সর্বোচ্চ সফলতার সন্ধানে (প্রেক্ষিত আল-কুরআন) সাদামাটা দু’টি কথা বিসমিল্লাহিররাহমানির রহীম সফলতা! প্রত্যেকেই চায় সফলতা; সফলতা চায় জীবনের অধ্যায়ে অধ্যায়ে; জীবনের প্রতিক্ষেত্রে-সমগ্র জীবনে। তাই সে ছোটে বল্গাহীন হরিণের ন্যায় সোনার হরিণের পিছনে। সে খাটায় তার মেধা-মনন, বুদ্ধি ও প্রজ্ঞা এবং শারীরিক, মানসিক যোগ্যতা ও দক্ষতা। এভাবে সবাই আরোহণ করতে চায় সফলতার শীর্ষে। আর তাই সৃষ্টি হয় প্রতিযোগিতা। স্বল্প মেধা-মনন, শারীরিক ও মানসিক যোগ্যতা ও দক্ষতার অধিকারীরাও এ ক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকতে চায় না। তাই তারা অনেক ক্ষেত্রে আশ্রয় নেয় প্রতারণা, মিথ্যাচার, ছল- চাতুরি ও ষড়যন্ত্র কৌশলের। এভাবে তারা গড়ে তুলতে পারে বিত্ত, বৈভব, সম্পদের সুউচ্চ পাহাড়; অর্জন করতে পারে গগন চুম্বি সুনাম সুখ্যাতি। আর এমনটি করে সর্বোচ্চ সফলতার মুকুট শীরে ধারণ করতে। সঞ্চিত বিত্ত-বৈভব ও সম্পদের এ পাহাড় এবং অর্জিত সুনাম, সুখ্যাতি ও প্রতিপত্ত্রি এ আকাশ তাদেরকে কতটুকু সুখ, শান্তি, সমৃদ্ধি ও তৃপ্তি দিতে পারে? এর স্থায়িত্ব, পরিধি, পরিসীমা ও ব্যাপকতাই বা কেমন? এ কি এমন সুখ, শান্তি, সমৃদ্ধি ও তৃপ্তি দিতে পারে- যার কোন শেষ নেই, ক্ষয় নেই, হ্রাস নেই, বিলুপ্তি নেই- যা অনন্ত, অসীম ও চিরন্তন? সমগ্র পৃথিবীর সকল ধনকুপের, সকল ব্যক্তির ধন-সম্পদ, সম্মান, মর্যাদা ও প্রতিপত্তি একত্রিত করে সঞ্চিত করলেও কি সেটা সম্ভব? প্রকৃতপক্ষে এ পৃথিবীতে কখনো কারো পক্ষে এটা সম্ভবপর নয়। আবার সফলতার শীর্ষে আরোহণ করতে গিয়ে অনেকে এমন পন্থা অবলম্বন করে যে, আপাতত দৃষ্টিতে নিজকে উন্নতি ও সমৃদ্ধির সমুদ্রে অবগাহণ করছে বলে প্রতীয়মান হয়। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে, সমাজ, দেশ, জাতি ও মানবতার তারা ক্ষতি ও অকল্যাণই সাধন করে থাকে। সত্যিকার অর্থে এরাই ব্যর্থতার কৃষ্ণ গহীন গহবরে নিপতিত হয়। তাহলে প্রকৃত সর্বোচ্চ সফলতা কী, কী-ই বা এর সংজ্ঞা, কীভাবেই বা এ অর্জন করা যায়? এরূপ সফলতাই খুঁজে ফিরছে আমার এ গ্রন্থ ‘সর্বোচ্চ সফলতার সন্ধানে’। এ গ্রন্থ বারোটি প্রবন্ধের সমন¦য়ক- যার ভিত্তি কুরআন- সুন্নাহ এবং কুরআন- সুন্নাহের আলোকে লিখিত বেশ কয়েকজন স¦নামধন্য লেখকের গ্রন্থ। এ গ্রন্থ প্রণয়ন করেত গিয়ে বেশ কয়েকজন আধুনিক জ্ঞানে পুষ্ট ও কুরআন- সুন্নাহ তথা ইসলামী জ্ঞানে আলোকিত ব্যক্তি আমাকে তাঁদের সহযোগিতার সদয় হস্ত প্রসারিত করেন। তাঁদের মধ্যে সর্বাগ্রে যাঁর নাম শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতার সাথে উল্লেখ্য, তিনি হলেন জনাব মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক, সিনিয়র শিক্ষক, সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, ঝিনাইদহ, মুফতি ও ইসলামী চিন্তাবিদ। আমার পুত্রদ¦য় হাছিব আমিন শিশির (জ্যেষ্ঠ পুত্র), সাকিব আমিন ছানিম (কনিষ্ঠ পুত্র), কনিষ্ঠ পুত্রের বন্ধু মো: রাকিব হাসান ও আমার ছাত্র মো: রুহুল আমিন যে প্রবন্ধগুলি কম্পোজ করেছে এবং প্রæফ দেখায় সহযোগিতা করেছে। আমার স্ত্রী প্রবন্ধগুলি প্রণয়নে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন। মহান আল্লাহ তাদের সবাইকে উত্তম প্রতিফল দান করুন। আমিন। সাধারণ আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত আমি কুরআন-সুন্নাহে স্বল্প জ্ঞানের অধিকারী এক নগন্য ব্যক্তি। তদুপরি আমি জানি, সর্বোচ্চ জ্ঞানের আধার আল-কুরআন। নি:সন্দেহে এটা আল্লাহর বাণী। তাই এ কুরআনকে ভিত্তি করে আমার এ লেখা। এ গ্রন্থে পবিত্র কুরআনের উদ্ধৃত আয়াতের বঙ্গানুবাদ (হাফেজ মুনির উদ্দিন আহমদ কর্তৃক অনুদিত) আল কুরআন একাডেমী লন্ডন, থেকে গৃহীত। তাই তাঁর প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। একমাত্র মহান আল্লাহ ব্যতীত কেহ ভুলের উর্দ্ধে নয়। তাই লেখার ক্ষেত্রে যে কোন বিষয়ে আমারও ভুল হতে পারে। এ ক্ষেত্রে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখলে কৃতার্থ হবো। মুদ্রণজনিত যে কোন ত্রæটি দৃষ্টিগোচরে আনলে পরবর্তী সংস্করণে সংশোধনের আশা রাখি। যদি মহান আল্লাহ আমার এ লেখাকে রোজ হাশরে আমার জন্য মুক্তির অছিলা বানিয়ে দেন এবং একজন পাঠকও এটা পড়ে উপকৃত হন, তাহলে আমার লেখা সার্থক হয়েছে বলে আমি মনে করবো। পরিশেষে, আমি এ কামনা করি, হে আমার প্রতিপালক, আমার এ লেখা, লেখক পাঠক এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট সবাইকে নাজাতের অছিলা বানিয়ে দিও। আমিন।