বাইরের আর ভিতরের চোখ যার তীক্ষè লেন্সে ঠাসা, যেখানে ধরা দেয় সাধারণ মানুষের অসাধারণ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সুখ আর এলিজি, আবেগে সিক্ত হয়ে, প্রকৃতির রঙে ও ঢঙে, মানুষের বিকশিত খুঁটিনাটি ভালোবাসার বাস্তবতম পূর্ণাঙ্গ প্রার্থনায়, জীবন দর্শন– ছবির অনুভব, নাটুকে সংলাপ, নৃত্যের ছন্দ, গানের সুর এ-সবের মিশ্র ভাবনার টান ও অভিজ্ঞতা কবি রনি বর্মনের কবিতায় আমেদুধে মিশে আছে এটা স্পষ্ট বোঝা যায়। ফলে তার কবিতা গড়ার বাগান ভিন্ন ঢঙে, উন্নত রুচিতে গড়ে ওঠার বাহানায় ব্যস্ত আছে। এ-গ্রন্থের কবিতাগুলো কখনো গল্পের পিছনে ছুটিয়ে তিনি কবিতাকে শিরা-উপশিরায় ঢুকিয়ে কাব্যের স্পন্দন বাড়িয়েছেন, দক্ষ শিল্পীর প্রজ্ঞায়, দ্রুতমান রেখেছেন ঘটনার গতি। প্রকৃতিনির্ভর বর্ণনাকে ভারমুক্ত করে সেঁটে দিয়েছেন ঘটনার গতরে। এই কবি– যিনি মানুষকে এঁকেছেন প্রকৃতির ধূসর রেখায়, প্রকৃতির বহু উপকরণে জাগিয়েছেন মানুষের সচল উদ্দিপনার ইন্ধন। তবে আরো সুনিশ্চিত পরিকল্পনা, প্রস্তুতির আন্তরিক পর্যায় কিংবা নতুনত্বের ঝুঁকিপূর্ণ আইডিয়া তাকে খানিকটা বেসামাল করেছে কিছু কবিতার অন্দরমহলে। প্রকৃতিকে কাছে টেনে ভাব, ভাষার উষ্ণতা দিয়ে বাক্যে উলুধ্বনি টেনেছেন– যেখানে সার্বিক বর্ণনায় রয়েছে রহস্যের হাতছানি, সেটুকু আসলে পাঠকেরই জন্য রয়ে গেল গোপনে, এই গোপন রহস্য উন্মোচনের দায়ভার বর্তায় সত্যিকারের একজন পাঠকের ঘাড়ে– অবশ্য পাঠক যদি ততদূর হাঁটেন, সেই শর্তে।। আসলে গোপন ভাঙার মন্ত্রচাবি দখলে থাকে যার, সে রাজ্য কবি ছাড়া অন্য কারো নয়। কবি রনি বর্মন এই রাজ্য ভেদ করে ভবিষ্যতের আনোখা রহস্যের জট খুলবেন এমন প্রত্যাশা করা যেতেই পারে।