কতই বা বয়েস তার! স্কুল-পড়ুয়া ভলোদিয়া। শেপেতোফকা গাঁয়ের ভলোদিয়া কোভাল। এতই কম কথা বলে ভলোদিয়া যে স্কুলে তার একটা ডাকনামই চালু হয়ে গেছে―“কালা”। ওর কি আর কথা বলার সময় আছে? ও চায় রোদে পোড়া ঘাসের উপর শুয়ে থাকতে, চুপ করে কান পেতে বার্চের মৃদু ফিসফাস শুনতে, শরতের ঈষদুষ্ণ বাতাসে ভেসে বেড়ানো মাকড়সার মিহি জাল দেখতে, চড়–ইদের অবিশ্রান্ত কিচিরমিচির শুনতে। ভলোদিয়ার জীবনটা বেমালুম ওলটপালট হয়ে গেল, যখন নাৎসি জার্মানি শেপেতোফকা দখল করে ফেললো। “এই দেশপ্রেম জিনিসটা একজন সৈনিকের হৃদয়টা জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেয়, আর তাকে উসকে দেবার জন্য ঘৃণা তো আছেই”,―বলে সাশা চাচা। এই দেশপ্রেম, শত্রুর প্রতি ঘৃণা কি শুধু সৈনিকের বুকেই থাকে? ভলোদিয়াও কি তা-ই অনুভব করে না? হাতে কোনো অস্ত্র নেই, নেই গোলাবারুদ, ঐ দেশপ্রেমই তো সম্বল। আর সাহস, শত্রুকে হটানোর কী তীব্র অদম্য ইচ্ছা! শেপেতোফকায় জার্মান ঘাঁটিতে তাদেরকে দুর্বল করার জন্য একটার পর একটা কী ভয়ংকর দুঃসাহসী কাজই না করে গেছে ভলোদিয়া! মহাপরাক্রমশালী নাৎসি জার্মানিকে নিজেদের ভিটেমাটি থেকে তাড়াতে সবাইকেই নিশ্চয়ই একযোগে ঝাঁপিয়ে পড়তে হয়েছিল। কত সেনাপতি, সৈনিকেরা, যুবক-যুবতীরা যুদ্ধ করেছে, প্রাণ দিয়েছে। বীরের মতো প্রাণ দিয়েছে শেপেতোফকা গাঁয়ের ছেলেটির মতো এরকম আরও কত ভলোদিয়া। অনেকটা আমাদের একাত্তরের মতোই, তাই না?