আলহামদু লিল্লাহ ,যাবতীয় প্রশংসা ও গুণগান স্তুতি একমাত্র শুধুমাত্র মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের জন্য। দরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক মহানবী বিশ্বনবী মুহাম্মাদ সালালাহু ‘আলাইহি ওয়া সালামের জন্য, তার সাহাবা, তাবেঈ‘ তাবে‘ তাবেঈন, আয়েম্মায়ে মুজতাহিদীন, সালফে সালেহীন ও ক্বিয়ামত পর্যন্ত তার সুন্নাতের ধারক বাহক সকলের ওপর রহমত, মাগফিরাত বর্ষিত হোক। আমীন। যে কোন কাজের শুরুটা অতি জটিল, গুরুত্বপূর্ণ, ভীতিপ্রদ ও অজানা আশঙ্কায় পরিপূর্ণ। আর যখন কোন কিতাব প্রকাশনার বিষয়ে হয় তখন তো আরও ভয়াবহ ব্যাপার হয়ে দাড়ায়। কারণ পাঠক সমাজ এটাকে কিভাবে গ্রহন করে তার ওপর এই বইটির ভবিষ্যত নির্ধারিত হবে। ইমাম বুখারী রহিমাহুলাহ লিখিত “আল-আদাবুল মুফরাদ” বইটি বাংলা ভাষায় প্রথম অনুবাদ করা হয় ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ হতে। এর পর মুদ্রিত হয় আহসান পাবলিকেশন্স হতে। এর পর মুদ্রিত হয় জায়েদ লাইব্রেরী হতে। সর্বশেষ মুদ্রিত বইয়ের সাথে উপরোক্ত বইয়ের তুলনামূলক বেশ কিছু পার্থক্য রয়েছে। যথাঃ ১. পূর্বোক্ত প্রতিষ্ঠান দু’টি প্রকাশিত গ্রন্থটিতে হাদীসের আরবীতে মতন উলেখকালে হাদীসের সনদ করা হয়নি। অথচ ইমাম বুখারী রহিমাহুলাহ যখন হাদীসের কিতাবটি লেখেন তাতে সনদসহ লিখেছিলেন। ২. হাদীস গ্রন্থটির যথেষ্ট গুরুত্ব থাকায় আরব বিশ্বে গ্রন্থটির সর্বশেষ সংস্করণে হাদীসটি কোন কিতাবে কত নং হাদীসে উলেখিত হয়েছে তথা হাদীসের পরিসংখ্যান উলেখ করা থাকলেও উপরোক্ত প্রতিষ্ঠানদ্বয়ে প্রকাশিত গ্রন্থে এ ধরণের কোন পরিসংখ্যান উলেখ করা হয়নি। ৩. বর্তমানকালে প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ হাদীসগ্রন্থের হাদীসসমূহের মান উলেখ করা হয়ে থাকে। তথা হাদীসটি বিশুদ্ধ না দুর্বল। যার দ্বারা সম্মানীত পাঠক হৃদয়ঙ্গম করতে সক্ষম হন, হাদীসটির মান কোন পর্যায়ের এবং তা কি আমল যোগ্য কি না? কিন্তু উপরোক্ত প্রতিষ্ঠানদ্বয় তাদের কিতাব প্রকাশ কালে এ নীতি মেনে চলেন নাই। তাহলে জায়েদ লাইবেরী যখন বইখানা প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত নিলো তখন সিদ্ধান্ত গৃহীত হলো: ১. ইমাম বুখারী রহিমাহুলাহ যেভাবে তার হাদীসগ্রন্থ সংকলন করেছেন হুবহু সেভাবেই উলেখ করা হবে। তা থেকে একটি শব্দ তো দূর একটি অক্ষরের পরিবর্তন যাতে না হয় সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। ২. প্রতিটি হাদীসের সনদের সঠিক বাংলা অর্থ করা হবে।
মুহাদ্দিস শব্দের আভিধানিক অর্থ হাদিসবেত্তা। বলা হয়ে থাকে সকল মুহাদ্দিসের শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস ছিলেন মুহাম্মদ বিন ইসমাইল বিন ইবরাহীম বিন মুগীরাহ বিন বারদিযবাহ। ১৯৪ হিজরী, ১৩ই শাওয়াল শুক্রবার খোরসানের বোখারাতে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। ইমাম মুহাম্মদ ইবনে ইসমাইল বোখারী (র) এর বই সমূহ এর জন্যই তিনি স্মরণীয় হয়ে রয়েছেন। মুসলিম জগতে ইমাম বোখারী নামে অধিক পরিচিত তিনি। তাঁর পিতা ইসমাইল ইবনে ইব্রাহিম মুসলিম জগতের আরেক পরিচিত ব্যক্তিত্ব, যার ওঠা-বসা ছিলো হাদিসবীদ আল্লামা হাম্মাদ (রহঃ) এবং হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক (রহঃ) এর। অঢেল ধন-সম্পত্তির মালিকও ছিলেন তিনি। তাই খুবই অল্প বয়সে ইমাম বোখারী পিতাহারা হলেও কোনো সঙ্কটময় পরিস্থিতিতে পড়তে হয়নি। এর আরেক কারণ তাঁর মা। তাঁর মা ছিলেন এক বিদূষী ও পরহেজগার নারী। পুত্রকে তিনি সঠিক শিক্ষাটাই দিয়েছিলেন। তাই মাত্র ৬ বছর বয়সে বোখারী (রঃ) কোরআনের হাফিজ হন এবং এরপর হাদিস শিক্ষায় মনোনিবেশ করেন। ষোল বছর বয়সে হজ্জে গমন করে মক্কায় থেকে যান দক্ষ হাদিসবীদদের থেকে হাদিসের জ্ঞান নিতে। হাদিস সংগ্রহের আশায় ইরাক, সিরিয়া, মিশর, মদিনাসহ বহু অঞ্চলে ভ্রমণের পর ষোল বছর পর আবার বোখারায় ফেরত যান। ব্যক্তি হিসেবে তিনি ছিলেন দানশীল। তাঁর স্মৃতিশক্তি ছিলো প্রখর। ফলে হাদিস শুনেই মনে রাখতে পারতেন। বলা হয়ে থাকে, তিনি ছয় লক্ষ হাদিস মুখস্থ বলতে পারতেন, ক্ষুদ্র ত্রুটিও তার নজর এড়াতো না। ইমাম মুহাম্মদ ইবনে ইসমাইল বোখারী (র) এর বই সমগ্র বলতে আমরা বুঝি বুখারী শরীফ, যাতে স্থান পেয়েছে ইমাম বোখারী (রঃ) দ্বারা সংগ্রহকৃত সহীহ হাদিস। তার সংকলিত গ্রন্থের সংখ্যা ২০টিরও বেশি। শেষ বয়সে তিনি নিজ বাসভূম থেকে বিতাড়িত হন এবং সমরকন্দের খরতঙ্গ নামক স্থানে চলে আসেন। এ অঞ্চলেই তিনি ২৫৬ হিজরীর, ১লা শাওয়াল ইন্তেকাল করেন।