কথায় আছে, সময়ের মধ্যে বাঁচতে বাঁচতে সেই সময়কে বোঝা কঠিন। কিন্তু কাজী নজরুল ইসলাম এমনই এক উত্তাল সময়ের সন্তান, যিনি নিজ সময়কে ছাড়িয়ে নতুন এক যুগের সূচনা করেছিলেন । তাই তো তিনি "যুগস্রষ্টা"। এক জীবনে যত রকমের বৈচিত্রময়তার সমারোহ ঘটা সম্ভব-এর সবটুরই যেন সমাবেশ ঘটেছিলো নজরুলের জীবনে। শৈশবে ঘর ছাড়া হওয়া, কৈশোরে যুদ্ধে যাওয়া, বৃটিশের বিরুদ্ধে কলম চালিয়ে রাজ বন্দীত্ব, তারপর সাহিত্যে প্রচলিত ধ্যান ধারণাকে দুমড়ে মুচড়ে নতুন এক ধারার জন্ম জন্ম দেওয়া, এমনকী সংগীতে নতুন এক দিগন্তের সূচনা-সবই করেছেন তিনি। সেই উত্তাল সময়ে নজরুলকে ঘিরে আরও অনেক নক্ষত্র আবর্তিত হয়েছিলো। এদের মধ্যেই অন্যতম ছিলেন খান মুহাম্মদ মঈনুদ্দীন। তিনি ছিলেন "নজরুল সখা"। নজরুলের অত্যন্ত স্নেহভাজন৷ তার জেলজুলুমের দুর্বিষহ দিনের সাথী। বিয়ের অন্যতম সাক্ষী। " যুগস্রষ্টা নজরুল" বইটি কাজী নজরুল ইসলামের জীবনীগ্রন্থ নয়। লেখক সেটা দাবিও করেননি। কিন্তু তিনি ছিলেন নজরুলের জীবনের বহু ঘটনার, উত্থান পতনের চাক্ষুষ সাক্ষী। ঘনিষ্ট সহচর। সুখ-দুঃখের সাথী। তাই এই বইটিতে সেই স্মৃতিচারণগুলোই লিপিবদ্ধ করেছেন। তিনি সেসব ঘটনাবলীই বইটিতে স্থান দিয়েছেন, যে গুলোর সাথে লেখক সরাসরি যুক্ত ছিলেন। তবুও আমরা বলবো, এই বইটি একটি ঐতিহাসিক দলিল। যার মধ্য দিয়ে উঠে এসেছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য, যে গুলো সময়ের খরস্রোতে হারিয়ে যেতে পারতো। এই বইটি নতুন এক নজরুলকে আবিষ্কার করতে ঐতিহাসিক দলিল হিসেবে রসদ যোগাবে আমরা সেই আশাবাদ ব্যক্ত করছি।
খান মুহাম্মদ মঈনুদ্দীন (৩০ অক্টোবর ১৯০১ – ১৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৮১) ছিলেন বাংলাদেশের খ্যাতিমান সাহিত্যিক। তিনি ১৯৫০ ও ৬০-এর দশকে শিশুতোষ সাহিত্য রচনা করে খ্যাতি অর্জন করেন। তাঁর লেখা ‘কানা বগির ছা’ ছড়াটি বাংলাদেশের শিশুদের নিকট অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং যুগস্রষ্টা নজরুল নামক জীবনীর জন্য তিনি বহুলভাবে সমাদৃত। তার লিখিত বইয়ের সংখ্যা ২০টির অধিক। এছাড়াও তিনি আল-হামরা লাইব্রেরির প্রতিষ্ঠাতা, যা বর্তমানে আল-হামরা প্রকাশনী নামে পরিচিত। কর্মজীবনে তিনি কোলকাতা কর্পোরেশন স্কুলে শিক্ষকতা করেছেন। মঈনুদ্দীন ১৯৬০ সালে শিশু সাহিত্যে বাংলা একাডেমী পুরস্কার লাভ করেন। যুগস্রষ্টা নজরুল বইটির জন্য তিনি ১৯৬০ সালে ইউনেস্কো পুরস্কার লাভ করেন। বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর ১৯৭৮ সালে তিনি সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য একুশে পদক লাভ করেন।