মুখবন্ধ জীবন থেকে চরম নিষ্ফলতাকে পরম পাওয়া হিসেবে বুকে তুলে নিয়ে কবিতার হাতে হাত রেখেছি। এ কবিতা আমার জীবনের গূঢ় গভীর সত্যের অকুণ্ঠ নির্যাস। এই শ্যামল প্রকৃতি, নীল আকাশ, শুভ্র মেঘ, রিমঝিম বৃষ্টি, সাগরের গর্জন, পাতার মর্মরধ্বনি, জীবনের কলতান আমাকে যখন উদাস করে তোলে, আমার হৃদয়কথন তখন হেমন্তের শিশিরের মতো বিন্দু বিন্দু করে জমা হয় কবিতার বুকে। ধীমতি কবিতা সৃষ্টির ভজনা করি আমি। তাই সৃষ্টিসুখের উপভোগ্য কোনো উল্লাস আজো অনুভব করতে পারি না মননে। কাব্যপোসনার যে অর্ণব নিয়ত অনুরণিত হয় আমার আত্মদর্শন থেকে আত্মশোধনের পথে তার নির্বানধ্বনি বাজে আমার সমগ্র কাব্যচৈতন্যের অস্তিত্ব জুড়ে। আমি ক্ষণবাদে বিশ্বাস করি না। তবু সৃষ্টির অমোঘ নিয়মের দিকে তাকিয়ে দেখি অতি যত্নে হাতে ধরে রাখার মতো কিছুই থাকে না জগতে; সবই নশ্বর, সবই ক্ষণস্থায়ী– এই চরম সত্যের মুখোমুখি হয়ে অন্তরে যে ব্যথাটুকু অনুভব করেছি, তারই কিয়দংশ ভাগ করে নিতে চাই মান্যবর পাঠকের সাথে “হৃদয়ের স্রোতসিনী” কাব্যগ্রন্থের মধ্য দিয়ে। এই পরিক্রমায় আমি সর্বপ্রথম কৃতজ্ঞতা জানাই আমার পূর্ববর্তী প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ “বিদায় রাগিনী” ও “যে সুর বাজে গহীন পুরে”-এর সুপ্রিয় পাঠকদের যারা আমাকে উৎসাহিত করেছেন গভীরভাবে পরবর্তী কাব্যগ্রন্থের অপেক্ষা করে। রতন কুমার ঢালী, ঋকপ্রিয় ঢালী, রিখিয়া ঢালী– যারা আমাকে স্বাচ্ছন্দ্যে ও সাবলীলতায় পথ চলতে সহায়তা করেছে, কথাশিল্পী সন্তোষ কুমার শীল– যার হাত ধরে আমার কাব্যজগতে প্রবেশ, ড. অশোক মিস্ত্রী, নির্জন মজুমদার, অনিমেষ মন্ডলসহ কাছে বা দূরে থেকে যারা অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন– সকলের প্রতি আমার সশ্রদ্ধ কৃতজ্ঞতা।