লেখকের কিছু কথা– ১৯০৬ সাল থেকে রচিত মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণাদায়ী ক্ষুরধার গানগুলো নিয়ে কাজ করার তীব্র অনুভবে তাড়িত হই। গান নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক পড়ালেখা না-করার অভাব থেকে এ গবেষণার জন্ম। সুযোগ আসে ২০০৯ সালে। তা অবশ্য কিছু দূর এগোনোর পর শেষও হয়ে যায়। ২০১৩ সালের ডিসেম্বর মাসে আবার কাজটি শুরু হয় সরকারি অর্থায়নে। তখন নতুন করে সাজাই ফেলোশিপ গবেষণার সূচিপত্র। আগে চেয়েছিলাম সময়ক্রমে গবেষণা কাজটা করতে; পরে ‘মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা সংগ্রামে প্রেরণা-সৃষ্টিতে দেশাত্মবোধক গানের ভূমিকা (১৯৪৭-৭১)’ গবেষণার অধ্যায় বিভাজন করি— ভূমিকা, দেশাত্মবোধক গানের পটভূমি, ১৯৪৭-৫২ সনের ভাষা আন্দোলন পর্বের গান, ১৯৬৯-৭০ সনের গণ-অভ্যুত্থান পর্বের গান এবং ১৯৭১ সনে স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ পর্বের গান। তবে শেষের পর্বটিতে তিনটি সেমি-পর্ব যুক্ত হয়—প্রেরণামূলক বঙ্গবন্ধুর গান, সংগ্রামে-সংগীতে নারীর অবদান এবং স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের গান। গ্রন্থটিতে ভাষা সৈনিক আবদুল মতিন এবং নজরুল স্বরলিপিকার সুধীন দাস এবং বিশিষ্ট গণ সংগীতশিল্পী শুভেন্দু মাইতি (যিনি স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অর্থ সংগ্রাহক ছিলেন)—তিন বিশিষ্ট জনের সাক্ষাৎকার সংযোজিত হয়েছে। প্রায় ৯০০টি দেশপ্রেরণামূলক গানের তালিকা দেয়া হয়েছে। গবেষণার দীর্ঘ পথে অনেক বাঁধার সম্মুখীন হই। তবে ধৈর্য ধারণ করে সবটা সহ্য করেছি; গবেষণা কর্মের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে। পরম করুণাময়ের অপার কৃপায় কাজটি শেষ করতে পেরেছি। তিনি সর্বোতভাবে সাহায্য করেছেন; সে প্রমাণ প্রতি মুহূর্তেই পেয়েছি। বাকিটা বিবেচনার ভার সম্মানিত পাঠকদের। ফেলোশিপ গবেষণাটির প্রকল্প পরিচালক হিসেবে সার্বিক দায়িত্বে ছিলাম আমি। যাদের আন্তরিকতা, সহযোগিতা পেয়েছি, তারা হলেন— শ্রী গোবিন্দলাল দাস, শ্রী করুণাময় অধিকারী, জনাব ড. মূহ: আব্দুর রহীম খান, লিপিকা ভদ্র, সঞ্জয় কুমার বণিক, মল্লিকা দাস, ড. সাইম রানা, ড. সেলুবাসিত, ড. মোহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন (গিয়াস শামীম), ড. রঘুনাথ ভট্টাচার্য, আবদুল মতিন, সুধীন দাস, শুভেন্দু মাইতি, মোবারক হোসেন খান, সেলিম রেজা প্রমুখ সুহৃদগণ। সবাইকে কৃতজ্ঞ-চিত্তে স¥রণ করছি। সময়ে-অসময়ে নানা প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয় যাদের, তারা হলেন আমার পূজনীয় শিক্ষক—ড. সাঈদ-উর রহমান এবং অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক। গবেষণা কাজটির মূল্যায়ন করেছেন আমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষক অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক। তার আশীর্বাদকে ভক্তি জানাই। ‘মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা সংগ্রাম’-এ প্রেরণাদায়ী গানগুলোর যাদুমন্ত্রে যুদ্ধ জয়ের নেশায় বীর বাঙালি দুর্বার গতিতে ছিনিয়ে এনেছে স্বাধীনতা। সেই গানগুলোর পটভূমি এবং গানগুলো সম্পর্কে সকলে জানতে পারবেন যার সহযোগিতা, সহমর্মিতায় তিনি—অনুপ্রাণন প্রকাশনের সত্ত্বাধিকারী আবু এম ইউসুফ ভাই। এই ফেলোশিপ গবেষণা ও সমীক্ষা ধর্মীগ্রন্থটি অনুমোদন ও প্রকাশের উদ্যোগ নেবার জন্য তার প্রতি অপরিসীম আন্তরিকতা প্রকাশ করছি। ২০২০ সালের বইমেলার বই-প্রকাশনার সীমাহীন ব্যস্ত সময়ের মধ্যেও গ্রন্থটির নামকরণ করে তিনি কৃতজ্ঞাপাশেবদ্ধ করেছেন। ড. শিল্পী ভদ্র ঢাকা।
ড. শিল্পী ভদ্র, ফরিদপুরের চকবাজার, থানারােডে জন্ম। বেড়ে ওঠা সম্রান্ত, সহৃদয়, ব্যক্তিত্ববান পিতামহ শ্রী চুনীলাল ভদ্রের পারিবারিক আবহে। ছেলেবেলা থেকে সাংস্কৃতিক পরিম-লে বেড়ে ওঠেন। বাবা শ্ৰী জিতেন্দ্রনাথ ভদ্র সুগায়ক, পৃষ্ঠপােষক, সঙ্গীতানুরাগী, রসবােদ্ধা, কুসংস্কার মুক্ত, উদার-হৃদয়ের এবং মা রমা ভদ্রের একনিষ্ঠ সংগীত-শ্রোতা। লেখাপড়ার পাশাপাশি গান, নাচ, তবলা, নাটক - এগুলাে ‘ভদ্র বাড়ির প্রায় প্রতিদিনের রবটিন। মহাকালি পাঠশালা’ এবং আদর্শ বালিকা বিদ্যালয়ে লেখাপড়া শুরব। এরপর ‘সরকারী সারদা সুন্দরী মহিলা কলেজে অধ্যয়ন। স্কুল-কলেজ- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নাচ, গান, কবিতা, ছােটগল্প লেখা-বিষয়ে অনেকবার পুরস্কৃত হন। তিনি ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে ভর্তি হয়ে স্নাতক সম্মান, মাস্টার্স এবং এম.ফিল.ও পি-এইচ.ডি. ডিগ্রী লাভ করেন। মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ডিগ্রী কলেজে’ দীর্ঘদিন শিক্ষকতা করেন। সঙ্গীত শিক্ষাগুরব শ্ৰী করবণাময় অধিকারীর তত্ত্বাবধানে শাস্ত্রীয় সঙ্গীত, নজরবল গীতি, ভক্তিগীতির পাঠ নেন। ঢাকার ছায়ানটের নজরবল শাখার শিক্ষার্থী ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনে গবেষণা; বর্তমানে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অধীনে ফেলােশিপ-গবেষক হিসেবে কাজ করছেন। পাশাপাশি সঙ্গীতাঙ্গনেও জড়িত। প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থ “মাহে-নও’ পত্রিকার নির্বাচিত গল্প” বইটি ২০১০ সালে প্রকাশিত হয়।