আধুনিক বিশ্বে তুলনামূলক ধর্ম একটি জনপ্রিয় বিষয়। কখন কীভাবে এ অভিজ্ঞানের উৎপত্তি হয় তার ইতিহাস বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, ইসলামের অভ্যুদয়ের সূচনালগ্ন থেকেই এ অভিজ্ঞানের সূত্রপাত ঘটে। সে সময় এটি ইলমুল কালাম ও ইলমুল মুনাযারা হিসেবে আলোচিত হতে থাকে। পরবর্তীকালে এটি ইলমুল আদইয়ান নামে এক স্বতন্ত্র অভিজ্ঞান হিসেবে আখ্যায়িত হয়। হিজরী তৃতীয় শতক থেকে শুরু করে দ্বাদশ শতাব্দী পর্যন্ত মুসলিম পণ্ডিতগণ এ শাস্ত্রের বিকাশ সধানে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। এরপর বিদ্যাচর্চায় মুসলিম শাসকদের উদাসীনতা, মাযহাবি গোড়াঁমি ও ক্রুসেড যুদ্ধের কারণে এ অভিজ্ঞানের চর্চা ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ে এবং প্রাচ্যবিদদের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। তাঁরা এ বিদ্যাকে তাদের মিশনারি তৎপরতার অংশ হিসেবে গ্রহণ করে নানাভাবে এর উৎকর্ষ সাধনে ব্রতী হন। তাঁরা এ শাস্ত্রের প্রকৃতি, স্বরূপ ও ধরনকে নিজেদের সুবিধা অনুযায়ী পরিবর্তন করে স্বতন্ত্র পরিভাষায় অন্তর্ভুক্ত করেন। এরপর হিজরী চতুর্দশ শতাব্দীতে এটি পুনরায় মুসলিম অঙ্গনে ফিরে আসে। মুসলিম পণ্ডিতগণ পূর্বের ন্যায় এ বিদ্যাচর্চায় আত্মনিয়োগ করেন। তাঁরা অতীতের অভিজ্ঞাতাকে কাজে লাগিয়ে ভবিষ্যতের কর্মপন্থা হিসেবে এ বিদ্যার বিকাশ সাধনকে অপিরিহার্য মনে করেন। সত্যধর্ম হিসেবে ইসলামকে বিশ্ববাসীর সামনে উপস্থাপনের জন্য অন্যান্য ধর্মের সঙ্গে ইসলামের তুলনা প্রসঙ্গে তাঁরা নতুন আঙ্গিকে এ বিদ্যার বিজ্ঞানম্মত নীতিমালা উদ্ভাবন করেন। এ বিষয়ে তাঁদের নিরন্তর গবেষণা ও পরিশ্রমে বিশ্বে এ শাস্ত্রের প্রকৃত স্বরূপ সুস্পষ্টভাবে প্রকাশিত হয় এবং ইসলামের সর্বজনীন সত্যরূপ বিকশিত হয় । সুতরাং মুসলিম পণ্ডিতগণের নিরলস প্রচেষ্টার মাধ্যমে আধুনিক বিশ্বে তুলনামূলক ধর্ম একটি জনপ্রিয় বিষয় হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। বক্ষ্যমাণ গ্রন্থে ধর্মের পরিচয়, প্রকৃতি, প্রয়োজনীয়তা, এর উৎপত্তি বিষয়ক মতবাদ পর্যালোচনা এবং তুলনামূলক ধর্মের পরিচয়, উৎপত্তি ও বিকাশ সম্পর্কে আলোচিত হয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে আসমানি ধর্ম, প্রাচীন ধর্ম ও আঞ্চলিক ধর্মসমূহের পরিচিতি এবং তুলনামূলক পর্যালোচনা উপস্থাপিত হয়েছে। এছাড়া আসমানি ধর্মের বিশ্বাসসমূহের তুলনামূলক পর্যালোচনা এবং এ ধর্মসমূহের সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য তুলে ধারা হয়েছে। অপরদিকে তুলনামূলক ধর্মচর্চায় প্রাচীন ও আধুনিক মুসলিম পণ্ডিতগণের সংক্ষিপ্ত জীবনেতিহাসসহ এ শাস্ত্রে তাঁদের অবদান তুলে ধরা হয়েছে। সুতরাং বাংলা ভাষায় বিভিন্ন ধর্মের তুলনামূলক বিশ্লেষণে গ্রন্থটি অসাধারণ ও অনবদ্য।
ড. মোহাম্মদ বেলাল হোসেন বগুড়া জেলার কাহালু থানাধীন কচুয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। নিজ গ্রামে প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করার পর তিনি মাদরাসায় ভর্তি হন। তিনি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে দাখিল থেকে কামিল পর্যন্ত প্রতিটি পরীক্ষায় প্রথম বিভাগসহ মেধাতালিকায় অনন্য কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন। তিনি ১৯৯০ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগে বি.এ. অনার্স পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান লাভ করেন। ১৯৯১ সালের এম.এ. পরীক্ষায়ও রেকর্ড পরিমাণ নম্বর পেয়ে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হন। কলা অনুষদ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে সর্বোচ্চ নম্বর প্রাপ্তির স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি দু'টি স্বর্ণপদক ও দু'টি বিশ্ববিদ্যালয় পুরস্কারে ভূষিত হন। এছাড়াও তিনি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন বৃত্তি লাভ করেন। ড. বেলাল ১৯৯৬ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগে লেকচারার হিসেবে যোগদান করেন। তিনি বর্তমানে এ বিভাগে প্রফেসর হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। তিনি ভারতের কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগে কিছুদিন ভিজিটিং প্রফেসরের দায়িত্বও পালন করেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৬ বছর শিক্ষকতার জীবনে পাঠদান ও গবেষণার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সেমিনারেও যোগদান করেন। তিনি মিসর, সৌদি আরব, লেবানন ও ভারতসহ অনেক দেশে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সেমিনারে অংশগ্রহণ করেন। ইতোমধ্যে তাঁর প্রায় অর্ধ শতাধিক গবেষণামূলক প্রবন্ধ দেশি-বিদেশি জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ে তাঁর প্রকাশিত ও প্রকাশনাধীন গবেষণামূলক গ্রন্থের সংখ্যা ৩১টি। তন্মধ্যে আরবি ভাষায় লিখিত গ্রন্থের সংখ্যা ৭টি। ইতোমধ্যে আরবি ভাষায় মিসরের কায়রো ও লেবাননের বৈরুত থেকে তাঁর ৩টি গবেষণাধর্মী গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। তিনি তাফসীর বিষয়ে অভিসন্দর্ভ রচনা করে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি মিসরের বিশ্ববিখ্যাত আল-আযহার বিশ্ববিদ্যালয়ে উসূলুদ দীন ফ্যাকাল্টিতে তুলনামূলক ধর্ম বিষয়ে পোস্ট ডক্টরাল গবেষণা সম্পন্ন করেন। তাঁর গবেষণার শিরোনাম ছিল ‘ইলমু মুকারানাতিল আদইয়ান: নাশআতুহু ওয়া তাতাওয়ারুহু ওয়া মুসাহামাতু ‘উলামায়িল মুসলিমীন ফীহি। তিনি অধ্যাপনার পাশাপাশি উল্লেখ্যযোগ্য সংখ্যক মাস্টার্স থিসিস, এমফিল ও পিএইচডি গবেষণাকর্মের তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন এবং করছেন।