সব মা বাবার আকাঙ্ক্ষা তাদের বাচ্চারা যাতে সুস্থ, সবল হয়ে জীবনের বাধা বিপত্তি পেরিয়ে সফল হয়ে উঠে। কিন্তু সব সময় সেসব আশা বাস্তবতার মুখ দেখে না বরং এসব শিশু মাবাবা এবং সমাজের বোঝা হয়ে উঠে। জীবদ্দশায় মাবাবা এসব সন্তানদের যেভাবে হোক দেহভাল করলেও চিন্তায় পড়ে যান তাদের মৃত্যুর পর কারা এদের দেখাশুনা করবে। উন্নত বিশ্বে সরকার দায়িত্ব নিলেও দূঃখবোধ থেকে যায় মাবাবার কাঁধে। কিন্তু অনুন্নত দেশে দায়িত্ব এবং দূঃখবোধ সবই থেকে যায় মাবাবার কাঁধে। উন্নত বিশ্বের গবেষনায় দেখা গেছে শতকরা ১২ থেকে ১৫ শতাংশ শিশুই বিশেষ সমস্যা ও চাহিদাযুক্ত। এ হিসাবে আমাদের দেশে এই সংখ্যাটা অনেক বড়। কিন্তু দুঃখের বিষয় আমাদের মাবাবা এবং শিক্ষকদের কাছে বিশেষ শিশুদের চাহিদা, সমস্যা এবং তাদের ম্যানেজমেন্ট অনেকটাই অজানা রয়ে গেছে। বিদেশে এ নিয়ে অনেক গবেষনা এবং বই পুসতক লেখা হলেও বাংলা ভাষায় এ বিষয়ে লিখা বই খুবই অপ্রতুল। বিশেষ সমস্যা ও চাহিদাযুক্ত শিশুদের সমস্যাগুলোকে মোটামোটি তিন ভাগে ভাগ করা যেতে পারে – ক। প্রধানত জিনজনিত সমস্যা খ। প্রধানত পরিবেশজনিত সমস্যা এবং গ। জিন ও পরিবেশের পারষ্পরিক ক্রিয়া- প্রতিক্রিয়াজনিত সমস্যা। প্রধানত জিনজনিত সমস্যার কারনে ডাউন সিনড্রোম, অটিজম, থ্যালাসিমিয়া, মাস্কুলার , ডিসট্রফি, আজন্ম বধিরতা এবং মানসিক প্রতিবন্ধকতা উল্লেখযোগ্য। প্রধানত পরিবেশজনিত সমস্যার মধ্যে সেরিব্রাল পলসি, দৃষ্টিহীনতা, দৃষ্টিক্ষনতা এবং অনেকক্ষেত্রে শিক্ষাগত প্রতিবন্ধকতা উল্লেখযোগ্য। জিন ও পরিবেশগত পারষ্পরিক ক্রিয়ার ফলে যেসব সমস্যা দেখা দেয়, তার মধ্যে মানসিক প্রতিবন্ধকতা, অমনোযোগ ও চঞ্চলতাজনিত সমস্যা ( ADHD), ভাষা বিকাশের সমস্যা, এপিলেপ্সি ইত্যাদি। এই শ্রেনীবিভাগ কৃত্রিম ও আপেক্ষিক। অনেকগুলো সমস্যার সঠিক কারন এখনো জানা যায়নি। তাই বলা যায়, শ্রেনীবিভাগ নিরপেক্ষভাবে বিশেষ চাহিদার শিশুদের মধ্যে এসব ধরন দেখা যায়। অধিকাংশের সমস্যার প্রকাশ জন্মের পর থেকেই বা জন্মের কয়েক বছর পর থেকেই হতে থাকে। এদের মধ্যে অধিকাংশের কারন জানা না থাকায় সমাধান বের করা যায়নি, তবে উপযুক্ত থেরাপি ও মেডিকেশনে সমস্যার প্রকোপ হ্রাস করা যায়। তারপরও শিশুটিকে তার সীমাবদ্ধতা নিয়েই জীবন যাপন করতে হয়। এসব সমস্যা হ্রাস করতে বিভিন্ন শিক্ষাভিত্তিক ও থেরাপিভিত্তিক ( স্পিচ থেরাপি, ফিজিওথেরাপি,অকুপেশন থেরাপি ইত্যাদি) চিকিৎসা ব্যবহার করতে হয়। সমস্যা হ্রাসের শুধুমাত্র একটি মুলমন্ত্র হল- যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রোগ নির্নয় করে উপযুক্ত থেরাপি শুরু করা। কারন বয়স বাড়ার সাথে সাথে তার মস্তিষ্কের নমনীয়তা এবং পরিবর্তনের ক্ষমতা হ্রাস পেতে থাকে।