১৯৭৪—৭৫ সাল। বাঙলাদেশের রাজনীতি ছিল দেশী—বিদেশী ষড়যন্ত্রের কবলে। সদ্য স্বাধীনতা প্রাপ্ত যুদ্ধ বিধ্বস্ত রাষ্ট্রটির পুর্নগঠনে স্বাধীনতা বিরোধী বিদেশী শক্তির বাধা বিপত্তি ছাড়াও দেশীয় পরাজিত শক্তি মাথাছাড়া দিয়ে উঠেছিল। উন্নয়ন সমৃদ্ধি ও জাতীয় অগ্রযাত্রা রূখে দিতে তাদের গোপন পরিকল্পনা রাষ্ট্রীয় কার্যক্রমকে ব্যহত করার জন্য নানামুখী ষড়যন্ত্র চক্রান্তে পরিপূর্ণ ছিল। চুয়াত্তরে অতিবৃষ্টি, খরা, ভয়াবহ বন্যা ছাড়াও কৃত্রিম দুর্ভিক্ষ সৃষ্টির জন্য ব্যবসা সংকট ক্সতরী, বিদেশের মাটিতে বসে দেশ বিরোধী অপশক্তির ষড়যন্ত্র, গুপ্ত হত্যা, কালোবাজারী, অ‣বধ মজুতদার, অতিরিক্ত মুনাফা লোভী মহাজনদের কোটিপতি হওয়ার আকাশচুম্বী স্বপ্ন, লুটেরা শ্রেণীর ক্সনরাজ্য, সন্ত্রাস, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি, সাম্রাজ্যবাদী চক্র কতৃর্ক খাদ্য সংকট সৃষ্টি জনজীবনকে তাৎক্ষণিক দুর্বিষহ করে তোলে। ক্ষমতার উচ্চাকাঙ্ক্ষী একদল বিপথগামী সামরিক, বেসামরিক ব্যক্তিবর্গের অপতৎপরতা সেনা প্রধানের ব্যর্থতা গোয়েন্দা সংস্থার উদাসীনতার কারণে ১৯৭৫ সালের আগষ্ট মাসে মানবেতিহাসের নিষ্ঠুরতম হত্যাযজ্ঞ বিশ্ব বিবেককে হতবাক করে তোলে। নিরপরাধ নারী শিশুসহ স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে নিবেদিত জাতীর গৌরব গাঁথা ইতিহাসের মহানায়ক ও তার পরিবারবর্গকে জীবন দিতে হয় তাদের ত্যাগে শ্রমে অর্জিত স্বদেশের স্বাধীন মাটিতে। এ হৃদয় বিদারক নিষ্ঠুর হত্যাকান্ড সম্পর্কে শেখ রাসেলকে স্বপ্নযোগে পূর্বাভাস দেওয়া হয়। বইটি লেখকের প্রতি স্বপ্নাদেশ, শেখ রাসেলের স্বপ্ন, জ্যোর্তিষির স্বপ্ন ব্যাখ্যা ও শেখ রাসেলের প্রার্থনা এ চারটি স্তরে সাজানো রয়েছে। শ্রুতি মাধুর্য রক্ষার্থে উহার প্রবাহমানতা অক্ষুন্ন রাখা হয়। কবিতায় এসব দৃষ্টান্ত সবিস্তারে চয়ন করা হয়। এখানে আরও রয়েছে শেখ রাসেল কতৃর্ক স্বীয় মাতা—পিতা, ভ্রাতা, ভ্রাতৃ—বধুসহ স্বজন প্রিয়জনদের জন্য বিষাদময় শোক, রক্তাক্ত দৃশ্যচারণ ও নিহতদের জন্য প্রার্থনা। তাছাড়া শিশু রাসেল কতৃর্ক স্বীয় মৃত্যুর পূর্বাভাস এবং এই কোমলমতি শিশুর হত্যা ও রক্তাক্ত রাতের যবণিকা সুনিপুন ভাবে তুলে ধরা হয়েছে। এই লেখায় শোক গাঁথা কে স্থাপন ও পুনঃস্থাপন করা হয়। শব্দ বিন্যাস, চরিত্র সৃষ্টি, শোক, প্রার্থনা প্রভৃতি মর্মস্পর্শী ভাষায় উপস্থাপন করা হয়। কাব্যিক সে․ন্দর্য অক্ষুণ্ণ রাখার জন্য কোন কোন চরণে দু’একটি মাত্র সংযোজন ও বিয়োজন করা হয়। তারকা চিহ্নিত নামগুলো সাধারণ তন্ত্র ও উহার পূর্ববর্তী সময়কালে মহামানব হযরত মুহাম্মদ (স) ও তাঁর মহা মণিষীদের। বিশেষ দৃষ্টান্ত হিসেবে ঐগুলো গ্রহণ করা হয়। সম্মানজনক এসব নাম ব্যবহার করার সময় আশীর্বাদ ও আশীর্বাদ সূচক চিহ্ন সংযোজন ও উচ্চারণ করার বিধান থাকলেও কবিতার ছন্দ বিন্যাসে সৌন্দর্য ক্ষুণ্ণ হবে বিবেচনায় এখানে তা ব্যবহার করা হয়নি।