বাংলা-ভাষী অঞ্চলে তথা ভারতবর্ষে প্রায় সহস্রবছর ধরে কৃত্য ও শিল্পকলার আঙ্গিকরূপে প্রচলিত রয়েছে পুতুলনাচ তথা পুতুলনাট্য। দেশ-কাল নির্বিশেষে জনপ্রিয় শিল্পমাধ্যম রূপে প্রতিষ্ঠিত পুতুলনাট্যের উদ্ভব ও বিকাশ প্রাচীন ভারতবর্ষ বলে অধিকাংশ পণ্ডিত গবেষকের অভিমত। বাঙালি পণ্ডিত গবেষক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম আদি নিদর্শন শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যকে পুতুলবাজির বই বলে অভিহিত করেছেন। মধ্যযুগের অনেক কাব্যে রচয়িতাগণ নানা প্রসঙ্গে ব্যবহার করেছেন পুতুল, পুতুলনাচ, পুতুলনাচকার, বাজিকর, সূত্রধার ইত্যাদি। এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, এ অঞ্চলে পুতুলনাট্যের প্রচলন ও জনপ্রিয়তা অক্ষুণ্ণ ছিল; যা আধুনিক কালেও অব্যাহত থাকা আবশ্যক ছিল। কিন্তু তা থাকেনি। হাজার বছরের ঐতিহ্যবাহী এই শিল্পমাধ্যমটি বর্তমানে ক্লিষ্ট, ধ্বংসপ্রাপ্ত ও অবলুপ্ত প্রায়। বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী পুতুলনাট্য গ্রন্থ প্রণীত হয়েছে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে সরেজমিনে পরিভ্রমণ পূর্বক প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে। বাংলাদেশের পুতুলনাট্যের ইতিহাস ও ঐতিহ্য: বাংলাদেশের বর্তমান পুতুলনাট্য চর্চার স্বরূপ, টিকে থাকা সংগঠনসমূহের অবস্থা, কর্মকাণ্ড এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের ব্যক্তিগত ও সামাজিক অবস্থা, সংকট; পুতুলনাট্যের আঙ্গিক বৈচিত্রা বিষয়বস্তু-পুতুলনির্মাণ-পুতুলচালনা -অভিনয়-পোশাক সংগীত-মঞ্চব্যবস্থাপনা প্রভৃতি; বিরাজমান সমস্যা ও চিহ্নিত সংকটসমূহ এবং পুতুলনাট্যের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা ক্ষেত্র ও কতিপয় করণীয় সম্পর্কে দিকনির্দেশনা এই গ্রন্থে লভ্য।