মুখবন্ধ থেকে ব্যক্তি-মানুষ এবং তার চারপাশের জীবন নিয়েই উপন্যাসের কাহিনি পল্লবিত হয়। শাখা-প্রশাখায় সমাচ্ছন্ন, বহুভুজ জীবনের কলস্বর হয়ে উঠে উপন্যাস। বাস্তবের মাটি দিয়ে কল্পনার মূর্তি গড়ে তোলা, সেই এক অনির্বচনীয় কাজ। মাটি-টা বাস্তবের, পুতুলটা বাস্তব নয়, বাস্তবের অনুরূপ। উপন্যাসের প্রধান কাজ, জীবনকে উন্মোচিত করা, খুলে-মেলে ধরা। কারণ, জীবন কেবল কিছু সময়খণ্ডের নাম নয়-স্তরবহুল জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে অজস্র সম্পর্কের সূত্র। সম্পর্ক একরৈখিক নয়, বহুবঙ্কিম। সম্পর্কের রূপান্তর হয়, সম্পর্কের বদল ঘটে। কাছের মানুষ দূরের হয়ে যায়, দূরের মানুষ আপন হয়ে ওঠে। মানবীয় সম্পর্কের এই রূপ-রূপান্তরকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে তানভীর আহমেদ গাজী রচিত ‘সম্পর্কহীন ‘ উপন্যাস। অবনীতা, অর্নব, মা, শাশুড়ি, ফারাবি, দিলরুবা, আশিক চৌধুরী, ফারজানা চৌধুরী, তাহমীদ, তামজীদ চরিত্রগুলোর পারস্পরিক সম্পর্কের ভাঙাগড়া, বাস্তবোচিত ভাষায় বর্ণিত হয়েছে উপন্যাসে। গ্রামীণ, সাধারণ পরিবারে জন্ম নেয়া অবনীতার মতো একটা মেয়ের ক্রমাগত এগিয়ে যাওয়া, প্রতিকূলতাকে অতিক্রম করে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ থেকে পাশ করে জজ হওয়া, সত্যি বিস্ময়কর। আমাদের অনুদার সমাজে এমন তেজস্বী নারী-চরিত্র খুব একটা দেখা যায় না। ‘সম্পর্কহীন’ তানভীর আহমেদ গাজীর প্রথম উপন্যাস হলেও অবনীতার মতো সংগ্রামশীল, প্রজ্বলিত নারী-চরিত্র আমাকে মুগ্ধ করেছে। এই নবীন কথাকার নিজের আত্মপ্রত্যয়ে বিকশিত হবে, এ আমার প্রত্যাশা ।