বইটি সম্পর্কে কিছু কথা: বাংলাদেশের ইতিহাস বহু অর্থে কৃষক সমিতিরই ইতিহাস। কৃষক সমিতি এবং তার সাথে সংশ্লিষ্ট থেকেই এদেশে শ্রমিক আন্দোলন ও ছাত্র আন্দোলনের যে বীজ বোনা হয়েছিল, সেই ইতিহাস আজ বহুলাংশেই অজানা। মওলানার স্বপ্ন ছিল সংখ্যাগরিষ্ঠের স্বার্থের দেখভাল করবে, এমন একটি রাষ্ট্র নির্মাণ। কিন্তু যে রাষ্ট্রটি নির্মিত হয়েছিল, জনগণের বাকি সকলের স্বার্থকে তারা আত্মসাৎ করেছিল বলেই ইতিহাসে তাদের অবদানকেও লুকিয়ে ফেলাটা তাদের জন্য প্রয়োজনীয় ছিল। বলা যায় মূলধারার অধিকাংশ ইতিহাস গ্রন্থে পুরো পাকিস্তান আমল জুড়ে কৃষকদের সেইসব আন্দোলনের খবর প্রায় মেলে না; বড়জোর কয়েক পঙ্ক্তিতে মওলানা ভাসানীর উল্লেখ করা হয়। সেই কারণেই কৃষক সমিতির দলিলপত্র নিয়ে প্রকাশিত এই গ্রন্থটি অত্যন্ত মূল্যবান। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যে রাতারাতি আসেনি, তার পেছনে কৃষকের, শ্রমিকের দীর্ঘ সংগ্রাম আর আত্মত্যাগের ইতিহাস আছে, সেই সত্যটিকে এই গ্রন্থটি আজকের পাঠকের সামনে তুলে ধরেছে। গবেষকরা একে মূল্যবান আকরগ্রন্থ হিসেবেই বিবেচনা করবেন, বাংলাদেশের গ্রামীণ জনপদে বাঁকবদলের, সংগ্রাম গড়ে উঠবার, এবং কেন কীভাবে এই কৃষক সংগঠকরা পাকিস্তানের হানাদার বাহিনী আর বাংলাদেশের সরকার উভয়েরই চক্ষুশূল হয়েছিলেন, তার কারণও হৃদয়ঙ্গম করতে পারবেন। যারা ইতিহাসের এই নানান সন্ধিকালে জ্বলে ওঠা স্ফুলিঙ্গগুলোর উৎসমূল খুঁজতে চান, প্রবহমান অন্তঃস্রোতা লাভাস্রোতকে চিনতে চান, তাদের জন্য এই গ্রন্থ অবশ্যপাঠ্য।
সৈয়দ ইরফানুল বারী জন্ম ১৯৪৫ সালের ১ মার্চ, কিশােরগঞ্জে।। '১৯৬০ এর দশকের তােলপাড় করা দ্বন্দ্বমুখর রাজনৈতিক সময় তাকে টেনে এনেছিল রাজনীতির স্রোতে। '১৯৬৭-তে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর হবার এবং সাংবাদিকতার অভিজ্ঞতা অর্জন করার কোনাে মূল্য থাকলাে না যখন মওলানা ভাসানী তাকে বললেন, শ্রমজীবী মানুষের কল্যাণে কাজ করতে কোনাে ডিগ্রির দরকার হয় না, দরকার ত্যাগের। ১৯৬৯ থেকে নতুন জীবন শুরু হয়েছিল কঠোর অনুশীলন, ত্যাগ এবং অধ্যবসায়ের মাধ্যমে তিনি হয়ে উঠেছিলেন মজলুম জননেতার প্রিয়-কর্মী। দীর্ঘদিন পালন করেছেন তাঁর ব্যক্তিগত সচিবের দায়িত্ব। তার জন্ম টাঙ্গাইলে নয়, কিন্তু তা সত্ত্বেও মওলানা ভাসানীর সন্তোষ-আশ্রম কোনােদিন ছাড়েননি। দেশ-বিদেশ ঘুরেছেন। তথাকথিত ‘উন্নত জীবনের হাতছানি পেয়েছেন। কিন্তু ফিরে এসেছেন সন্তোষের শিশির-বিন্দুতে।। বর্তমানে তিনি মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কোর্স শিক্ষক।। ছাত্র-ছাত্রীদের পড়ান ‘মওলানা ভাসানী স্টাডিজ’। আক্ষরিক অর্থেই শয়নে-স্বপনে তার ধ্যান-জ্ঞান মওলানা ভাসানী।।