‘হারিয়ে যাওয়া পদরেখা’ ঐতিহাসিক পুরাতত্ত্বের সন্ধানে কৃত এক ভ্রমণের আনুপূর্বিক বৃত্তান্ত। পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষায় অনেক ভ্রমণকাহিনিই লেখা হয়েছে৷ সেসবের মধ্যে খুব কমসংখ্যকই হয়তো হয়ে উঠতে পেরেছে সার্থক ভ্রমণকাহিনি। সার্থক ভ্রমণকাহিনি রচনা সোজা নয়। তার জন্য চাই পাকা হাত আর সজাগ দৃষ্টি৷ একটি সার্থক ভ্রমণবৃত্তান্তের লেখক তার ভ্রমণ-ক্ষেত্রে নিছক একজন পরিব্রাজক হয়ে যান না, নতুন দেশে নতুন জায়গায় গেলে সজাগ এবং অনুসন্ধিৎসু হয়ে ওঠে এই ভ্রমণকারীর মন। সমস্ত ইন্দ্রিয় দিয়ে তিনি পেতে চান অভিনবকে, তার সামনে খুলে যায় জীবনের নব নব বোধ এবং আনন্দের জানালা৷ সেইসব উপলব্ধি আর আনন্দ যখন বস্তুনিষ্ঠ হয়ে সুনিপুণভাবে পরিবেশিত হয়, পরিবেশিত হয় তাবৎ জিজ্ঞাসা এবং অনুসন্ধিৎসার সার, তখনই সেটি হয়ে ওঠে একটি সার্থক ভ্রমণকাহিনি; আর পাঠক তখন হয়ে ওঠেন ভ্রমণকারীর মানস-সঙ্গী৷ ‘কোনো নতুন শহরে বা বন্দরে ভ্রমণের সাধারণ পরিচয় নয়, সেখানকার সুস্বাদু ভোজ্য-তালিকা, সুলভ বস্তুতালিকা বা হোটেল-বিবরণীও নয়, ভ্রমণকাহিনি তারচেয়েও অতিরিক্ত কিছু৷ এই অতিরিক্ত তিনিই দিতে পারেন, যাঁর চোখ-কান খোলা এবং ইন্দ্রিয়গ্রাম থাকে সচেতন। ভ্রমণকাহিনি ভ্রমণ ও কাহিনির যোগফল মাত্র নয়, তার চেয়ে স্বতন্ত্র কিছু৷ এই স্বাতন্ত্র্য তার চরিত্রে, তার মেজাজে, তার উপস্থাপনায়৷ আসল কথা হচ্ছে—জাগ্রত, কৌতূহলী, সদা-সচেতন মন একটা সার্থক ভ্রমণকাহিনির মূলে সক্রিয় থাকে। নিখুঁত পর্যবেক্ষণ এবং তার সুনিপুণ রূপায়ণ ভ্রমণবৃত্তান্তের সফলতার মূলে অনেকটা কাজ করে। ’ এসব দিক বিবেচনায় বলা যায়, হারিয়ে যাওয়া পদরেখা হয়ে উঠতে পেরেছে লেখক ইসমাইল রেহানের একটি সার্থক ভ্রমণকাহিনি৷ বাংলাভাষী পাঠকবৃন্দ এটি সাদরে গ্রহণ করবেন বলেই আমাদের বিশ্বাস এবং প্রত্যাশা।
নাম মুহাম্মদ ইসমাইল। ‘ইসমাইল রেহান’ তার কলমি নাম। হাফেজ, মাওলানা। জন্মেছেন করাচীতে। পহেলা ফেব্রুয়ারি, ১৯৭১। বাবা আব্দুল আজিজ। তার পূর্বপুরুষরা দেশভাগের সময় ইসলামি দেশে বসবাসের জন্য পশ্চিমবঙ্গ থেকে পাকিস্তানে হিজরত করেন। করাচীর পুরনো গোলিমার এলাকায় বড় হয়েছেন। মায়ের কাছে দ্বীনিয়াত বিষয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি স্থানীয় স্কুলে ফরমাল এডুকেশন গ্রহন করেন। ১৯৮৬ সালে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এরপর ভর্তি হন দারুল উলুম করাচীতে। বাহাদুরাবাদের জামেয়া মা’হাদুল খলীল আল ইসলামী থেকে ১৯৯৫ সালে তাকমীল সমাপন করেন। এর মাঝে আল্লামা আবদুর রশীদ নু’মানীর শিষ্যত্ব অর্জন করেন। তারপর ২০০৬ সালে করাচী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে বি.এ (সম্মান) এবং ২০১০ সালে করাচীর উর্দু বিশ্ববিদ্যালয় (FUUAST) থেকে মাস্টার্স ডিগ্রি সমাপ্ত করেন। দীর্ঘ দুই দশক ধরে শিক্ষকতা করে আসছেন। ‘যরবে মুমিন’ ও ‘রোজনামা ইসলাম’ পত্রিকায় কলাম লিখে বিখ্যাত হয়েছেন। ২০০৬ সাল থেকে ২০০৯ পর্যন্ত মাসিক সুলূক ও ইহসান পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক ছিলেন। শিশুদের জন্য প্রকাশিত একটি পত্রিকা ‘বাচ্চোঁ কা ইসলাম’ ও নারীদের নিয়ে প্রকাশিত ‘খাওয়াতিন কা ইসলাম’ পত্রিকার সম্পাদনা র সঙ্গেও জড়িত ছিলেন।