মুখবন্ধ প্রবহমানতা মানুষের চলার পথের অন্যতম একটি অনুষঙ্গ। এটি জীবনের বহুবিস্তারী কল্লোল। বাঙালির এক সময় ঘরকুনোর অপবাদ ছিল। অযুত নিযুত বাঙালি বৃত্তাবদ্ধ গৃহকোণের মানুষটি ছিল বলে পৃথিবীর মানচিত্রের অনেক সুচিত্রিত দৃশ্য, জনপদ, স্থাপনা, সাগর-মহাসাগরের খবর তাদের অজানাই ছিল। গত তিন/চার দশক হলো বাঙালির এই দুর্নামের অবসান ঘটেছে। রেনেসাঁর এই সময়কালে বহু বহু বাঙালি লেখাপড়ার প্রয়োজনে, ব্যবসা, প্রশিক্ষণের প্রয়োজনে বা স্রেফ ভ্রমণের অভিলাষে পিঠে ব্যাক-প্যাক ঝুলিয়ে বেরিয়ে পড়ছে মহাবিশ্বের পথে। ডা. এ. কে. এম. নজরুল ইসলাম আমার ছাত্র। সরকারি পদস্থ কর্মকর্তা থাকার সুবাদে কখনো উচ্চতর লেখাপড়া, কখনো উচ্চতর প্রশিক্ষণ বা সরকারি মিশনে এশিয়া, ইউরোপ, আফ্রিকার এগারোটি দেশে তাকে ভ্রমণ করতে হয়েছে। একটি কথা বলাই যায়, বেশির ভাগ ভ্রমণকারী প্রকৃতি, ভিনমানুষ, ভাষা, সংস্কৃতি, স্থাপনা দেখে আনন্দিত হন মাত্র, সেসব তারা লেখেন না বা লিখতে পারেন না। নজরুল তার সুন্দর কথা বাক্য, সকল তথ্য দিয়ে সেসব লিখেছে। তার লেখা ভ্রমণগদ্য নিয়মিত আমাদের প্রায় আঠারো হাজারের বেশি একটি সামাজিক গ্রুপে প্রকাশ হয়ে আসছে। তার নিজস্ব নানা বলয়েও ভ্রমণগদ্য প্রায়শ দেখা যাচ্ছে। সেগুলি একদিকে যেমন পাঠকের কাছে বিশ্বসভ্যতার অনেক অনেক প্রয়োজনীয় তথ্যের জোগান দিচ্ছে, অন্যদিকে পৃথিবীর সংস্কৃতি আর সমৃদ্ধির রসদ পরিবেশন করে লেখাগুলিকে পাঠকের কাছে আকর্ষণীয় করে তুলেছে। নিজ দেশের দুর্গম, আকর্ষণীয়, ঐতিহাসিক জনপদে ভ্রমণেও ওর আছে নিবিড় আকর্ষণ। সেগুলিও সে সমযত্ন নিয়ে পাঠককে উপহার দিয়ে চলেছে। তার ভ্রমণগদ্য 'ভিন দেশে দিন রাত্রি' গ্রন্থটি ভ্রমণপিপাসুদের ভ্রমণে উৎসাহিত করবে, অনেককে মানস ভ্রমণ করিয়ে আনন্দ দিবে- এই আশাবাদ রাখছি। (ড. রানা চৌধুরী) সাবেক অধ্যাপক (পদার্থবিজ্ঞান) সরকারি কলেজ।