স্বামী-স্ত্রীর বন্ধন পৃথিবীর সবচেয়ে পবিত্র, মজবুত ও টেকসই বন্ধন। দুনিয়ার কোনো সীমারেখায় একে সীমাবদ্ধ করা যায় না। ক্ষণস্থায়ী এই জগৎ পেরিয়ে অনন্তকালের চিরস্থায়ী জান্নাত পর্যন্ত তা বিস্তৃত। দুজনের সুসম্পর্কের কারণেই গড়ে ওঠে প্রশান্তিময় পরিবার, সমাজ, দেশ ও রাষ্ট্র। পৃথিবীর প্রধান ও মূল উপাদান—মানুষ স্বামী-স্ত্রীর সেই স্বর্গীয় বন্ধনেরই সুফল। কিন্তু কিছু অনিয়ম ও অবহেলার কারণে পবিত্র এই সম্পর্কের মাঝেও আসে ভাঙন। সুখ-শান্তির এই ঘরেও হানা দেয় অশান্তির আগুন; যা তিলে তিলে শেষ করে দেয় দুটি পরিবার, দুটি জীবন। আমরা ভাবি পারিবারিক সব সমস্যার মূলে রয়েছে যুগ থেকে পিছিয়ে থাকা, আধুনিক না হওয়া। কিন্তু না, বর্তমান যুগের উচ্চ শিক্ষিত, সম্ভ্রান্ত পরিবারের আধুনিক ছেলে শাদি। বিয়েও করেছে উঁচু ফ্যামেলির উচ্চ শিক্ষিতা সুন্দরী মেয়ে নাদাকে। শুরুর দিকে তাদের দাম্পত্যজীবন চমৎকারভাবে প্রবাহিত হলেও কিছু দিন পর থেকে শুরু হয় ভীষণ টানাপোড়েন আর দ্বিমুখী দ্বন্দ্ব। ফলে কেউ কারও ছায়া পর্যন্ত আর দেখতে চায় না, বিচ্ছিন্ন থাকতে চায় সারাজীবন। তা হলে মূল সমস্যা কোথায়? কী কারণে শিক্ষিত আধুনিক পরিবারগুলোও ভেঙে খান খান হয়ে যাচ্ছে? আর এর সমাধানই-বা কী? এই বইয়ে নাদা এসব জানতেই শরণাপন্ন হয়েছে পৃথিবীর সবচেয়ে সফল ও সুখময় দম্পতি আয়িশা ও মুহাম্মাদ ﷺ-এর কাছে। নাদা সিরাতের পাতায় আয়িশা রা.-এর কাছে এক এক করে তাদের সব সমস্যার কথা তুলে ধরে এর সমাধান ও প্রকৃত রহস্য জানতে চেয়েছে। আর তিনিও সবিস্তারে নববি দম্পতির খুঁটিনাটি সবকিছু বর্ণনা করে দিয়েছেন, আর উন্মুক্ত করেছেন সুখ, সফলতার সবকটি দুয়ার। আশা করি এর মাধ্যমে তারাসহ পৃথিবীর সব দম্পতি খুঁজে পাবে সঠিক পথ, যার শেষপ্রান্তে রয়েছে নৈসর্গিক সুখের নিরাপদ নীড় ও নগর।
ফিলিস্তিনী বংশোদ্ভুত ড. ইয়াদ কুনাইবী বড়ো হয়েছেন জর্দানের রাজধানী আম্মানে। ছাত্রজীবন থেকে পড়াশোনায় মেধার স্বাক্ষর রাখার পাশাপাশি সাহিত্যাঙ্গনেও ছিল তার সপ্রিতভ পদচারণা। ১৯৯৮ সালে তিনি জর্দান ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি থেকে ফার্মেসিতে কৃতিত্বের সাথে স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেন। কৃতিত্বের ধারা অব্যাহত রেখেই স্নাতোকত্তর শেষে ১৯৯৯ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত হিউস্টন ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষার্থীদের গবেষনা সহকারী হিসেবে যোগদান করেন ‘pharmacology’ বিভাগে। ২০০৩ সালে এই বিভাগ থেকে প্রথম স্থান লাভ করে সুনামের সাথে PHD সম্পন্ন করেন। এর পরপরই বিশ্ববিখ্যাত টেক্সাস মেডিকেল সেন্টারে তৎকালীন সেরা চিকিৎসাবিজ্ঞানীদের সাথে গবেষনামূলক কাজে অংশগ্রহনের বিরল সুযোগ লাভ করেন। চিকিৎসা বিজ্ঞানে নিজের প্রতিভার উজ্জল স্বাক্ষর রাখার পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় জীবনেই তিনি মিশরের ইসলামী আন্দোলনের পথিকৃৎ ‘সাইয়্যিদ কুতুব শহীদের’ মাধ্যমে ইসলাম ও ইসলামী শিক্ষার প্রতি ঝুকে পড়েন। আধুনিক চিকিৎসা শাস্ত্রে যেমন তার বেশ কিছু গবেষনা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে প্রশংসা কুড়িয়েছে, তেমনই দ্বীনি দাওয়াতের ময়দানেও তিনি তার মেধা ও উম্মাহদরদি মানসিকতার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন ছাত্রজীবন থেকেই। তিনি ও তার সঙ্গীগণ বিভিন্ন মসজিদে গিয়ে মুসুল্লীদের মাঝে দ্বীনি দাওয়াত চালাতেন প্রথম দিকে। দ্বীনি দাওয়াতের পাশাপাশি তিনি ইলমে দ্বীনের একনিষ্ঠ ছাত্র হিসেবেও কঠোর পরিশ্রম করে গেছেন। শাইখ আব্দুর রহমান বিন আলী আল-মাহমুদের নিকট হাফস বিন আ’সিম রহিমাহুল্লাহর সনদে ইলমুল কিরাআত শিক্ষা করেন। একনিষ্ঠ পাঠক হয়ে ওঠেন সালাফ থেকে নিয়ে সমকালীন বিশ্ববরেণ্য আলিমদের। আলিমদের ইলম ও সোহবতে তাফসীর, সীরাত, ফিকহ-সহ বিভিন্ন দ্বীনি শাস্ত্রে গভীর ব্যুৎপত্তি লাভ করেন তিনি। দেশের গণ্ডি পেড়িয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও তিনি মুসলিম-অমুসলিম সবার প্রতি দ্বীনের দাওয়াত অব্যাহত রাখেন। তার দাওয়াতী কার্যক্রমে ইসলামের পক্ষে ও ক্রুসেডারদের বিপক্ষে জোড়ালো বক্তব্য উঠে আসতে শুরু করে। যার ফলে ২০১৫ সাল থেকে এ-পর্যন্ত চারবার গ্রেফতার হয়ে বিভিন্ন মেয়াদে দুই বছরেরও বেশি সময় নবী ইউসুফের পাঠশালায় ছিলেন তিনি। হামলা, মামলা ও বন্দি জীবনের ভয় আদর্শের পথ থেকে এক চুলও সরাতে পারেনি তাকে। রুখতে পারেনি দাওয়াতের ময়দানে তার পথচলা। আমরা আল্লাহর নিকট তার তার ক্ষুরধার লেখনী ও বক্তব্যের মাধ্যমে যেন উম্মাহ উপকৃত হতে পারে, সেই তাওফিক এবং তার নেক হায়াত ও সত্যের পথে অবিচলতা কামনা করছি।