দ্য সিক্রেট অ্যাডভার্সারি টমি আর টাপেন্স, যুবক আর যুবতী, পয়সাকড়িতে টান পড়ায় সিদ্ধান্ত নিলো: ব্যাবসায় নামবে। তবে সেই ব্যাবসা যে খুবই বিপজ্জনক তা প্রতিষ্ঠানের নাম থেকেই বোঝা যায়: ইয়াং অ্যাডভেঞ্চারার্স লিমিটেড। কাজের খোঁজে দেওয়া বিজ্ঞাপনে ওরা বলেছে: যাবে যে কোনোখানে, করবে যেকোনো কাজ। কিন্তু প্রথমেই যে রহস্যময় মি. হুইটিংটনের খপ্পরে পড়ে জানটা খোয়াবার উপক্রম হবে, তা কি কখনও কল্পনাও করেছিল? দ্য ম্যান ইন দ্য ব্রাউন স্যুট সুন্দরী, যুবতী অ্যান বেডিংফিল্ড লন্ডনে এসেছে উত্তেজনার খোঁজে। কিন্তু উত্তেজনাই যে ওকে খুঁজে নেবে, তা তো ওর জানা ছিল না! অদ্ভুত-দর্শন আর একই রকম অদ্ভুত গন্ধধারী এক লোক ভূগর্ভস্থ প্লাটফর্মে পড়ে, রেল লাইনের সংস্পর্শে এসে বিদ্যুতায়িত হয়ে মারা পড়ে। পুলিসের ফয়সালা: দুর্ঘটনাক্রমে মৃত্যু। কিন্তু লাশটাকে পরখ করে পালিয়ে যাওয়া বাদামি স্যুট পরা লোকটার ব্যাখ্যা কী দেবে তারা? মাত্র একটা দুর্বোধ্য সূত্র হাতে নিয়ে খুনির পেছনে লাগল অ্যান; জান গেলে যাক, কিন্তু অপরাধীকে বিচারের মুখোমুখি সে করাবেই! দ্য সিক্রেট অভ চিমনিস ইংল্যান্ডের এক গ্রাম্য বাড়িতে একটা পার্সেলই তো দিতে হবে, এ আর এমন কী? এই ভেবেই কাজটা হাতে নিয়েছিল অ্যান্থনি কেড। কিন্তু কেঁচো খুঁড়তে গেলে সাপের বেরিয়ে আসা যে অবশ্যম্ভাবী, তা কে না জানে? বন্ধুর হয়ে এই একটা কাজ করতে গিয়ে নিজেকে সে আবিষ্কার করল আন্তর্জাতিক এক ষড়যন্ত্রের ঠিক মধ্যখানে। অনেক দূরের দেশ, হার্জোস্লোভাকিয়ায় নতুন করে রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা না করে থামবে না সেই ষড়যন্ত্রকারী। হাতে হাত মেলাল স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড আর ফরাসি সুরেত। কিন্তু তারপরেও সুরাহা হলো কই? অবশেষে, চিমনিস-এ, মানে গ্রাম্য সেই বাড়িতে ঘটা হত্যাকাণ্ডের ফলে পর্দা উঠল অভাবনীয় এক রহস্যের ওপর থেকে।
'দ্য কুইন অব ক্রাইম' ও 'দ্য কুইন অব মিস্ট্রি' নামে পরিচিত আগাথা ক্রিস্টি অপরাধ বিষয়ক বা রহস্য উপন্যাস রচনার ক্ষেত্রে এক অনন্য ব্যক্তিত্ব। তাঁর পুরো নাম আগাথা মেরি ক্ল্যারিসা ক্রিস্টি৷ বিখ্যাত এই ইংরেজ লেখিকা সকল গোয়েন্দাগল্প ও রহস্যকাহিনী পাঠকদের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন তাঁর অসাধারণ লেখনীর মাধ্যমে। তিনি বেশ বিখ্যাত কিছু চরিত্রের স্রষ্টা, যাদের মধ্যে বিশেষ উল্লেখযোগ্য হলো গোয়েন্দা এরকুল পোয়ারো এবং মিস মার্পল, যাদের নাম শোনা যায় গোয়েন্দাকাহিনী পাঠকদের মুখে মুখে। 'ম্যারি ওয়েস্টমাকট' ছদ্মনাম ব্যবহারকারী এই প্রখ্যাত লেখিকা ১৮৯০ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর ইংল্যান্ডের ডেভন এ জন্মগ্রহণ করেন। আগাথা ক্রিস্টি এর বই সমূহ মূলত রোমাঞ্চ, হত্যারহস্য, অপরাধ ও গোয়েন্দাকাহিনী এবং রোমান্টিক ঘরানার। 'গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস অনুযায়ী আগাথা ক্রিস্টির বই বিশ্বের ইতিহাসে সর্বাধিক বিক্রিত বই এবং এক্ষেত্রে তাঁর সমকক্ষ হিসেবে শুধু আরেক কিংবদন্তী সাহিত্যিক উইলিয়াম শেক্সপিয়ারকেই ধরা যায়। আগাথা ক্রিস্টি এর বই সমগ্র এর সংখ্যা প্রায় আশিটি। আগাথা ক্রিস্টি রচনাসমগ্র এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো দ্য মিস্টিরিয়াস অ্যাফেয়ার এট স্টাইলস, দ্য মার্ডার অফ রজার অ্যাকর্ড, দ্য বিগ ফোর, দ্য মিস্ট্রি অফ দ্য ব্লু ট্রেন, পেরিল এট এন্ড হাউস, মার্ডার ইন মেসোপটেমিয়া, ডেথ অন দ্য নাইল, অ্যাপয়েন্টমেন্ট উইথ ডেথ, এরকুল পোয়ারোজ ক্রিসমাস, স্যাড সাইপ্রাস, দ্য মার্ডার অ্যাট দ্য ভিকারেজ, দ্য বডি ইন দ্য লাইব্রেরি, দ্য মুভিং ফিংগার, এ মার্ডার ইজ এনাউন্সড, দে ডু ইট উইথ মিররস, এ পকেট ফুল অফ রাই, ৪:৫০ ফ্রম প্যাডিংটন, নেমেসিস ইত্যাদি। আগাথা ক্রিস্টি সমগ্র এর মধ্যে আরো রয়েছে বিখ্যাত সব নাটক, যার মধ্যে রয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে লম্বা দৈর্ঘ্যের নাটক 'দ্য মাউজট্র্যাপ'। আগাথা ক্রিস্টি অনুবাদ বই এর সংখ্যাও অনেক, এমনকি ইউনেস্কোর বিবৃতি অনুযায়ী তাঁর বইগুলো সবচেয়ে বেশি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। তাঁর বাংলা ভাষায় অনূদিত বইয়ের সংখ্যাও নেহায়েত কম নয়। অনূদিত আগাথা ক্রিস্টি বাংলা বই এর মধ্যে 'সিরিয়াল কিলার', 'গেম ওভার', 'পোয়েটিক জাস্টিস', 'খুনের তদন্ত', 'মার্ডার ইন মেসোপোটেমিয়া', 'থ্রি ব্লাইন্ড মাইস', 'এ বি সি মার্ডার' ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য৷ সাহিত্যে অবদানের জন্য ১৯৭১ সালে তিনি 'ডেম' উপস্থিতিতে ভূষিত হন। ১৯৭৬ সালের ১২ জানুয়ারি আগাথা ক্রিস্টি ৮৫ বছর বয়সে ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ডশায়ারে মৃত্যুবরণ করেন।