৌঁছেছে তখনই মানবতার উদ্যান ফুলে-ফলে সুশোভিত হয়েছে। জুলুম-নিপীড়নের জায়গায় ইনসাফ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ফাসেকী ও অশ্লীলতার জায়গায় নৈতিক ও চারিত্রিক মাহাত্মের ফুল ফুটেছে। নবীদের আগমন সবসময় একটি শুভ ও কল্যাণকর চিন্তা ও নৈতিক বিপ্লবের সূচনা করেছে। আর যখনই এ দুনিয়া এ কল্যাণ সুধা থেকে বঞ্চিত হয়েছে তখনই মানবতা বন্ধ্যা হয়ে গেছে এবং চিন্তা ও নৈতিকতার ভূমিতে কাঁটাগুল্ম উৎপন্ন হয়েছে। নবীদের নির্দেশাবলি প্রত্যাখ্যান করে প্রত্যাখ্যানকারীরা সব সময়ই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাই আল্লাহ স্বীয় অনুগ্রহে বিগত জাতিগুলোর নৈতিক দুর্বলতা, ধর্মীয় বিভ্রান্তি এবং বিশ্বাস ও কর্মের গলদগুলোর প্রতিটির দিকে অংগুলো নির্দেশ করে তার মোকাবিলায় আল্লাহর সত্য দ্বীনের দাবীসম‚হ বর্ণনা করেছেন। মানবজাতিকে রক্ষা করাই যার লক্ষ্য। কোরআনের ঘটনাবলি এদিকেই ইশারা করেছে যেন তারা এ থেকে শিক্ষা নেয়। যাতে তারা পরিষ্কারভাবে নিজেদের পথ দেখে নিতে পারে এবং ভুল পথ থেকে দ‚রে থাকতে সক্ষম হয়। এই ক্ষুদ্র গ্রন্থে কোরআনের শিক্ষনীয় কিছু ঘটনার সঠিক তথ্য সুন্দর ও সাবলিল ভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে।