“টুডে ইজ দ্যা লাস্ট ডে অব মাই লাইফ। ঘুম ভাঙার সঙ্গে সঙ্গে এ কথাটাই মনে পড়ল প্রথম। এখনো সূর্য হাত পা মেলে দিয়ে জড়িয়ে ধরেনি প্রকৃতির অবয়ব, তবু আমার জীবনের শেষ দিনটি শুরু হয়ে গেছে।... আমি আর পৃথিবীর পরোয়া করি না। বরং এই বলা ভালো, পৃথিবীটাই আমার পরোয়া করে না। আমার বেঁচে থাকা কিংবা মরে যাওয়ায় তার কিছু যায় আসে না। সে তার নিজস্ব নিয়মে ছিল। আছে। থাকবে। কেবল আমিই যেন তার নিয়ম মেনে চলতে পারছি না। এ আমার অক্ষমতা নয়। এ আমার এক ধরনের আলাদা সাহস। বুঝে গেছি, এখন শুধু নীতিকথা আর আদর্শবাদ দিয়ে পরিস্থিতি আর পরিবেশের তারতম্য দূর করা যায় না। যেখানে মিথ্যাচার, শঠতা আর ভন্ডামির পাশাপাশি সহবাস সেখানে কেবল নীতিকথা আর আদর্শবাদ হচ্ছে পান্তাভাত। বেশি খেলেই ঝিমুনি ধরে।... যিশুর জন্মের প্রায় ছ’শ বছর আগে লওৎসে তাঁর এক কবিতায় বলে গেছেন, ‘যতই বিধিনিষেধ বাড়বে, ততই মানুষ হবে গরিব/যত ধারালো হাতিয়ার বানাবে/রাজ্যে তত বাড়বে বিশৃঙ্খলা/যত কলা কৌশল ফাঁদবে/তত বেরোবে তাকে এড়াবার ফন্দি/যে দেশে যত বেশি আইন কানুন/সে দেশে তত বেশি চোর-জোচ্চরের মেলা।’ গোটা বিশ্বজুড়ে যেন সেই মেলারই খেলা চলছে এখন। বাংলাদেশটাও তা থেকে পিছিয়ে নেই। বরং কয়েক ধাপ এগিয়ে। এই মিথ্যাচার, শঠতা আর ভয়েমির মাঝে বেঁচে থাকার কোনো মানে হয় না। তাই আমি মরব, নিজ হাতে ফাঁসির মালা কণ্ঠে ধারণ করব।” সৎ, মেধাবী, রাগী, সময়নিষ্ঠ এক যুবকের অদম্য ইচ্ছে শক্তির শেষ স্তর বিন্যস্ত হয়েছে এ উপন্যাসে। জীবনের শেষ সুতো ধরে টানতে গিয়ে এক কিশোর মনের অব্যক্ত তোলপাড়, সাইক্লোন, অশেষ জিজ্ঞাসা চমকপ্রদ শৈলীতে ব্যক্ত করেছেন ওয়াহিদ রেজা। উপন্যাসের পরতে পরতে রয়েছে কৈশোরোত্তীর্ণ এক যুবকের রাগ, ক্ষোভ, ভালোবাসা, দেশপ্রেম ও প্রতিবাদের বিচিত্র চিত্রন, যা পাঠককে মন্ত্রমুগ্ধের মতো ধরে রাখে। পড়তে শুরু করলে শেষ না হওয়া পর্যন্ত এর চুম্বকশক্তি অর্থাৎ আকর্ষণ এতোটুকু ক্ষুন্ন হয় না। যে জন্যে ‘মহাকালের ইঙ্গিত’ হয়ে উঠতে পেরেছে এক অনবদ্য উপন্যাস।
সমসাময়িক বাংলা সাহিত্যাঙ্গনে ওয়াহিদ রেজা এখন আলােচিত নাম। দেশের অন্যতম প্রথাবিরােধী, অনুসন্ধানী, বহুমাত্রিক লেখক তিনি। লেখালেখির সূচনাকাল থেকেই প্রচলিত ধারার বিরুদ্ধে; বিপরীত স্রোত, বিপরীত মেরুতে তার অবস্থান। কলম তার অত্যন্ত তীক্ষ্ণ-শাণিতনির্ভীক, কিন্তু অবান্তর বা অবাস্তব নয়। তার আকুতি, সন্দেহ, জিজ্ঞাসা পাঠককে প্রচলিত সত্যের সঠিকতার প্রশ্নের মুখােমুখি দাঁড় করায়। তাঁর রচনার গভীরের অনুসন্ধিৎসু উপলব্ধি এতােটাই স্পষ্ট ও অশনিতীক্ষ্ণ ভাষায় বিন্যস্ত যে সব লেখকের পক্ষে যা সম্ভব নয়। চিন্তা-চেতনায় তিনি সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র। সবসময় গতানুগতিক, ট্রাডিশনাল লেখালেখির বিপক্ষে পরিচালিত তাঁর কলম। গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ, সমালােচনা, উপন্যাস, পুরাতত্ত্ব বিষয়ক গবেষণামূলক রচনায় শক্ত কজির যুক্তিবাদী বিজ্ঞানমনস্ক লেখক ওয়াহিদ রেজা। জন্ম : প্রাচ্যের ডান্ডিখ্যাত ঐতিহ্যবাহী নারায়ণগঞ্জ শহরের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে ২৫ অক্টোবর ১৯৫৭। বাবা ডা. শাহাদাত হােসেন, মা আনােয়ারা হােসেন। এ পর্যন্ত তাঁর গ্রন্থের সংখ্যা সাতাশটি।