চলার পথে' কবি, গল্পকার ও কথাশিল্পী শাহ জামান সমকালিন গদ্য সাহিত্যের এক অসামান্য জাদুকর। তার স্মৃতিচারণমূলক অসাধারণ নির্মাণ গল্পগ্রন্থ 'চলার পথে' পড়তে গিয়ে আমার তাই মনে হয়েছে। লেখা যখন পাঠককে সুনামির জলের মতো সামনের দিকে টেনে নিয়ে যায় দুর্বার গতিতে, তখন বুঝতে হবে এই মায়াবী কলমের পেছনে একজন হেমিলনের বাশিওয়ালা আছেন। কবি শাহ্ জামান সেই বাশিওয়ালা। শাহ্ জামান প্রথমত কবি, তাঁর চমৎকার কাব্যিকতা মেশানো লেখা প্রবন্ধ বা গল্প পাঠককে প্রবল জলস্রোতের মতো ভাসিয়ে নিয়ে যায় পুণ্যময় ত্রিবেনী সংগমে। অনাবদ্য এই সৃষ্টি 'চলার পথে' পড়তে গিয়ে বার বার চোখের সামনে ভেসে উঠেছে শরৎচন্দ্রের কালজয়ী সৃষ্টি শ্রীকান্তের কথা। কথাশিল্পী শাহ্ জামানও শরৎবাবুর মতো অসাধারণ মুন্সিয়ানায় তাঁর শৈশব তাঁর স্মৃতিময় গ্রাম, নদী, খাল স্রোতধারা, রাতের আকাশ, শরতের কাশফুল, জোছনামথিত বালুচর, ছোটবেলার দূরন্তপনা- সর্বপোরি জন্মমাটিকে কাব্যের রঙ তুলির অসাধারণ দক্ষতায় তুলে ধরতে পেরেছেন। যা তাঁর মতো নবীন লেখকের লেখা না পড়লে আমার ভাবনায়-ই আসতো না। কবি শাহ জামান তাঁর গল্পগ্রন্থ 'চলার পথে'-এর বর্ণনায় বর্ণচ্ছটায় কাব্যের মাধুরী মিশিয়ে বিনির্মাণ করেছেন বলেই এতোটা সুখপাঠ্য হয়ে উঠেছে। অন্যদিকে কথাশিল্পি শাহ্ জামান জন্মসূত্রে শেরপুর জেলার মানুষ হওয়ার সুবাদে শেরপুরের শ্যামল প্রকৃতি কংশ, সোমেশ্বরী, মালিজি, ভোগাই নদীর জলের সাথে তাঁর জীবনকে একসূত্রে গেঁথে ভাবনার অতিন্দ্রীয় জোছনা দিয়ে রচনা করেছেন এই কালজয়ী স্মৃতির অশ্বমেধের ঘোড়া গল্পগ্রন্থ 'চলার পথে'। আমার বিশ্বাস তাঁর এই গদ্যসাহিত্য 'চলার পথে' পাঠক কুলের হৃদয়ে দোলা দেবেই। বইটি ব্যাপক পাঠক প্রিয়তা পাক। এই কামনায়। মাহবুব খান কবি ও ঔপন্যাসিক, প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব অনুশীলন সাহিত্য পরিষদ।