জেসমিন অবাক হয়ে দেখছে নীল পাঞ্জাবি পরা বিদেশি মানুষটাকে। চোখ দুটোও নীল। এগিয়ে আসছে তার দিকে, বয়স ত্রিশ-বত্রিশ হবে। জেসমিন ঠিক বুঝে উঠতে পারল না কীভাবে মানুষটা এত রাতে তার ঘরে প্রবেশ করল। একবার ভাবল সে চিৎকার করবে। পরের মুহূর্তে সিদ্ধান্ত পালটাল। দেখতে চায় কী করে। মানুষটা যে ঐশ্বরিক ক্ষমতার অধিকারী তাতে কোনো সন্দেহ নেই, তা না হলে এত রাতে তার ঘরে প্রবেশ করতে পারত না। জেসমিনের অনুমানই সত্য হলো। আসলেই অলৌকিক ক্ষমতা আছে মানুষটার। তাকে মুহূর্তের মধ্যে ঢাকা থেকে নিয়ে এলো কক্সবাজারের হাডসন হিলে। কী সুন্দর সমুদ্র, পাহাড় আর প্রকৃতি! দারুণ ভালো লাগল হাডসন হিলকে। বেশি ভালো লাগল নীল চোখের মানুষটাকে, নাম জানা গেছে এর মধ্যে, ডাক্তার হাডসন। সময় যত পার হতে লাগল ততই কাছে আসতে লাগল দুজন, যেন তারা একে অন্যের পরিপূরক। তারপর হঠাৎই একদিন হারিয়ে গেলেন ডাক্তার হাডসন। কিন্তু জেসমিনের গর্ভে রেখে গেলেন নিজের সন্তান। জেসমিন যখন ডাক্তার হাডসনকে খুঁজতে খুঁজতে পাগলপ্রায়, ঘটনাক্রমে পরিচয় হয় ডাক্তার তরফদারের সাথে। ডাক্তার তরফদারও খোঁজ করতে শুরু করলেন ডাক্তার হাডসনের। কিন্তু এ কী শুনছেন তিনি! ডাক্তার হাডসন তো বাংলাদেশে ছিলেন সেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়, তারপর চলে গেছেন ইংল্যান্ডে। আর আসেননি। এতদিনে তার মৃত্যু হয়েছে নিশ্চিত! তাহলে কীভাবে তিনি এতদিন পর আবিভর্‚ত হলেন! আর কীভাবেই বা তার সন্তান ধারণ করল জেসমিন! শেষ পর্যন্ত কি ডাক্তার তরফদার সন্ধান পেয়েছিলেন ডাক্তার হাডসনের? আর কী ঘটেছিল জেসমিন আর তার গর্ভের সন্তানের?
লেখক মোশতাক আহমেদ এর জন্ম ১৯৭৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর, ফরিদপুর জেলায়। পেশায় একজন চাকুরিজীবী হওয়া সত্ত্বেও লেখালেখির প্রতি তাঁর আগ্রহ প্রচুর। এ পর্যন্ত সায়েন্স ফিকশন নিয়েই সবচেয়ে বেশি লিখেছেন। বাংলা সায়েন্স ফিকশন জগতে তার পোক্ত একটি অবস্থান সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়াও মোশতাক আহমেদ এর বই সমূহ ভৌতিক, প্যারাসাইকোলজি, মুক্তিযুদ্ধ, কিশোর ক্ল্যাসিক, ভ্রমণ ইত্যাদি জঁনরাতে বিভক্ত। যেকোনো একটি বিষয়ে সীমাবদ্ধ না থেকে তিনি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে লিখতেই পছন্দ করেন। মোশতাক আহমেদ এর বই সমগ্র সংখ্যায় পঞ্চাশ পেরিয়েছে। তাঁর প্রথম প্রকাশিত বই ছিল ‘জকি’। এটি একটি জীবনধর্মী উপন্যাস। ২০০৫ সালে এটি প্রকাশিত হয়। মোশতাক আহমেদ পড়াশোনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। প্রথমে ফার্মেসি বিভাগে, পরে আইবিএতে। পরবর্তী সময়ে ইংল্যান্ডের লেস্টার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অপরাধবিজ্ঞান থেকে মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করেন। পড়াশোনার খাতিরেই হোক বা কর্মজীবনের তাগিদেই হোক, ব্যক্তিগত জীবনে তিনি অনেক ভ্রমণ করেছেন। সেসব ভ্রমণকাহিনীর আশ্রয়ে তাই ক্রমেই সমৃদ্ধ হয়েছে তাঁর লেখা ভ্রমণকাহিনীগুলোও। তাঁর সৃজনশীল কর্মকাণ্ড শুধু লেখালেখিতেই গণ্ডিবদ্ধ নয়। ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ রাজারবাগের পুলিশ ও পাকিস্তানী হানাদারবাহিনীর মধ্যে একটি যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। সে ঘটনার ওপর ভিত্তি করে মোশতাক আহমেদ ‘মুক্তিযুদ্ধের প্রথম প্রতিরোধ’ নামে একটি তথ্যচিত্র নির্মাণ করেন। এটি ২০১৩ সালের মার্চ মাসে মুক্তি পায়। তাঁর পুরস্কারের ঝুলিতে এ পর্যন্ত রয়েছে ২০১৩ সালের কালি ও কলম সাহিত্য পুরস্কার, ২০১৪ সালের ছোটদের মেলা সাহিত্য পুরস্কার, ২০১৪ সালের কৃষ্ণকলি সাহিত্য পুরস্কার, ২০১৫ সালের সিটি আনন্দ আলো পুরস্কার এবং সর্বশেষ সংযুক্তি হিসেবে সায়েন্স ফিকশন বিষয়ে বিশেষ অবদান রাখার জন্য বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার-২০১৭।