১৯৪৭ সালের দেশবিভাগের সময় থেকে গড়ে ওঠা ঢাকা– কেন্দ্রিক বাংলা সাহিত্য মূলত বাংলাদেশের সাহিত্য। কালের দিক থেকে বাংলাদেশের সাহিত্য চল্লিশের শেষার্ধ থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত বিস্তৃত। বিশ শতকের শেষার্ধ বাংলাদেশের সাহিত্যের প্রথম কয়েক দশক, যদিও এর পটভূমিকায় রয়েছে হাজার বছরের বাংলা সাহিত্যের ঐতিহ্য। বাংলাদেশের সাহিত্যের পটভূমিকায় যে দেশ– কাল রয়েছে তাতে পাওয়া যায় চল্লিশ দশকে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, দেশ বিভাগ, উদ্বাস্তু, নতুন রাষ্ট্রগঠন এবং ভাষা আন্দোলনের সূত্রপাত। পঞ্চাশ দশকে ভাষা ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন এবং নির্বাচন, সামরিক শাসনের উদ্ভব। ষাটের দশকে স্বৈরাচার বিরোধী সংগ্রাম, স্বাধিকার আন্দোলন, গণ– অভ্যুত্থান, মহাপ্রলয়, নির্বাচন। সত্তর দশকের সবচেয়ে বড় ঘটনা মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীন বাংলাদেশের উদ্ভব। আশির দশকের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন। মূলত ১৯৪৭ থেকে ১৯৯০ পর্যন্ত আমাদের কেটেছে ঐসব তীব্র রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক ঘটনাবলির টানাপোড়নে। বাংলাদেশের সাহিত্য বহুলাংশে নিয়ন্ত্রিত হয়েছে ঐসব ঘটনা ও সংঘাতের দ্বারা বাংলাদেশের সাহিত্য বিশেষভাবে দেশ– কাল নিয়ন্ত্রিত। বাংলাদেশ ভূখণ্ডের মানুষ গত তিন– চার দশক ধরে স্বাভাবিক ও সম্মানজনক জীবনের জন্যে যে সংগ্রাম করে আসছে বাংলাদেশের সাহিত্যে তারই প্রতিফলন পড়েছে বইটিতে এইসব বিষয় নানা উদাহরণসহ হাজির হয়েছে।
রফিকুল ইসলাম (১৯৪৩-) চাঁদপুর জেলার মতলব উত্তর উপজেলার কলাকান্দা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। রফিকুল ইসলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে লেখাপড়া করেন। ভাষাতত্ত্বে উচ্চতর প্রশিক্ষণ ও গবেষণা সম্পাদনা করেন আমেরিকার কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়, মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়, মিশিগান-অ্যান আরবর বিশ্ববিদ্যালয় এবং হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইস্ট ওয়েস্ট সেন্টরে। তিনি ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন ও একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর বন্দীশিবিরে নির্যাতিত হন। ১৯৫৮ সাল থেকে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা ও নজরুল গবেষণায় নিয়োজিত রয়েছেন। ‘নজরুল নির্দেশিকা’, ‘ভাষাতত্ত্ব’, ‘নজরুল জীবনী’, ‘শহীদ মিনার’, ‘বাংলা ভাষা আন্দোলন’, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮০ বছর’, ‘অ্যান ইন্ট্রোডাকশন টু কলোকোয়্যেল বেঙ্গালি’ প্রভৃতি তাঁর উল্লেখযোগ্য বই। স্বাধীনতা পুরস্কার, একুশে পদক এবং বাংলা একাডেমি পুরস্কারসহ তিনি আরো অসংখ্য সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন।