"পাবর্ত্য চট্টগ্রাম: সবুজ পাহাড়ের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হিংসার ঝরনাধারা" বইটির ফ্ল্যাপ এর লেখাঃ এক সময় পার্বত্য চট্টগ্রামের কথা উঠলেই সেখানে বেড়াতে যাওয়ার কথা উঠতাে, কিন্তু যাওয়া হতাে না; পরে তার কথা উঠলেই ভয়ে গা শিউরে উঠতে থাকে, কেউ সেখানে যাওয়ার কথা ভাবতেও পারে না। আমরা শুনেছি বিদ্রোহ করেছেন 'উপজাতীয়রা; ওই লাল পাহাড় আর চিরহরিৎ বনের ভেতর দিয়ে বয়ে চলছে পারস্পরিক হিংসাঘৃণাবিদ্বেষের পংকিল ঝরনাধারা। পার্বত্য চট্টগ্রাম ভরে আছে পাহাড়ে, তার পাশ দিয়ে বয়ে চলছে ঝরনার পর ঝরনা, যেগুলােকে বলা হয় ‘ছড়ি’ বা ‘ছড়া'। ওই ছড়িগুলাে দিয়ে জলের মতােই বয়ে চলছে ঘৃণা আর হিংসা, যাতে কালাে হয়ে আছে সবুজ পাহাড়গুলাে, তার রাঙা মাটি। পার্বত্য চট্টগ্রামের সরল শাদা। মঙ্গোলীয় মানুষের মনে আর নির্মল ঝরনাধারা নেই। তাঁরা স্বাধীনতা চান, নইলে স্বায়ত্তশাসন চান; তাঁরা দাবি করেন। পার্বত্য চট্টগ্রাম স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল হবে, এর থাকবে নিজস্ব আইন পরিষদ; পার্বত্য আদিবাসী জনগণের অধিকার সংরক্ষণের জন্য ১৯০০ সালের শাসন বিধির অনুরূপ সংবিধি থাকতে হবে শাসনতন্ত্রে; থাকবে রাজাদের দপ্তর; পার্বত্য চট্টগ্রামের বিষয় নিয়ে কোন শাসনতান্ত্রিক সংশােধন বা পরিবর্তন যেন না হয় শাসনতন্ত্রে থাকতে হবে এমন সংবিধি ব্যবস্থা। তাঁদের দাবিগুলাে মেনে নেয়া হয় নি, কেননা মেনে নেয়া অসম্ভব; তাই তাঁদের বিদ্রোহ। হুমায়ুন আজাদ এ-ছােটো বইটিতে নিরপেক্ষভাবে তুলে ধরেছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম ও তার সমস্যাকে; বইটি হয়ে উঠেছে একই সঙ্গে রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও সাহিত্য—গভীর ও অন্তর্ভেদী, যা পাঠকের চেতনার ভেতরে সঞ্চারিত করে পার্বত্য চট্টগ্রামকে।
Title
পাবর্ত্য চট্টগ্রাম: সবুজ পাহাড়ের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হিংসার ঝরনাধারা
প্রচলিত ধ্যানধারণার বাইরে গিয়ে ব্যক্তিগত অভীষ্ট এবং রাজনৈতিক ও ধর্মীয় বিশ্বাস দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার মাধ্যমে ধর্ম, মৌলবাদ, প্রতিষ্ঠান ও সংস্কারের বিরুদ্ধে কলম তুলে নিয়ে বিশেষভাবে আলোচিত-সমালোচিত হয়েছিলেন প্রখ্যাত সাহিত্যিক হুমায়ুন আজাদ। প্রথাবিরোধী এবং বহুমাত্রিক এই লেখক একাধারে ছিলেন কবি, ঔপন্যাসিক, সমালোচক, গবেষক, রাজনৈতিক ভাষ্যকার, ভাষাবিজ্ঞানী এবং অধ্যাপক। বাবা-মায়ের বড় সন্তান হুমায়ুন আজাদ ১৯৪৭ সালের ২৮ এপ্রিল মুন্সিগঞ্জ জেলার শ্রীনগর উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর শৈশব ও কৈশোর কাটে রাঢ়িখাল গ্রামে, যার কথা পরবর্তীতে তাঁর বিভিন্ন সাহিত্যকর্মে উঠে এসেছে। ম্যাট্রিকুলেশন ও উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ভর্তি হন। এখান থেকেই তিনি বাংলা সাহিত্যে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন এবং পরবর্তীতে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। হুমায়ুন আজাদ এর বই সমূহ নারীবাদকে তুলে ধরেছে ও ধর্মীয় মৌলবাদের প্রবল বিরোধিতা করেছে, যার ফলে তিনি একশ্রেণীর মানুষের চক্ষুশূলে পরিণত হয়েছিলেন। হুমায়ুন আজাদ এর বই এর মধ্যে 'পাক সার জমিন সাদ বাদ', 'সব কিছু ভেঙে পড়ে', 'ছাপ্পান্নো হাজার বর্গমাইল' ইত্যাদি উপন্যাস ও 'অলৌকিক স্টিমার', 'জ্বলো চিতাবাঘ', 'কাফনে মোড়া অশ্রুবিন্দু' ইত্যাদি কাব্যগ্রন্থ উল্লেখযোগ্য। হুমায়ুন আজাদ এর বই সমগ্র এর মধ্যে 'নারী' প্রবন্ধটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, যা একসময় নিষিদ্ধ হয়েছিল এই দেশে। প্রতিভাবান এই সাহিত্যিক ২০০৪ সালের ১১ আগস্ট মৃত্যুবরণ করেন। সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতি হিসেবে 'বাংলা একাডেমি পুরস্কার', 'একুশে পদক' সহ আরো অনেক পুরস্কারে ভূষিত হন হুমায়ুন আজাদ।