মুসলমানকে যে হিন্দুর বিরুদ্ধে লাগানাে যাইতে পারে এই তথ্যটাই ভাবিয়া দেখিবার বিষয়, কে লাগাইল সেটা তত গুরুতর নয়। শনি তাে ছিদ্র না পাইলে প্রবেশ করিতে পারে না, অতএব শনির চেয়ে ছিদ্র সম্বন্ধেই সাবধান হইতে হইবে। এমনভাবে রবীন্দ্রনাথ ভারতবর্ষের সাম্প্রদায়িক অসম্মিলনের প্রশ্নটির শিকড় ছুঁয়েছেন। রবীন্দ্রনাথের সাবধানবাণী মানবার মতাে সতর্কতা আমরা দেখাতে পারিনি। পারিনি বলেই সমগ্র বিশ শতক জুড়ে সাম্প্রদায়িক হানাহানির রক্ত-আগুনে এ-দেশের ইতিহাস নিরবচ্ছিন্নভাবে কলুষিত হয়েছে। একুশ শতকের শুরুতে বিষয়টি দানবীয় মাত্রা পেয়েছে। অপ্রীতির ফাটলকে কাজে লাগিয়ে উগ্র ধর্মীয় জাতীয়তাবাদ এ-দেশের উপর যথেষ্ট আধিপত্য প্রসারিত করেছে। সর্বব্যাপী আধিপত্য প্রসারিত করার মহড়া দিচ্ছে। সম্পর্ক শীর্ষক এই সংকলনটি অবশ্য অসম্প্রীতির বঙ্গীয় চরিত্রকেই ছােটোগল্পের শিল্পায়তনে রেখে বুঝতে চেয়েছে। রবীন্দ্রনাথের যে-সতর্কবাণী দিয়ে আমরা শুরু করেছিলাম তা থেকেই স্পষ্ট হয় অপ্রীতির ছিদ্র আমাদের জনগােষ্ঠী সম্প্রদায়গত সম্পর্কের মধ্যে থেকেই গিয়েছিল। বর্তমান গ্রন্থে সংকলিত গল্পগুলির মধ্যে সেই অপ্রীতির নানা স্রোত-প্রতিস্রোত, শিরা-উপশিরাকে যেমন খুঁজে পাওয়া যাবে তেমনই এই অন্ধকারের নানা খাদ, পরিখা, ফাটলকে বাংলা ভূমির মানুষ নানা সংকটে, সন্ধিক্ষণে, প্রাত্যহিকে কীভাবে অতিক্রম করেছে কখনও সামূহিকে কখনও-বা ব্যক্তিআয়তনে তারও নানা মুহূর্ত স্পন্দিত হয়ে উঠছে অক্ষর ও শব্দের সমাহারে। এই সময়কালে এই গ্রন্থপ্রকাশ, আমাদের বিশ্বাস, সময় ও ইতিহাসের প্রতি দায়ও পালন করবে।