"ভূবনডাঙ্গা বইটিতে বেশির ভাগ গল্প গুলোতে ফেলে আসা নব্বই দশকের আদলে গল্পগুলোকে লিপিবদ্ধকরন করেছে লেখক তার নিজস্ব সতন্ত্র ভঙ্গিমায়।বস্তুতপক্ষে নব্বই দশক টাকে স্বর্ণালী সময়ের সাথে তুলনা করা হয়।মূলত যাদের জন্ম নব্বই এর প্রারম্ভিকতায় বইটি পড়ার পর নব্বই দশকের জ্বলজ্বল প্রতিচ্ছবি তাদের চোখে ভেসে উঠবে।যাদের শৈশব ও কৈশোর কেটেছে মফস্বলে সেই সকল পাঠকগন গল্প গুলো পড়ে অতীতের পুরাতন সুখের স্মৃতিতে রোমন্থন করবে!মাখামাখি হয়ে আচ্ছন্ন হয়ে থাকবে অন্তত সল্পকালিন সময় ধরে গল্পের মূর্চ্ছনায়! "যেই সময় গুলো ছিলো-হেমন্তের উদাসীন,প্রোঢ় এবং বিষন্ন দুপুরে শীতল পাটিতে কাত হয়ে মিনমিনিয়ে ঘুমের ভান করে থাকা,ম্যাদাটে দুপুরের তাপদ্রাহ না গড়াতেই ধানের মৌসুম শেষে নারা ওয়ালা ক্ষেত এ ক্ষেত এ মেয়ে ছেলে ভেদাভেদ টুকু ভুলে গোল্লাছুট, সাতছাঁড়া,টেনিস বল দিয়ে বোমবাস্টিং,কুতকুত খেলার মতো অসংখ্য খেলায় মেতে থাকা।আবার প্রবল বৃষ্টি বর্ষায় কাঁদা মাখা হাটু পানিতে ফুটবল খেলে ক্লান্ত হয়ে ঘরে ফিরে মায়ের হাতে মার খাওয়া।প্রবল বর্ষায় অথৈজলে পুকুর পাড়ের উঁচু উঁচু জাম গাছের ডাল হতে ডিগবাজি খেয়ে পানিতে ঝাপিয়ে পড়া,পুকুরের জলে মরিচ মরিচ খেলার মতো দূর্দান্ত দুরন্তপনা ছুঁয়ে থাকা সব কান্ডকৃত্বি। গুলো।এছাড়া ও এক টাকা, এক টাকা করে জমিয়ে দলবেধে চার টাকা দিয়ে ঘন্টা প্রতি ছোট ছোট লাল নীল রঙ্গের সাইকেল ভাড়া করে এদিক সেদিক ছোটাছোটি আর কোন ক্রমে নির্ধারিত ঘন্টার তুলনায় দশ কি পনেরো মিনিট বেশি হয়ে গেলে ভয়ে ভয়ে চোরের মতো সেলিম কাকার দোকানে সাইকেল জমা দিয়ে আসা!বাগান হতে কুড়িয়ে কখনো মায়ের পান খাওয়ার সুপারি লুকিয়ে জ্যাবে ভরে তৃষ্ণা মিটাতে একহালি সুপারি দিয়ে আনিস ভাই এর কাঠের আইসক্রিম এর পেডি হতে লাল হলুদ রঙ্গের চেগারিং এর আইসক্রিম খেয়ে জিহ্বা হলুদ করার মতো তুলতুলে সব অনুভূতি গুলো। এছাড়া স্কুল হতে বাড়ি ফেরার পথিমধ্যে আমগাছে ঢিল ছোড়া।অন্যের গাছের পেঁপে চুরি করে তেতুল-লবন মরিচ দিয়ে মেখে অমৃত স্বাদ অাস্বাদন করা।আবার কখনো টোটার আগায় লাইলনের সূতা বেঁধে বড়শি ফেলে কই, পুটি,বাইম,টাকি মাছ ধরার মতো বিপুল আনন্দে উদ্বেলিত হওয়ার মতো ঘটনা গুলো।আর সব শেষ সন্ধ্যা নামার পরেই হাত পা ধুয়ে হারিকেনের আলোয় পড়তে বসে ঘুম কাতর চোখে ঢলে পড়ে মায়ের হাতে মার খাওয়ার মতো অজস্র স্মৃতি গুচ্ছ! এই বইতে শক্তিশালী হয়ে ফুটে উঠেছে কিছু চরিত্র সমূহ।যেমন দিব্য! যার ডাক নাম দেবু। এমন কিশোর এর নিছক সরলতা আর প্রকৃতি প্রেম দেখে বিপুল বিস্ময় ভরে মা নন্দিতা সেন এর মুগ্ধ হয়ে যাওয়া! "আনোয়ার দপ্তরি" যিনি কিনা একটা সময় পুরো স্কুল জুড়ে আধিপত্য বিস্তার আর গোয়েন্দা গোয়েন্দা ভাব ধরে দাপুটে চলন ভঙ্গি নিয়ে চলাফেরা করতো।যার চোখ মুখ দিয়ে সবসময় অগ্নি ফুলকা ঝরতো।অথচ কালের প্রবাহে একটা সময় জরাজীর্ণতা আর প্রবল স্বাস কষ্টের গ্রাসের কবলে পড়ে মেঘ লুপ্ত চাঁদের মতো ম্লান হয়ে যাওয়া মুখখানি তার বড়বেশি অসহায় দেখায়৷ আহা জীবন!অথচ তার ভিতরটাতে ও যে সুন্দর সু কোমল স্নেহ আর মমতাবোধ এ টুবুটুবু ছিলো ক জন ই বা জানতো তা? বন্ধুত্ব সুন্দর! পরম সৌন্দর্য! "কিশোর নিয়ন ও দীপ্তর একে অন্যের প্রতি অকৃতিম একনিষ্ঠ বন্ধুত্বতা!যেখানে ছিলোনা কোন সার্থের ছিটেফোঁটা টুকু ও।অথচ একটা সময় নিয়তির নির্মম পরিহাসে প্রিয় বন্ধু দীপ্তর অকাল প্রয়ানে নিয়নের ক্ষুদ্র বুকটিতে বন্ধু দীপ্তর জন্য করুন আত্ননাদ ও পরম বন্ধু হারানোর শোক আর প্রিয় বন্ধুর শূন্যতা ও খাঁ খাঁ নিরুদিষ্টতা পাঠকের হৃদয়ে একচোট বেদনা আর অশ্রুসিক্ত করে তুলবে মুহূর্তেই পাঠককে। এমন সব প্রেম,প্রকৃতি,খন্ড জীবন,সুখ,হতাশা-অবসাদের সমাহারে বইটির প্রত্যেকটি গল্পকে অতি স্ব যত্নে সু নিপুন ভাবে বুনেছে লেখক।
রিগান মজুমদার।মফস্বলে শৈশব-কৈশোর কেটেছে তার। লক্ষিপুর জেলার অধীনস্থ রামগতি থানার চরসীতা গ্রামে নব্বই দশকের প্রারম্ভিকতায় জন্ম তার।পিতা সুমঙ্গল মজুমদার।একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা।আইনজীবি সহকারী পেশার সাথে সম্পৃক্ত তিনি।রিগান মজুমদারের স্কুল-কলেজ জীবন কেটেছে নিজ গ্রামে ও জেলাকেন্দ্রীক লক্ষীপুর সদরে। লক্ষীপুর সরকারি কলেজ হতে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করেন।এবং পরবর্তীতে তিনি ইংরেজি সাহিত্যের উপর স্নাতকোত্তর শেষ করেন ঢাকার একটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় হতে।ছোট বেলায় নিজ বাড়িতে,স্থানীয় মামা,কাকা,দাদু,মা দের প্রানবন্ত অংশগ্রহণে গ্রামের মন্দিরে,মন্দিরে নানাবিধ সামাজিক অনুষ্ঠানে মঞ্চ নাটকের রিহার্সেল গুলো নিজেদের বাড়িতে দেখে দেখে বিপুল আবেগে একসময় আষ্টেপৃষ্ঠে তিনি শিল্প সাহিত্যের জাগযজ্ঞ তে ডুব মারেন।এর পর ই শিল্পমনা সংস্কৃতির পরশ জড়িয়ে যায় তার ক্ষুদ্র বুকটিতে। পরবর্তীতে তিনি দেশের বেশ কয়েক জন সনামধন্য পরিচালকের হাত ধরে সহকারী পরিচালনায় সম্পৃক্ত হন।এরপর তিনি বিজ্ঞাপন নির্মান এর একটি প্রোডাকশন হাউজ কারখানা প্রোডাকশন এর সাথে কর্মে ব্যাপৃত ছিলেন।বর্তমানে তিনি লেখালেখি পেশায় নিমজ্জিত রয়েছেন।