আতিক পিএসসি পরীক্ষা শেষ করে সবেমাত্র ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছে। আজ ক্লাসের প্রথম দিন। আতিক ক্লাসের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছে। সে রাস্তার ডান পাশ ধরে হাঁটছে, নজরটা নিচের দিকে। হঠাৎ এক লোক আতিকের পথ আটকে দাঁড়াল। লোকটি ধবধবে সাদা। তার উপরে গায়ে সাদা রঙের লম্বা পাঞ্জাবি। পাঞ্জাবিতে অনেক ময়লা জমে আছে। মনে হচ্ছে মাস দুয়েক ধরে তিনি পাঞ্জাবি ধোলাই করান না। মাথায় কালো পাগড়ি পেঁচানো। আতিক তাকে সালাম দিয়ে ইতস্তত গলায় বলল, হুজুর পথ আটকালেন কেন? কিছু বলবেন মনে হচ্ছে? হুজুর বললেন, শোনো বেটা, মানুষ টাকার বিনিময়ে আমার কাছ থেকে কথা শোনে, পরামর্শ নেয়, কেউ আবার পানি পড়াও নেয়। আতিক বলল, এগুলো আমাকে কেনই বা বলছেন হুজুর? হুজুর বললেন, বেটা তুমি আমার দিলে দাগ কেটেছো। রাস্তাঘাটে প্রায় সবাই সামনের দিকে নজর দিয়ে হাঁটে। বিভিন্ন দিকে নজরকে নিয়োজিত করে। তুমি নজর নিচু করে হাঁটছো। আমার ধারণা তোমার নজর নিচে রাখার পেছনে মহৎ কোনো নিয়ত রয়েছে। বিষয়টা আমার ভালো লেগেছে। তাই তোমাকে বিনামূল্যে কিছু কথা বলছি। যদি কখনো কারো কাছ থেকে কোনো কারণে ব্যথিত হও, আর যদি অবস্থা এমন তৈরি হয় যে, তুমি তার কাছ থেকে পাওয়া কষ্ট কোনোভাবেই হজম করতে পারছো না তাহলে তুমি যেই কার্য সম্পাদনের কারণে কষ্ট পেয়েছো সেই একই কার্য আবারও সম্পাদনা করো এবং সেই বিষয়ে তুমি যখন আবারো কষ্ট পাবে তখন কষ্টের তীব্রতাটা অনেকটা কমে যাবে। একই কার্যে তুমি আবারো লিপ্ত হলে দেখবে কোনো কষ্টই অনুভব করছো না। সেই মুহূর্তেই তুমি অনেক কিছু শিখবে এবং তোমার ভেতরে নতুন চিন্তার উদ্রেক হবে। এমনকি তুমি সব মুছে নতুন পথে ধাবিত হতে পারবে। এই বলে হুজুর চলে গেলেন। আতিক একটু বিব্রত হলো, ভাবল আমাকে এই কথা বলার মানে কী? আতিক হুজুরের কথায় পাত্তা দিলো না। পাগল ভেবে উড়িয়ে দিয়েছে। ক্যাম্পাসের দিকে হাঁটা শুরু করল।