ভূমিকা: এশিয়াটিক সোসাইটি ঐতিহ্য জাদুঘর প্রতিষ্ঠার বিষয়টি আমাদের বিবেচনায় আসার সময় আমরা কয়েকটি প্রকাশনা বের করার সিদ্ধান্ত নেই সম্পূরক পদক্ষেপ হিসেবে। জাদুঘরটি একটি বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান যা কেবল ঢাকার ইতিহাসের সময়কালকে তুলে ধরবে। তবে এই সময়কালটি ঢাকার ইতিহাসের একদিকে যেমন গৌরবোজ্জ্বল সময় তেমনি অন্যদিকে এক করুণ অধ্যায়ও বটে। এই করুণ অধ্যায়টির সাথে আমাদের জাতীয় ইতিহাসও জড়িত। এ সময়েই ঢাকা লক্ষ্য করে তার ধ্বংসযজ্ঞকে তার রাজনৈতিক ক্ষমতার অবসান, তার অর্থনীতির অবক্ষয় এবং সবচেয়ে বড় তার শিল্পের সামগ্রিক পতন। যার ফলে নগরীটি সংকুচিত হয়ে পড়ে। জনসংখ্যা কমে যায় এবং এর দেশীয় শাসকবর্গ সবকিছু খুইয়ে প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। এই ব্যাপক ইতিহাসকে শুধুমাত্র একটি জাদুঘরের মাধ্যমে প্রকাশ সম্ভব নয় ভেবে আমরা কতিপয় গ্রন্থ প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত নেই। তার উপর আমরা নিমতলী প্রাসাদের যে সংরক্ষণ কাজটি সম্পন্ন করেছি প্রকাশের মাধ্যমে তারও একটি প্রামাণিক দলিল রেখে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এর ফলে তিনটি প্রকাশনা যেমন- ১. History of the Naib-Nazims of Dhaka and the Nimtali Palace, 2. Conservation of Nimtali Deuri: A Historical and An Architectural Study এবং ৩. এশিয়াটিক সোসাইটি ঐতিহ্য জাদুঘর ও ঢাকার অ্যালবাম বের করার প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। আনন্দের বিষয় এ তিনটি গ্রন্থই পরিকল্পনা মোতাবেক প্রকাশ করা গেল। এ গ্রন্থগুলির প্রকাশের অন্যতম উদ্দেশ্য হলো- ঢাকার উপর গবেষণাকে চলমান রাখা। আমরা যে সময়টুকুর ইতিহাস পুনর্গঠন করছি, তা এ পর্যন্ত খন্ডিত অবস্থায় জানা যেত। আমরা চেষ্টা করেছি তাকে কিছুটা পূর্ণতা দিতে। কিন্তু আমরা বলতে পারব না যে তা সম্পূর্ণ করতে পেরেছি। এর মূল কারণ তথ্যের অভাব। তবে আমাদের ধারনা, সমকালীন তথ্য পাওয়া এখনও সম্ভব, তবে তার জন্য প্রয়োজন হবে আরো গবেষণার । বিশেষ করে সমকালীন দলিল খোঁজার জন্য প্রয়োজন ভারত, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের আর্কাইভস ও লাইব্রেরিগুলোতে অনুসন্ধান চালানো। আমাদের বিশ্বাস এ সমস্ত জায়গা থেকে আমরা আঠারো ও উনিশ শতকের ঢাকার উপর প্রয়োজনীয় তথ্য উদঘাটন ও সংগ্রহ করতে সক্ষম হবো। বর্তমান গ্রন্থটি মূলত আমাদের জাদুঘরে প্রদর্শিত নিদর্শন এবং সমকালীন রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জগতের সাথে জড়িত ব্যক্তিত্ব ও বস্তুর আলোকচিত্র এবং শিল্পীর আঁকা ছবির একটি অ্যালবাম। এ সবের মধ্যে দিয়ে একদিকে আমরা যেমন জাদুঘরের পরিচিতি এবং সেই সাথে ঢাকার অতীতের ছবি তুলে ধরতে সক্ষম হবো তেমনি জাদুঘরে প্রদর্শিত নিদর্শনের সাথে পরিচিতও হওয়া যাবে। এ প্রসঙ্গে জাদুঘরের নিদর্শন সম্পর্কে আলোচনা করা যেতে পারে। বলা বাহুল্য, আমরা নিমতলী দেউড়ি বা নিমতলী প্রাসাদের কোন সামগ্রীই পাইনি। এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, এই প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনাটি বহুদিন যাবৎ পরিত্যক্ত ছিল এবং মূল প্রাসাদসমূহ বহু পূর্বেই ভেঙ্গে ফেলা হয়। ফলে আমাদের অন্যের সাহায্য নিতে হয়। আনন্দের বিষয় ঢাকার বহু বনেদি ও প্রাচীন পরিবারের অনেকেরই কাছে নমকালীন ঢাকার বহু নিদর্শন সংরক্ষিত ছিল। আমাদের অনুরোধের প্রেক্ষিতে তারা স্বত:স্ফূর্তভাবে তাদের কাছে সংরক্ষিত জিনিসপত্র আমাদের সম্মুখে উপস্থাপন করেন এবং যা কিছু প্রয়োজন তা নিতে অনুরোধ করেন। তাঁদের এই বদান্যতা এবং ইতিহাসমুখী উৎসাহের ফলেই আমরা বহু মূল্যবান নিদর্শন সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছি। এই নিদর্শনগুলির অধিকাংশেরই আলোকচিত্র বর্তমান অ্যালবামে স্থান পেয়েছে।