চিন্তা এবং অগ্রসর হওয়ার নৈতিক দর্শন কীভাবে প্রয়োগ করবেন? কীভাবে চলতে হবে, দিকনির্দেশনা কী রকম হতে পারে, এ সম্পর্কে আপনার কি সাধারণ জ্ঞান বা বোধশক্তির অভাব আছে? আপনি কি আপনার জীবনে কীভাবে সাফল্য অর্জন করবেন, সে ব্যাপারে সঠিক তালিকা তৈরি করতে ব্যর্থ হয়েছেন? আপনার নির্দিষ্ট গন্তব্যে বা লক্ষ্যে পৌঁছাতে সঠিক পথ বেছে নিতে পারেন নি এবং এই ক্ষেত্রে অস্বস্তিভাব কি ফুটে উঠেছে আপনার মধ্যে? আপনার জীবনে চলার পথে ‘রোড টু সাকসেস’ বইটি নির্দেশিকা হিসেবে কাজ করতে পারে। সময়ের সাথে বাস্তবতার মিল রেখে যাচাই-বাছাই করে আপনি এই বইয়ে উল্লিখিত নির্দেশিকা অনুসরণ করতে পারেন। উপদেশ হিসেবে কাজে লাগাতে পারেন। বাস্তবিক অর্থে, দীর্ঘ এক দশক আগে বিলবোর্ডের আঙ্গিকে নেপোলিয়ন হিল প্রথমবারের মতো গ্রেড পয়েন্ট স্ট্যান্ডার্ড (জিপিএস) সিস্টেম চালু করেছেন, এর মাধ্যমে তিনি তাঁর ছাত্রছাত্রীদের সাফল্যের সোপানে অবস্থান কোথায়, সেটা জানাতে পেরেছেন। সেই সময়, যেটা সত্য ছিল এক দশক পর, আজও সেটাই সত্য, আর আপনি অবশ্যই সাফল্য অর্জন করতে পারবেন, যদি তাঁর সূত্র প্রয়োগ করতে পারেন আপনার জীবনে ও কাজকর্মে। তাঁর সূত্রের প্রয়োগ এবং সমন্বয় ঘটাতে পারলেই সফল হবেন। আপনি যখন বুঝতে পারবেন, ‘কীভাবে সফল হতে হয়’, তখন আপনি সহজেই দিকনির্দেশনা অনুসরণ করতে পারবেন, যা আপনাকে নির্দিষ্ট সময়ে সঠিক লক্ষ্যে পৌঁছাতে সহায়তা করবে। আপনি কি কার্যক্রম শুরু করতে প্রস্তুত আছেন? মনস্তাত্তিক শিক্ষক নেপোলিয়ন হিল আপনাকে সাহায্য করতে তৈরি আছেন। আপনার চলার পথে এই বইয়ের নীতি ও আদর্শ অনুসরণ করুন, নেপোলিয়ন হিল যে মত ও পথের কথা বলেছেন, সেটাই অনুসরণ করুন। এই বই আপনার চলার পথে আদর্শ হতে পারে, এই নীতি ও আদর্শ অনুসরণ করলে পথ হারাবেন না।
আমেরিকায় জন্মগ্রহণ করা অলিভার নেপোলিয়ন হিল আত্মোন্নয়নধর্মী রচনা লেখকদের মাঝে প্রথমদিককার একজন। ব্যক্তিগত উন্নয়ন ও সফলতা লাভের বিভিন্ন দিক লেখনীতে তুলে এনে বিংশ শতাব্দীর অন্যতম সফল আত্মোন্নয়নমূলক লেখক হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটে হিলের। নেপোলিয়ন হিলের জন্ম যুক্তরাষ্ট্রের সাউথইস্ট ভার্জিনিয়ায় ২৬ অক্টোবর, ১৮৮৩ সালে। আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে শেষ পর্যন্ত ল'স্কুলের পড়াশোনা শেষ করতে পারেননি তিনি। এর আগে থেকেই যুক্ত ছিলেন সাংবাদিকতার সাথে, সেই ১৩ বছর বয়স থেকে। ১৯০৮ সালে এন্ড্রু কার্নেগীর সাক্ষাৎকার নিতে গিয়ে হিলের জীবনে আসে বিশাল পালাবদল। তখনকার সময়ের অন্যতম প্রভাবশালী শিল্পপতি কার্নেগী তাকে পরামর্শ দেন ধনী ও সফল ব্যক্তিদের সাক্ষাৎকার নিতে ও তাদের সাফল্যের সূত্র সম্পর্কে জানতে। এরপর তিনি বিশ্ববিখ্যাত সফল ব্যক্তিদের সাক্ষাৎকার নেওয়া শুরু করেন। এই তালিকায় আছেন হেনরি ফোর্ড, আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেলসহ আরো অনেকে। এমন ৪৫টি সাক্ষাৎকারের লব্ধ অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনি প্রকাশ করেন তাঁর প্রথম রচনা 'দ্য ল অব সাকসেস'। এই বইয়ে তিনি সাফল্যের সূত্রকে ব্যখ্যা করেছেন গণতন্ত্র, স্বাধীনতা, পুঁজিবাদের সমন্বয়ে মূর্ত দর্শন দিয়ে। নেপোলিয়ন হিল এর বই সমূহ সাফল্যগাঁথার চেয়ে সাফল্যের পেছনের সূত্র সহজীকরণের পাথেয় হিসেবে অধিক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। বিখ্যাত এই লেখকের চরিত্রের কিছু রহস্যময় বৈশিষ্ট্য মানুষকে ভাবিয়েছেও বটে। তিনি দাবি করতেন, আত্মাদের সাথে তাঁর যোগাযোগ আছে, তাঁকে দেয় আধ্যাত্মিক জ্ঞান, সাফল্যের মন্ত্র। হিল এই বিষয়টি তাঁর ১৯৬৭ সালে প্রকাশিত বই 'গ্রো রিচ(!) উইথ পিস অব মাইন্ড' এ খোলাখুলিভাবে বর্ণনা করেছেন। বর্তমানে তাঁর জীবনের অজানা কিছু অধ্যায় উঠে এসেছে গবেষকদের চোখে। তবে নেপোলিয়ন হিল এর বই সমগ্র বিতর্কিত ব্যক্তিজীবনের প্রভাবেও জনপ্রিয়তা হারায়নি। তাঁর রচিত 'থিংক এন্ড গ্রো রিচ' সর্বকালের সেরা আত্মোন্নয়নমূলক দশটি বই এর তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। বিশ্বব্যাপী সমাদৃত নেপোলিয়ন হিল এর বই সমূহ হলো 'অ্যাটিটিউড মেন্টাল পজিটিভা', 'দ্য মাস্টার কি টু রিচেস', 'সাকসেস হ্যাবিটস' ইত্যাদি। বিতর্কিত চরিত্রের এই লেখক ১৯৭০ সালের ৮ নভেম্বর বেশ রহস্যজনকভাবে মারা যান। ধারণা করা হয়, তিনি পারকিনসন্স সিন্ড্রোমে ভুগছিলেন।