লেখালেখির জগতে হাজেরা খাতুনের আগমন খুব আগে নয়, তবে সাহিত্যের মেধাবী ছাত্রী হিসেবে আপন আঙিনায় বিচরণের ইতিহাস তাঁর দীর্ঘদিনের। বাংলা সাহিত্যের সঙ্গে আঙ্গাআঙ্গি সম্পর্কে থেকেছেন সবসময়। কুঁচকড়ি তাঁর প্রথম গল্পগ্রন্থ। তেরোটি ছোটগল্প রয়েছে এ গ্রন্থে। গল্পগুলো প্রায়ই গ্রামীণ প্রেক্ষাপটে রচিত। গ্রামের মেঠোপথ, গ্রামীণ পরিবেশ, ফুল-ফসল আর সাধারণ সরল-সহজ মানুষের চরিত্রগুলো অনায়াস নিরাভরণ উপস্থাপিত হয়েছে হাজেরা খাতুনের ছোটগল্পে। কুঁচকড়ি নামগল্পটি রয়েছে গ্রন্থের প্রারম্ভেই। গল্পের শুরুতেই লেখক কুঁচকড়ির পরিচিতি দিয়েছেন। কুঁচকড়ি একজাতীয় লালবর্ণের ফল। দেখতে সুন্দর, টেকসই হালকা ছোট হওয়ায় সোনারূপার ওজন পরিমাপে এই ফল ব্যবহার করা হয়। লালকালো ছোট্ট তসবীহদানার মত ফলটি শিশু-কিশোরসহ সকলের কাছেই খুব পছন্দের। গ্রন্থের অন্যতম গল্প লবডঙ্কায় রিটায়ার্ড স্কুল মাস্টারের অভাবতাড়িত অথর্ব জীবনযাপন। একসময় যে সামান্য বেতন পেতো, তাতে কোনোরকমে সংসার চললেও আর যাই থাকুক সংসারে শান্তি ছিলো। অবসরের পর স্ত্রী ও কন্যাদের কাছে তাঁর অবস্থান হয়ে উঠলো ভীষণ দূর্বিসহ। স্ত্রীর ক্ষেদোক্তি কন্যাদের অসম্মান একসময় তাঁকে বাড়ি থেকে অজানা গন্তব্যের পথে বেরিয়ে পড়তে বাধ্য করে। ব্যবসায়ী বন্ধুর বিলাসবহুল জীবনযাপনে নিজেকে তুলনা করে। শিক্ষক হিসেবে তাঁর অবস্থানই কি তাকে সমাজে একটু সম্মানজনক বেঁচে থাকার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করে? অচেনা জায়গায় শেষপর্যন্ত মৃত্যুবরণই হয় তাঁর নিয়তি। লেখকের প্রতিটি গল্পের অসাধারণ ঘটনাপ্রবাহ পাঠককে চুম্বকের মত বেঁেধ রাখে। গ্রামীণ যৌথ পরিবারগুলোয় যেমন হয় তাঁর গল্পের কাহিনিও এগিয়েছে সেই সমান্তরালে। কাহিনির প্রয়োজনে অনেক চরিত্র এসেছে, তবে লেখকের উদ্দেশ্য কাহিনি বর্ণনা নয়, গ্রামীণ শব্দ, ঐতিহ্য এবং সামাজিক দায়িত্ববোধকে সকলের সামনে উপস্থাপন। লেখক তাঁর ক্যারিশমা দিয়ে কাহিনি, শব্দ ও চরিত্রগুলোকে যেরূপ ঐকসূত্রে গাঁথতে চেয়েছেন বলা যায় অনবদ্য। লোকজ সংস্কৃতির দূঃসময়ে লেখকের এহেন প্রচেষ্টা ও উদ্যোগ খুবই প্রশংসনীয়।