কবি ও কথাকার সুজন হাজারীর গল্পে বাক্যের আওয়াজ বহুবিচিত্র; যে আওয়াজে থাকে মানবজীবনের রহস্য উন্মোচনের গোপন চাবি। তার গল্পে আছে ভাবের পূর্ণাঙ্গ বিকাশ। গল্পগুলোতে মানুষের মনোজগতের সাথে প্রকৃতি রাজ্যের এক অদ্ভুত স্মিতবন্ধনের প্রচেষ্টা আগাগোড়াই লক্ষ করা যায়। কথাকার হাজারী মনস্তাত্ত্বিক দর্শনের জটিলতা ঘোচাতে তন্ন তন্ন করে খুঁজেছেন সৃষ্ট চরিত্রের অন্তর-বাহির। তার গল্পে আছে আধুনিক চেতনা, মিথ-পুরাণ, ইতিহাস, ঐতিহ্য, মনঃসংযোগ রীতি, মগ্নচেতনাস্রোত। একমাত্র অভিনিবেশই তার প্রতিভাসিক জগতকে চিনিয়ে দেয়। রূপ, গন্ধ ও চেতনার অনুষঙ্গময়তায় প্রকৃত গল্পকারের পরিচয়ের সূত্রপাত ঘটায়। সুজন হাজারীর গল্পে গদ্যপ্রকরণের জটিল অনুষঙ্গ তেমন স্পর্শ করেনি। যেন সরল, সুদূর ও আবেগাক্রান্ত অনুভূতিই তার গল্পের প্রতিপাদ্য বিষয় হয়ে উঠে এসেছে। প্রতিটি শিল্পের মতো ছোটগল্পেরও কিছু রাখঢাক থাকা চাই। কারণ সে আকারে ছোট। বহন ক্ষমতা কম জেনেও তাতে চাপিয়ে দিতে হয় অনেক ভার। জীবন প্রণালীর ভার। তাইতো ছোটগল্পের ক্ষেত্রে একজন পরিশ্রমী গল্পকার তার পাঠককে পরিশ্রমী হতে বাধ্য করেন। সুজন হাজারী তার এই গ্রন্থের গল্প দিয়ে পাঠকের অন্তরে টান সৃষ্টির যত কৌশল, যত প্রচেষ্টা, যত ঝুঁকি, যত ত্যাগ, যত সিদ্ধান্ত গল্পের মৌন সড়কে বিছিয়ে দিয়েছেন–তাতে স্পষ্টকে অস্পষ্টে ধাবিত করলেন, অস্পষ্টকে স্পষ্টের আয়নায় দাঁড় করালেন। যার ফলে গড়ে উঠেছে ভালোলাগার গল্প, টিকে থাকার গল্প। গল্পে গল্পে তিনি পাড়ি দেবেন বহুদূর। তার গল্পের চমৎকারিত্বই অবশেষে পাঠককে অনুপ্রাণিত করে–প্ররোচনা দেবে তার রচনার সান্নিধ্যে যেতে। ভালো লাগলে–বলি একবার নয় বারংবার হানা দেবে। শিবলী মোকতাদির কবি, প্রাবন্ধিক