ভূমি-সংলগ্ন চিত্রময়তার কাছে চিরায়ত নতজানু আমি। যখন সাজ্জাদ সাঈফ তার প্রবেশিকা কবিতায় ভূমি স্পর্শ করেন তখন আমরাও তার সঙ্গী হই। ‘তুমি আমি ছায়া নিয়ে, ভুবনডাঙার ধারে’ কিংবা ‘এই ডাহা রোদ পানা পুকুরের চাঁদ, ভালোবাসো তুমি? এতোসব হাওয়াই মিঠাইওয়ালা হাড়বুড়া দখিনাবাতাস’ –তখন যেন মিঠাইওয়ালার সাথে গ্রামের আলপথ ধরে কিংবা দূর মফস্বলের মায়াবী পথে পথে রোদ্দুর কুড়াতে কুড়াতে পৌঁছে যাই ভুলে যাওয়া আলোর ইতিহাসে। “প্রেমপত্রের মেঘ” কাব্যগ্রন্থে কোথাও আরোপিত নাগরিক সৌন্দর্যের অচেনা রূপে কিংবা সোশ্যাল মিডিয়ার সস্তা জনপ্রিয়তার কাছেও তিনি থেকে যাননি, বরং অক্ষর-শব্দ-বাক্য নিয়ে নিরীক্ষা করেছেন। ‘ফুরফুরে দিগন্ত ও বিস্ময় চিহ্নের পাশে জোনাকি বসিয়ে দেখি’ অথবা ‘তার ছিলো চোখ-পেন্সিলে আঁকা, ক্ষণিক আকাশ বুকে!’ –এমন বাক্যবন্ধ প্রকৃত পাঠকের ভাবনাকে উসকে দেবে আশা করছি। তবে তার কথ্যভাষার ব্যবহারে অসম্ভব দখল দেখতে পাই “আমরা ভিজুম” কবিতায়। যেখানে তিনি আপন অনুভূতি মায়ার বাঁধনে আমাদের সামনে উপস্থিত করেছেন, আমরা একাত্মবোধ করছি তার আলোকচ্ছটায়– ‘দুই ধারে রোদ নিয়া বিদিক নদীও হাসে/ ঢোল-বেহালার হাসি, বিহানের কোলঘেঁষে/ ঋতুরাজ মহাকাশে যায়, পাখি ওড়ে, পাখা-ঘুম-ঘুম/ কোরক খুলছে রোদ, শেষ দৃশ্যে আমরা ভিজুম!’ কেন যে সাজ্জাদ এই ধারায় পুরো কাব্যগ্রন্থটি লিখলেন না, আক্ষেপ রয়ে গেল। ভূমি স্বর্গের দোরগোড়ায় এসে থমকে গেলাম, তিনি জাত চিনিয়েছেন তার এই স্বতঃস্ফূর্ত কবিতায়। সাজ্জাদ সাঈফ তার বুকপকেটে নদী ভাঙনের শব্দ নিয়ে মালা গাঁথেন এই সংকলনের প্রতিটি কবিতায়। আমি আগামী দিনের দিকে চেয়ে আছি এই কবির ‘সখী, কে সে ডাকে বিলের পানিতে? ডাকে ধানী চর?/ এই প্রেম ছনের কুটির খড়, গায়ে থাক পাতার অক্ষর। …‘এই প্রেম তীরের ফলায় গাঁথা কলিজার টুকরা কেমন/ ছুঁই ছুঁই জ্যান্ত দেখায়, মহাসড়কের ধারে প্লাবন যেমন!’ –এমন আরো সকল স্বর্গীয় চরণের অপেক্ষায়। জয়তু সাঈফ। –কবি শামীম রেজা