মহিমান্বিত কুরআন - শুয়ুখ সংস্করণের বিবরণী 'মহিমান্বিত কুরআন – মর্মার্থ ও শাব্দিক অনুবাদ' একটি গবেষণামূলক সংকলন। মানুষ কোন কিছু পড়ে আনন্দ পায়, যখন সে বক্তব্যটি বোঝে। নিজের সাথে মিলিয়ে অনুধাবনের সাথে সাথে পড়ার আনন্দ বাড়তে থাকে। কুরআন বোঝার আনন্দ পেতে হলে মহিমান্বিত কুরআন শাব্দিক অনুবাদ অতুলনীয় কারণ – শাব্দিক অনুবাদের পাশাপাশি কুরআনের বর্ণিত বক্তব্য, প্রেক্ষিত, ঘটনা, স্থান, ভাষা, ইত্যাদির যতটুকু প্রাথমিক জ্ঞান না থাকলে পাঠকের কাছে বিষয়টির পুরোপুরি হৃদয়ঙ্গম কষ্টকর হতে পারে তা সংক্ষিপ্তভাবে যথাস্থানে সন্নিবেশিত হয়েছে। সহায়ক গ্রন্থ ও রিসোর্স সমূহ বিশ্লেষণপূর্বক প্রজেক্ট গাইডলাইনের আলোকে অনুবাদ প্রামাণিক ও পরিশীলিত করা হয়েছে। কুরআনের অনুবাদ, যত নিখুঁতই হোক, অলৌকিক ঐশীগ্রন্থের ভাব-সম্পদ প্রকাশে পুরোপুরি সমর্থ নয়। তবুও মনুষ্য সীমাবদ্ধতার মধ্যেই অভিষ্ট অর্থের কাছাকাছি পৌঁছানোর প্রচেষ্টা আমাদের নিরন্তর। যদিও কুরআনের অনেক অনুবাদ রয়েছে, সেগুলো পাঠককে আরবি শব্দ ও এর অর্থের সাথে সম্পর্ক গড়তে সাহায্য করে না। এই শাব্দিক অনুবাদের উদ্দেশ্য কুরআনের ভাষা শিখতে সাহায্য করা। মহিমান্বিত কুরআন - শুয়ুখ সংস্করণের উপযোগীতা ক। প্রতিটি শব্দের অর্থ এর ঠিক নীচে দেওয়া হয়েছে। খ। আয়াতের অনুবাদগুলো ভাবার্থের চেয়ে আরবি শব্দের সরাসরি অর্থের কাছাকাছির রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। যে ক্ষেত্রে হুবহু শাব্দিক অর্থ আয়াতের ভাব প্রকাশ করে না, সেক্ষেত্রে অভীষ্ট অর্থ বাক্যের অনুবাদে রাখা হয়েছে। পুরো কাজের উদ্দেশ্য পাঠককে সরাসরি আরবি থেকে বুঝতে সক্ষম করা। গ। অনুবাদে বাক্যের গঠনশৈলী কুরআনের আরবি শব্দের ক্রমধারার কাছাকাছি রাখার চেষ্টা করা হয়েছে, যা শিক্ষার্থীর জন্য আরবি ও বাংলা মিলিয়ে অনুধাবন সহায়ক। ঘ। পবিত্র কুরআনে প্রায় ৮০,০০০ শব্দ রয়েছে তবে মূল শব্দগুলি কেবল ২০০০ এর কাছাকাছি! এটিকে কুরআনের একটি অলৌকিক নির্দশন হিসাবেও অভিহিত করা যেতে পারে। যদি কোনও পাঠক প্রতিদিন ১০ টি নতুন শব্দ শেখার সিদ্ধান্ত নেন, তবে তিনি সাত মাসের মধ্যেই এর মূল বার্তাটি বুঝতে পারবেন! সুতরাং, এটি কুরআন বুঝতে খুব উপযোগী, যদি কেউ শিখতে আগ্রহী হয়। মহিমান্বিত কুরআন - শুয়ুখ সংস্করণের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্যসমূহ: কিং ফাহাদ গ্লোরিয়াস কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স, মদিনা’ থেকে প্রকাশিত ড. মোহাম্মদ তাকি’উদ্বীন আল-হিলালী ও ড. মোহাম্মদ মুহসিন খাঁন কর্তৃক অনুদিত ‘দি নোবেল কুরআন’, ‘সাহি ইন্টারন্যাশনাল’ , ড. মোস্তফা খাত্তাব অনুদিত ‘দি ক্লিয়ার কুরআন’, ‘তাইসিরুল কুরআন’, ‘বায়ান ফাউন্ডেশন’, ড. আবু বকর যাকারিয়া, ড. ফজলুর রহমান, মুজিবুর রহমান—প্রমূখ প্রথিতযশা শায়েখগণের প্রকাশিত ইংরেজি ও বাংলা অনুবাদগুলোকে বিশ্লেষণপূর্বক ‘মহিমান্বিত কুরআন - মর্মার্থ ও শাব্দিক অনুবাদ’ তৃতীয় সংস্করণটি পরিমার্জিত ও পরিশোধিত করা হয়েছে। বর্ণনা প্রসঙ্গের আলোকে সর্বাধিক উপযুক্ত শাব্দিক অনুবাদ এবং প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা যোগ করা হয়েছে যা কুরআনের বার্তা সঠিকভাবে বুঝতে সাহায্য করবে, ইনশাআল্লাহ। বিদ্যমান অনুবাদসমূহের মধ্যে যখনই কোন বৈসাদৃশ্য পরিলক্ষিত হয়েছে, তখনই প্রামাণিক গবেষণার আলোকে স্পষ্ট ও সঠিকতর অনুবাদ প্রয়োজনবোধে ব্যাখ্যাসহ উল্লেখ করা হয়েছে। প্রত্যেক শব্দের অর্থ এর নিচেই দেওয়া হয়েছে। অনুবাদে বাক্যের গঠনশৈলী কুরআনের আরবি শব্দের ক্রমধারার কাছাকাছি রাখার চেষ্টা করা হয়েছে যা শিক্ষার্থীর আরবি ও বাংলা মিলিয়ে অনুধাবন সহায়ক। পুরো কাজের উদ্দেশ্য পাঠককে সরাসরি আরবি থেকে বুঝতে সক্ষম করা। ভাষান্তরের সার্বিক পদ্ধতি আরবির সাথে হুবহু রাখা হয়েছে যেমন, গোড়ালির ওপর (পূর্বের কুফরি অবস্থায়) ৬:৭১)। তবে তা ভাব প্রকাশ না করলে অভীষ্ট অর্থ বাক্যের অনুবাদে রাখা হয়েছে। যেমন, حِجْرًا مَحْجُوْرَ (২৫:২২), بَعْضُكُم مِّنْ بَعْضٍ (৩:১৯৫) ইত্যাদি। বর্ণনা প্রসঙ্গের আলোকে সর্বাধিক উপযুক্ত শাব্দিক অনুবাদ করা হয়েছে, যেমন হানিফ – সঠিক ধর্ম (২:১৩৫, ৩০:৩০), একনিষ্ঠ (১০:১০৫); খলিফা – প্রতিনিধি এর পরিবর্তে প্রজন্মের পর প্রজন্ম (২:৩০), মুজাম্মিল – কম্বল (বা কাঁথা) মোড়ানো ব্যক্তি (৭৩:১), মুদাস্সির – চাদর জড়ানো ব্যক্তি (৭৪:১) ইত্যাদি। কুরআনের যে সব আরবি শব্দ অনুবাদে অর্থ সীমিত হয়ে পড়ে সে শব্দগুলো অবিকল রাখা হয়েছে, যেমন, রব (৪০:৬০), ইবাদাত (১:৫), সালাত (২:৩), সাওম (২:১৮৩), দীন (৩:১৯), ঈমান (২:৯১) ইত্যাদি। এ ছাড়াও আরবি পরিভাষাগুলো আরবিতে রাখা হয়েছে, যেমন- মুত্তাকি (২:২), মুজরিম (২:৫৫), ইসতাফযিয (১৭:৬৪) ইত্যাদি। আল্লাহ্র জন্য ব্যবহৃত সকল নাম ও সর্বনাম মোটা অক্ষরে লেখা হয়েছে। যেমন, রব (৬:১০২), রহমান (২১:৩৬), যিনি (১:৩)। আল্লাহ যেখানে যেভাবে নিজের জন্য সম্মানজনক বহুবচন ‘আমরা’, ‘আমাদের’ সর্বনাম ব্যবহার করেছেন, সেখানে সেভাবেই রাখা হয়েছে। যেমন, আমরা, আমাদের (৬:৮৩); আল্লাহ নিজেকে একবচনে 'আমি' ব্যবহারও করেছেন, যেমন, আমি (২:৩৩)। আল্লাহর জন্য 'আপনি' (১:৬), 'তিনি' (২:১৯) এবং অন্য সবার জন্য 'সে', 'তুমি', 'তোমরা' ব্যবহার করা হয়েছে। যেমন, তুমি (রাসুল ৪২:৫২, পিতা-পুত্র ১৯:৪২, ইবলিস ১৫:৩২) ইত্যাদি। আল্লাহর সকল সিফাতকে প্রকৃত অর্থে অনুবাদ করা হয়েছে। যেমন,‘ইস্তিওয়া’ (২০:৫), আল্লাহর হাত (৫:৬৪), চেহারা (৫৫: ২৭), চোখ (২০: ৩৯) ইত্যাদি। দীর্ঘ আয়াতে যতিচিহ্নের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করে বক্তব্য সহজবোধ্য করা হয়েছে। যেমন, প্রেরিতদের শপথ (৭৭:১-৭), আদেশ ও নিষেধ (১৬:৯০) ইত্যাদি। রাসূল মুহাম্মদ স. এর কুরআনে ব্যবহৃত বিশেষণ উম্মিয়্যি অপরিবর্তিত রেখে উম্মিয়্যি (নিরক্ষর, অ-কিতাবি) ব্যবহার করা হয়েছে, কারণ অ-কিতাবিদেরকে (তওরাত ও ইঞ্জিলের অনুসারী নয়) বোঝাতেও কুরআনে উম্মিয়্যি ব্যবহৃত হয়েছে, ৭:১৫৭, ৬২:২। আল্লাহ্র প্রেরিত দূত মালাক (একবচন), মালাইকা (বহুবচন): ইসলামি বিশ্বাসে এর কোন পুং/স্ত্রী লিঙ্গ নেই; কিন্তু অন্যভাষায় এর অনুবাদ পরী, Angel ইত্যাদির ব্যবহার বিশ্বাসগতভাবে (আকীদা) দূষণীয় বিধায় শাব্দিক অনুবাদ 'ফেরেস্তা' রাখলেও আয়াতের অনুবাদ 'মালাক', 'মালাইকা' রাখা হয়েছে (২:৩০, ৯৮, ১০২; ৩:১২৪ ইত্যাদি)। বিদ্যমান অনুবাদসমূহের মধ্যে বৈসাদৃশ্য পরিলক্ষিত হলে প্রামাণিক গবেষণার আলোকে স্পষ্ট ও সঠিকতর অনুবাদ—প্রয়োজনবোধে ব্যাখ্যাসহ উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন, 'ইন' (اِنْ) শব্দের অর্থ ১৪:৪৬, উচ্চ বা ক্ষুদ্র উপমা ২:২৬, حَمَاٍ مَسْنُوْن (১৫:২৬,২৮) ইত্যাদি। কুরআনে বর্ণিত বিভিন্ন বিষয়ের অনুধাবন সহায়ক প্রাথমিক জ্ঞান সংক্ষিপ্তভাবে যথাস্থানে সন্নিবেশিত হয়েছে। যেমন, প্রেক্ষিত (কুরাইশের দুর্ভিক্ষ ২৩:৭৬), ঘটনা (বালাআম ইবনে বাউরা ৭:১৭৫; ৮৫:৪), স্থান (এন্তাকিয়া ৩৬:১৩) ইত্যাদি। ভাষার ব্যবহারের ভিন্নতা চিহিত করে বক্তব্য পরিষ্কার এবং ক্ষেত্রবিশেষে ভ্রান্তির অপনোদন করা হয়েছে। যেমন, ঈসা (আ.)-এর ক্ষেত্রে তাওয়াফফা, মাওতা ও রফা শব্দের সঠিক ব্যবহার (৩:৫৫), আলিফ-লাম হরফের বিশেষত্ব (৯৪:৫,৬) ইত্যাদি। এ ছাড়াও কুরআনের বিধি-নিষেধের মমার্থ যা জ্ঞানের স্বল্পতার জন্য বোধগম্য হতে অসুবিধা হতে পারে, সংক্ষেপে উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন, দাসপ্রথা, একাধিক স্ত্রী (৪:৩), মহিলার সাক্ষ্য (২:২৮২), সম্পদ বন্টন (৪:১১) ইত্যাদি। মহিমান্বিত কুরআন - শুয়ুখ সংস্করণের পরিমার্জন সম্পর্কে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিনয়ী আলেম, ইমাম ও খতিব, এক দল স্বেচ্ছাসেবী ও ইলাননূরের সম্পাদনা পরিষদ পরিমার্জনের কাজটি সম্পন্ন করেছেন, আলহামদুলিল্লাহ।
Title
মহিমান্বিত কুরআন – মর্মার্থ ও শাব্দিক অনুবাদ, শুয়ুখ সংস্করণ