মনি অপলক চেয়ে আছে বেডে শুয়ে থাকা মানুষটার দিকে। মনি আজ চিনতে পারে ঐ শুয়ে থাকা মানুষটাকে। এই সেই মানুষ যাকে অনেক খোঁজেও পায়নি মনি। একটা মাত্র ভুলে তিনটি জীবন নষ্ট হয়ে গেছে। মনির দু'চোখ বেয়ে অশ্রু ঝরছে, নীলা আর মিনাও কাঁদছে। মায়ার অবুঝ মনে প্রশ্নের আনাগোনা। সে বুঝে না সবাই কেন কাঁদছে! মায়া মায়ের চোখের জল মুছে দিয়ে বললো, "মা উনি কে শুয়ে আছেন? উনাকে দেখে তুমি কেন কাঁদছো?" মিনা মায়াকে জড়িয়ে ধরে বললো, "মারে শুয়ে থাকা মানুষটা আমার ভাই অহম। তোমার বাবা-মায়ের বন্ধু। আজ সে বদ্ধ উন্মাদ।” নীলার ভগ্নহৃদয়ে কালো মেঘের ঘনঘটা। সে মনিকে জড়িয়ে ধরে বললো, "মনি আপু অনেকদিন পর অহম যখন ভার্সিটি গিয়ে তুষারকে মারে সেদিন তুমি অহমকে চড়টা না দিলেও পারতে। যদি অহমকে তুমি একটু সময় নিয়ে বুঝতে তাহলে তার এই অবস্থা হতো না।" মনির বুকে উত্তাল ঢেউ। যে ঢেউয়ের কোনো কূলকিনারা নেই। মনি ডুকরে কেঁদে ভাঙা গলায় বললো, "নীলা আমি জানি বোন আমি কতবড় অপরাধ করেছি। কিন্তু তুমি কেন নিজের জীবন নষ্ট করছো বলো!” নীলা অহমের মাথায় হাত বুলায়। গালের উপর নোনাজলের দাগটা হাত দিয়ে মুছে বলে, "মনি আপু এই জীবনের কি হবে তা জানি না। কিন্তু ভালবাসা হয়তো এমনি হয়। যাকে ভালবাসি তাকে ছেড়ে অন্য কিছু আর ভাবতে পারিনি আমি। নিয়তি হয়তো এটাই চেয়েছে।" অহম চোখ খুলে তাকায়। সামনে মিনা, নীলা আর মনিকে দেখতে পায়। অহমের চোখেও জল জমে আছে। মনি অহমের কাছে এসে দাঁড়ালো। অহমের দিকে তাকিয়ে দু'হাত জোর করে কাঁদছে। অহম চেয়ে থাকে মায়ার দিকে। ছোট্ট শিশুটি যেন ঠিক মনির জেরস কপি। অহম মায়াকে ইশারায় কাছে ডাকে। মায়া এসে দাঁড়ায় অহমের পাশে। অহম মায়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে উঠে দাঁড়ালো। দরজার দিকে অপলক তাকিয়ে বেড়িয়ে এলো বাহিরে। সাবাই ওর পিছু পিছু হাঁটছে। অহম হাতের ইশারায় সবাইকে থামতে বলে আবার চলতে শুরু করে। মিনা, মনি আর নীলা পাথর হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। কেউ কোনো কথা বলতে পারে না। অহম রাতের আলো আঁধারিতে একা হাঁটছে। জনমানবহীন রাস্তাকে খুব আপন মনে হচ্ছে তার। অহম পথে পথে হাঁটে, পথের অন্তে আবার পথের শুরু হয়। অহম নিরবে চোখের জল ফেলে আর পথিক হয়।